DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

দুর্নীতি মামলায় চার্জ গঠন: আদালতে মাহমুদুর রহমানের খোলা চিঠি

image_88577_0সম্পদের হিসাব দাখিল না করার অভিযোগের মামলায় চার্জ গঠনের সময় দৈনিক আমার দেশ পত্রিকার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমান আদালতে সরকার ও বিচার ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ৫ পৃষ্ঠার লিখিত খোলা চিঠি দাখিল করেছেন।

বুধবার ঢাকার ৩ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক বাসুদেব রায় চার্জ গঠনের সময় আসামি মাহমুদুর রহমানকে দোষী না নির্দোষ জিজ্ঞাসা করলে তিনি তার জবাবে ওই লিখিত চিঠি আদালতে দাখিল করেন।

তিনি তার দাখিলকৃত চিঠি পড়তে শুরু করলে আদালতে দুদকের আইনজীবী স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট মোশারফ হোসেন কাজল ও অ্যাডভোকেট কবির হোসেন জোরালোভাবে বিরোধিতা করতে থাকেন।

দুদক আইনজীবীদের তীব্র বিরোধিতার মুখে মাহমুদুর রহমান তার ৫ পৃষ্ঠার চিঠির কেবল প্রথম পৃষ্ঠাটিই পড়তে পারেন।

এরপর বিচারক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করে আগামী ২৮ মে সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য দিন ধার্য করেছেন।

ওই চিঠিতে মাহমুদুর রহমান তার স্বভাব সুলভ ভঙ্গিতে সরকার, রাষ্ট্রের বিচার ব্যবস্থা এবং এই সরকারের দুর্নীতির বিষয়ে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছেন।

তিনি তার চিঠিতে বর্তমান সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. তৌফিক ই এলাহী চৌধুরীর দুর্নীতির সংবাদ আমার দেশ পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার কারনেই তার বিরুদ্ধে প্রতিহিংসা বশত: এই মামলাটি করা হয়েছে বলে আাদালতকে জানান মাহমুদুর রহমান।

এই মামলায় দুদক জালিয়াতি ও আইনভঙ্গ করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রীর সন্তুষ্টির জন্য দুদক তার বিরুদ্ধে ৭০টির মতো মামলা দায়ের করেছে বলেও চিঠিতে উল্লেখ করেছেন তিনি।

তার বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনো অভিযোগ না থাকায় দুদক সম্পদের হিসাব দাখিল না করার অভিযোগে এই মামলাটি দায়ের করা হয়েছে বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন মাহমুদুর রহমান। এছাড়াও তার চিঠিতে বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই, আইনের শাসন নেই, মানবাধিকার নেই, এমনকি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টিতে কোনো জনপ্রতিনিধিত্বশীল বৈধ সরকারও নেই বলেও উল্লেখ করা হয়েছে।

চিঠিতে প্রধানমন্ত্রীর ভাতিজা ফজলে নূর তাপস রাতারাতি ৪০০ কোটি টাকার মূলধনের ব্যাংকের মালিক হওয়া এবং তার সম্পদ মাত্র ক’বছরে মাত্র কয়েকশ গুণ বেড়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় নিক্সন চৌধুরীর পদ্মাসেতু গিলে খাওয়ার কথা লেখা আছে।

সরকারের মন্ত্রী, আত্মীয়-স্বজনসহ অনেকের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে দুর্নীতি ও তার ভাষায় লুটপাটের অনেক অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে চিঠিতে।
 
এছাড়াও মাহমুদুর রহমান আদালতকে শেখ হাসিনার আজ্ঞাবাহী, রাজনৈতিক পক্ষপাতদুষ্ট বলা হয়েছে।

তিনি লিখেন, ‘১৩ মাস বিনাবিচারে অন্যায়ভাবে জেলে বন্দী থাকলেও আদালতের প্রতি আস্থা না থাকায় আজ পর্যন্ত আমি জামিনের কোনো আবেদন করি নাই।’

আদালতের কাছে তিনি চার্জ গঠনের পরিবর্তে মামলা খারিজের এবং ক্ষমতার অপব্যবহার ও জালিয়াতিতে সংযুক্ত থাকার অপরাধে সব সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের আদেশের প্রত্যাশা করেছেন।

চিঠির একেবারে শেষ পর্যায়ে তিনি লিখেন, ‘আল্লাহর কাছে ফিরে যাওয়ার মুহূর্ত পর্যন্ত শত প্রতিকূলতা মোকাবেলা করেও জালিম শাসকের সামনে দাঁড়িয়ে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করবো, স্বাধীনতার পক্ষে আওয়াজ তুলবো, বাংলাদেশের ষোল কোটি জনগণকে তার নিজস্ব সাংস্কৃতিক বিপ্লবের দিকে আহ্বান জানাবো- আপনার কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে এই আমার অঙ্গীকার।’

গত ২০১০ সালের ১৩ জুন রাজধানীর গুলশান থানায় দায়ের করা এ মামলায় ওই বছরের ১৫ জুন মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করে দুদক।

চার্জশিট হওয়ার পর মাহমুদুর রহমানের পক্ষে হাইকোর্টে মামলাটি বাতিলের জন্য আবেদন করলে হাইকোর্ট বিচারিক আদালতের কার্যক্রম স্থগিত করেন।

দীর্ঘ প্রায় আড়াই বছর হাইকোর্টের আদেশে বিচারিক আদালতের কার্যক্রম স্থগিত থাকার পর সম্প্রতি স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে হাইকোর্ট।

উল্লেখ্য, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার এ জ্বালানি উপদেষ্টার বিরুদ্ধে ২০১০ সাল থেকে বর্তমান পর্যন্ত ৬২টিরও বেশি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৫২টি মামলা মানহানির।

যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথিত স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ এবং রাষ্ট্রদ্রোহসহ নানা অভিযোগে গত ১১ এপ্রিল মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিনই তাকে তিনটি মামলায় ১৩ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!