DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

রিমান্ড শুনানি: মিডিয়াকে দুষলেন মায়ার জামাতাসাঈদ তারেক, নীরব মেজর আরিফ

image_91543_0নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সাত খুনের মামলায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য র‌্যাবের চাকরিচ্যুত দুই সেনা কর্মকর্তার পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত।

শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে মামলার শুনানি অনুষ্ঠিত হয়।

এসময় পুলিশ দুই কর্মকর্তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিন করে রিমান্ডের আবেদন করলে পাঁচ দিন করে মঞ্জুর করেন আদালত। প্রায় ৪০ মিনিট ধরে এ রিমান্ড শুনানি চলে।

শুনানিতে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ নিজেই নিজের সাফাই গান। তাদের পক্ষে কোনো আইনজীবীও ছিল না।

মেজর আরিফ কোনো ধরনের বক্তব্য দেননি। তবে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়ার জামাই সাঈদ শুনানির সময় নিজেকে নির্দোষ দাবি করে বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, ‘আমাকে ১০ দিন না আরো বেশি দিন রিমান্ড দেয়া হোক, কোনো আপত্তি নেই আমার। আমরাও চাই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হোক।’

এসময় গণমাধ্যমের ওপর ক্ষোভ প্রকাশ করে মায়ার জামাই বলেন, ‘নিহত নজরুলের শ্বশুরের কথার ওপর ভিত্তি করে মিডিয়া ঢালাওভাবে আমাদের অভিযুক্ত ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশ করছে, যা সঠিক ও সত্য নয়।’
 
তবে আদালতে দুই র‌্যাব কর্মকর্তা নিজেদের নির্দোষ দাবি করলেও রাষ্ট্রপক্ষে ১০ দিনের রিমান্ডের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরেন আইনজীবীরা। শুনানি শেষে বিচারক দুই কর্মকর্তাকে ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন আইনজীবীরা। তারা বিচারিক কক্ষের ভেতরেই তুমুল হৈ চৈ শুরু করেন এবং বিচারকের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে থাকেন।

তারা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘বিচারক কোন মহল ও রাষ্ট্র দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ৫ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন? যেখানে অভিযুক্তদের পক্ষে কোনো সুনির্দিষ্ট ও গ্রহণযোগ্য যুক্তি তুলে ধরা হয়নি, সেখানে রিমান্ড ৫ দিন দেয়া অযৌক্তিক।’ তারা বলেন, ‘এর পেছনে অন্য কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। সর্ষের মধ্যে ভূত লুকিয়ে আছে।’

র‌্যাবের দুই কর্মকর্তার রিমান্ড শুনানি উপলক্ষ্যে এর আগে সকাল থেকেই নারায়ণগঞ্জ আদালত পাড়ায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়। দুপুর ২টায় কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে র‌্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ, মেজর আরিফ হোসেন ও মামলার প্রধান আসামি নূর হোসেনের দোকানের কর্মচারী কামাল হোসেনকে আদালত পাড়ায় আনা হয়। এরপর পৃথকভাবে রিমান্ড আবেদন করে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট চাঁদনী রূপমের আদালতে হাজির করা হয়।

এর মধ্যে দুই কর্মকর্তার ১০দিন করে ও কামালের সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন সাত খুন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নারায়ণগঞ্জ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুনুর রশিদ মণ্ডল। প্রায় ৪০ মিনিট রিমান্ড শুনানি চলে। শেষে বিচারক দুই কর্মকর্তার ৫ দিন করে ও কামালকে ৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
 
এসপির সংবাদ সম্মেলন: রিমান্ড শুনানি শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন বলেন, সেভের মার্ডারের ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিষয়। যতটা না দৃশ্যমান অগ্রগতি হয়েছে,, তার চেয়ে অদৃশ্যমান অনেক অগ্রগতি হচ্ছে। এটা নিয়ে তাড়াহুড়ো করার কোনো সুযোগ নেই। পুলিশ তার অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্যই তদন্ত করছে। ইতোমধ্যে হাইকোর্টের নির্দেশে দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদের রিমান্ডেও নেয়া হয়েছে।

র‌্যাবের চাকরিচ্যুত অপর কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার এমএম রানাকে গ্রেপ্তারের ব্যাপারে প্রশ্ন করলেও এসপি ড. মহিদ উদ্দিন বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, আসামিদের গ্রেপ্তারে আইনের প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই অভিযান চলছে।
 
এর আগে ভোর ৪টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশের একটি টিম ঢাকা সেনানিবাসে ঢুকে ক্যান্টনমেন্ট থানা পুলিশ ও মিলিটারি পুলিশের সহায়তায় লে. কর্নেল তারেক সাঈদ মাহমুদ ও মেজর আরিফ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। তবে লে. কমান্ডার এমএম রানাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

পরে তাদের নারায়ণগঞ্জের মাসদাইরে পুলিশ লাইনে আনা হয়। তাদের তিনজনকে হত্যা মামলায় ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

উল্লেখ্য, গত ২৭ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থেকে একসঙ্গে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের ৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র-২ নজরুল ইসলাম, তার বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, নজরুলের গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম, আইনজীবী চন্দন কুমার সরকার এবং তার ব্যক্তিগত গাড়িচালক ইব্রাহিমকে অপহরণ করা হয়। পরদিন ২৮ এপ্রিল নারায়ণগঞ্জ থানায় মামলা করেন নজরুল ইসলামের স্ত্রী। কাউন্সিলর নূর হোসেনকে প্রধান করে মামলায় আসামি করা হয় ১২ জনকে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!