DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

দুই রহমান পরিবারের বাড়ীর সাত-কাহন

House-BG-220101113201900দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ প্রতিবেদনঃ  বাড়ি’ বরাদ্দ ও বরাদ্দ বাতিল নিয়ে রাজনীতি করা বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্য নতুন নয়। একদল ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় বাড়ির বরাদ্দ নেন, আরেক দল ক্ষমতায় এসে সেই বরাদ্দ বাতিল করে দেন। গত দেড় দশকে এটাই বাংলাদেশের ‘বাড়ি’ রাজনীতির প্রকৃত চিত্র। এর পরেও থেমে নেই নতুন করে বাড়ি বরাদ্দ করার নিয়ম।

‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯’ এর অধীনে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানাকে গুলশানে একটি বাড়ি দিচ্ছে বর্তমান সরকার। বঙ্গবন্ধু কন্যার স্থায়ী ঠিকানা থাকার বিধান আছে, উল্লেখ করে সরকার তাকে বাড়িটি দিতে চাইছে। প্রতীকী মূল্য এক হাজার এক টাকায় দেড় বিঘা জমির এই বাড়িটি শেখ রেহেনাকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও তিনি তা নিতে চাইছেন না। বাংলাদেশের রাজনীতির চরিত্র সম্পর্কে ধারণা থাকায় ও অতীতের বিব্রতকর অভিজ্ঞতার কারণে শেখ রেহানা তার নামে বরাদ্দকৃত বাড়ি নিতে চাচ্ছেন না বলেই অভিমত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের।

বাংলাদেশের রাজনীতির সাথে ঘনিষ্ট সম্পর্ক রয়েছে এমন ব্যক্তিদের মতে, বাংলাদেশের রাজনীতিতে শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমানের পরিবারের সদস্যদের নামে বাড়ি বরাদ্দ ও বাতিল ক্ষমতা দখলের রাজনীতির সাথে সরাসরি যুক্ত। এক দল বরাদ্দ করে, আরেক দল বরাদ্দ বাতিল করে, এটাই যেন নিয়তি। আর এই বিষয়টি খুব ভাল করেই জানেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানা।

এর আগেও একবার বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ রেহানার নামে বাড়ি বরাদ্দ করেছিল সরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতার শেষ দিকে মন্ত্রী পরিষদ গণভবন (প্রধানমন্ত্রীর অফিস) ১ টাকা প্রতিকী মূল্যে শেখ হাসিনার নামে হস্তান্তর করে। একই সময় ধানমন্ডির ৬ নম্বর সড়কে একটি বাড়ি শেখ রেহানার নামে বরাদ্দ করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগের ক্ষমতা শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমান গণভবন বরাদ্দ সংক্রান্ত ওই সিদ্ধান্তটি বাতিল করে দেন। আর ২০০১ সালে নির্বাচনে জয়লাভ করে ক্ষমতায় বিএনপি নেতৃত্বাধীন চার দলীয় জোট। ক্ষমতায় আরোহণ করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন সরকার শেখ রেহানার নামে ধানমন্ডির বাড়িটির বরাদ্দ বাতিল করে দেয়। সেখানে প্রতিষ্ঠা করে ধানমন্ডি থানা।

২০০৮ সালের নির্বাচনে জয় লাভ করে আবারো ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ। ক্ষমতায় এসে দলটি ‘জাতির পিতার পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তা আইন-২০০৯’ তৈরি করে। একই সাথে ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভায় খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের এ বাড়িটির ইজারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত হয়। অবশ্য, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর খালেদা জিয়াকে বাড়িটি থেকে সরিয়ে দেওয়ার উদ্যোগ শুরু হয়। কিন্তু ২০০১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট সরকার ক্ষমতায় আসায় প্রক্রিয়াটি বন্ধ হয়ে যায়।

আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসার পর গত বছর ৮ এপ্রিল মন্ত্রিসভা খালেদা জিয়ার সেনানিবাসের এ বাড়িটির ইজারা বাতিল করার সিদ্ধান্ত নেয়। এর জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের এ সিদ্ধান্ত ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডকে জানিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের সিদ্ধান্ত জানার পর আইনগত প্রক্রিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে খালেদা জিয়াকে বাড়ি ছাড়তে সামরিক ভূ-সম্পত্তি প্রশাসক ২০০৯ সালের ২০শে এপ্রিল নোটিশ দেন। অনেকেই বলেন, শেখ রেহানার নামে বাড়ির বরাদ্দ বাতিল করার কারণে খালেদাকে বাড়ি ছাড়া করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বর্তমানে শেখ মুজিবুর রহমানের কন্যা শেখ রেহানার নামে গুলশানের ৮৪ নম্বর সড়কের এনইএল (২) ১০ নম্বরের বাড়িটি বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে আবারো সেই বাড়িকেন্দ্রিক রাজনীতি নিয়ে সরব হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন।

বাংলাদেশের রাজনীতিতে সবচেয়ে প্রভাবশালী এই দুই পরিবারের ‘বাড়ি’ নিয়ে রাজনীতিকে রাজনীতি বিশেষজ্ঞরা দেখছেন, দুই পরিবারের নামে বাড়ী বরাদ্দ আর ক্ষমতাবদলে বাড়ী বদলের উপাখ্যান হিসেবে। আর ক্ষমতা বদলের সাথে বাড়ি বদলের এই রাজনীতি সামনের দিনেও দেখা যাবে বলে অভিমত তাদের।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!