DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

ফিরে দেখাঃমোদির অতীতের সাদা ও কালো

image_91411_0দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বর মাসে ভারত পাকিস্তান সীমান্তে যুদ্ধের পর (যে যুদ্ধের মধ্যে দিয়ে পাকিস্তান বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ওপর থেকে বিশ্বের দৃষ্টি অন্যদিকে ফেরাতে চেয়েছিল) নরেন্দ্র মোদি চরমপন্থী সাম্প্রদায়িক সংগঠন আরএসএস—এ আনুষ্ঠানিকভাবে যোগদান করেন।
 
১৯৭৫ সালে তৎকালীন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধি ভারতে জরুরী অবস্থা জারি করেন এবং প্রমাণিত ও সম্ভাব্য রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার পরিকল্পনা হিসেবে তাদের জেলে প্রেরণ করতে শুরু করেন বলে জানা যায়। আজকের হবু প্রধানমন্ত্রী মোদি তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে চলে যান। শোনা যায় দিল্লীর গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক, অরাজনৈতিক জনসমাবেশে তিনি সরকারবিরোধী বুকলেট, লিফলেট বিতরণ করতেন।
 
এরপর নরেন্দ্র মোদী ব্রিটিশবিরোধী ভারত ছাড় আন্দোলনের নেতা, বিপ্লবী জয়প্রকাশ নারায়নের মত রাজনীতিকের সান্নিধ্যে আসেন। তার ভাবশিষ্য হিসেবে ইন্দিরাপতনের সেনাদের একজন হিসেবে ভূমিকা পালন করেন।
 
১৯৮৫ সালে তার সংগঠন আরএসএসএর  দেয়া দায়িত্ব অনুযায়ী বিজেপিতে যোগ দেন মোদি। বিজেপি নেতা মুরলি মনোহর যোশীর একতা যাত্রা সফলভাবে আয়োজন করার পর মোদি মূলত আলোচনায় আসতে থাকেন। ১৯৯৫ সালের নভেম্বরে তিনি বিজেপির জাতীয় সচিব নির্বাচিত হন। একইসঙ্গে হরিয়ানা ও হিমাচল প্রদেশে পার্টির প্রভাব বাড়ানোর জন্যে তাকে পাঠানো হয়।
 
মোদির সাফল্যের মূলমন্ত্র থেকে আমরা জানি, পার্টির নির্দেশের প্রতি তার আনুগত্যের কথা। কিভাবে তিনি ধাপে ধাপে পার্টির নির্দেশ মানার বিপরীতে আসতে পারে এমন সব বাধা নিশ্চিহ্ন করেন, তার কথাও জানতে পারি তার বিভিন্ন ভাষ্য থেকে। সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় রেখে ১৯৯৮ সালে নরেন্দ্র মোদি বিজেপির সাংগঠনিক মহাসচিবের পদ অর্জন করেন।
 
এরপর সময় বয়ে চললো, মোদিও এগোতে থাকলেন। ২০০১ সালের ৭ অক্টোবর তিনি গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রীর পদ পেলেন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখার জন্যে তার নিজস্ব কিছু কর্মপন্থা ছিল। উদ্যোক্তাদের ব্যাপক স্বাধীনতা ও সুবিধা প্রদানের মধ্য দিয়ে গুজরাটের কর্মসংস্থান জগতে একরকম বিপ্লব এনে দিলেন মোদি। এরপরই আসে সেই সময়, যার জন্যে মোদির মুখটা চিরকালের জন্যে নিচদের তালিকায় স্থান পেয়ে বসলো একটি বৃহৎ অংশের মনে।
 
২০০২ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি গুজরাটের গোধরা অতিক্রম করার সময় হিন্দু তীর্থযাত্রীতে পূর্ণ একটি ট্রেনে আগুন লেগে গেল। ৬০ জন মারা গেল সে অগ্নিকাণ্ডে। গুজব রটে গেল, এটা মুসলমানদের কাজ। এরপরই শুরু হলো কোন বিচার প্রমাণ আইন আদালত ছাড়াই মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের নিধনযজ্ঞ। মোদি প্রশাসন গুজরাটে কার্ফিউ জারি করলো। নির্দেশ এলো দেখামাত্র গুলি করার। আর মুসলিমবিরোধী সংগঠনগুলোর ওপর প্রণোদনা চলল। চলল ব্যাপক মুসলিম নিধন। ২ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করা হল ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়ার কারণে। মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ আছে যে মোদি প্রশাসন মুসলিম বিরোধী প্রণোদনার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন। ২০১০ সালে সংশ্লিষ্ট আদালত দাঙ্গায় মোদির সংশ্লিষ্টতা ছিল না এমন রায় দিয়ে বসলে আবারও বেদনাহত হলো সমতাকামী ভারতীয়দের ঐ বৃহৎ অংশ।
 
যাহোক, সাম্প্রদায়িকতা, ক্ষেত্রবিশেষে ভূমিদস্যুতার অভিযোগ থাকলেও মোদি তার বিচক্ষণ সময়োপযোগী অসংখ্য সিদ্ধান্ত আর উদ্যোগের মধ্য দিয়ে গুজরাটের চোখে পড়ার মতো উন্নয়ন সাধন করেন।
 
মুসলমানদের মধ্যেও সময়ের ফেরে তার জনপ্রিয়তা আবার পুনরুদ্ধৃত হয়েছে বলে মনে করা হয়। কেননা তার শাসনামলে গুজরাটের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষিতের হার বেড়ে দাঁড়ায় ৭৩.৫ শতাংশে, যেখানে সারা ভারতে সে হার একই সময়ে ৫৯.১ শতাংশ। এছাড়া গুজরাট প্রশাসনেও মুসলমানদের উপস্থিতি অন্য অনেক রাজ্যের চেয়ে ছিল বেশি। প্রায় ৫.৬ শতাংশ। যেখানে পশ্চিমবঙ্গে মুসলমানদের তুলনামূলক ব্যাপক আধিক্য থাকা সত্ত্বেও প্রশাসনে তাদের উপস্থিতি ছিল ২.১ শতাংশ।
 
এছাড়া ২০১০ সাল নাগাদ ভারতের গড় প্রবৃদ্ধির হার গুজরাটেই ছিল সবচেয়ে বেশি। ১৬.৬ শতাংশ। যেখানে পুরো ভারতের গড় প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৭ শতাংশ। আর এটাই ভারতের একটা ছোট মডেল হিসেবে সাধারণ নাগরিকদের মনে গুজরাট ও মোদির ইমেজকে এগিয়ে দিয়েছিল। আর অন্যান্য রাজ্যের উন্নয়নের গতির সঙ্গে গুজরাটের গতিময়তার পার্থক্যও গড়ে দিয়েছিল। যার ফলাফল হিসেবে নরেন্দ্র মোদির জন্য এলো আজকের সর্বভারতীয় বিজয়।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!