DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

আওয়ামী সরকারের হটকারী ও অদূরদর্শী সিদ্ধান্তে আরব আমিরাতে বাংলাদেশীদের জন্য বন্ধ হয়ে গেলো সব ধরনের ভিসাঃ

437161754_640বাংলাদেশী নাগরিকদের জন্য পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেল দুবাই তথা সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) ভিসা। কর্মসংস্থান বা এমপ্লয়মেন্ট ভিসা, ট্যুরিস্ট বা ভ্রমণ ভিসাসহ সব ধরনের বাণিজ্যিক ভিসা প্রদান সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রেখেছে বাংলাদেশের রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্ উত্স দেশটি। এছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে এরা নিজেদের বাণিজ্যিক সম্পৃক্ততাকে নানাভাবে গুটিয়ে নিতে শুরু করেছে। মধ্যপ্রাচ্যের প্রভাবশালী দেশ আরব আমিরাত। দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্যিক কর্মকাণ্ডে যেমন মারাত্মকভাবে 

ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, তেমনি বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন দুবাই হয়ে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে ভ্রমণকারী বাংলাদেশী নাগরিকরা। 

এছাড়া কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ থাকা এ দেশের দরজা এখন বাংলাদেশীশ্র্রমিকদের জন্য একেবারেই বন্ধ। এ পরিস্থিতির অবসানে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো।

অনুসন্ধানে জানা যায়, সঙ্কটের শুরু মূলত ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর ভেন্যু নির্বাচনের ভোট দেয়াকে ঘিরে। বিশ্বের সর্ববৃহত্ এ আন্তর্জাতিক বাণিজ্য প্রদর্শনীর আয়োজক হওয়ার প্রতিযোগিতায় ছিল বেশ কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাই, তুরস্কের ইজমির, ব্রাজিলের সাও পাওলো, রাশিয়ার একাতেরিনবার্গ ও থাইল্যান্ডের একটি শহর। 

তবে প্রার্থিতার শর্ত পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় থাইল্যান্ড প্রাথমিক পর্যায়েই বাদ পড়ে। প্রতিযোগিতায় থাকা দেশগুলোর মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই বাংলাদেশের ভোটের ব্যাপারে সবচেয়ে আশাবাদী ছিল দুবাই। কিন্তু গত বছরের মাঝামাঝি বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, এ প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ভোট পাবে রাশিয়ার একাতেরিনবার্গ। 

এমন সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল নীতি গ্রহণ করে দুবাই ও সংযুক্ত আরব আমিরাত। দুবাই ন্যাচারালাইজেশন ডিপার্টমেন্ট (ডিআইডি) কেবল সে দেশের সঙ্গে বাণিজ্যিকভাবে সম্পৃক্ত বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রদানের নীতি গ্রহণ করে। 

এছাড়া সাধারণ পর্যটক ও সাধারণ ট্রানজিট ভিসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেয়া হয়। তবে যেসব বাংলাদেশী নাগরিক সংযুক্ত আরব আমিরাতের মালিকানাধীন এয়ারলাইনের (এমিরেটস, ফ্লাই দুবাই বা ইতিহাদ) যাত্রী হিসেবে ব্রিটেন, আমেরিকা বা কানাডা ভ্রমণ করতেন, তাদের শর্তসাপেক্ষে ৯৬ ঘণ্টারট্র্রানজিট ভিসা দেয়া হতো। সম্প্রতি এ শ্রেণীর যাত্রীদেরওট্র্রানজিট ভিসা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। কেবল ব্রিটেন, আমেরিকা বা কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাসরত বাংলাদেশীরা যথোপযুক্ত প্রমাণপত্র জমা দিয়ে এ ধরনের ট্রানজিট ভিসা পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রেও সংযুক্ত আরব আমিরাতের এয়ারলাইনগুলোর যাত্রীরাই কেবল এ সুবিধার আওতায় রয়েছেন।

সূত্রমতে, আমিরাত সরকার দুবাইকে নির্বাচিত করার জন্য বাংলাদেশের কাছে ভোট প্রত্যাশা করেছিল। বিনিময়ে বাংলাদেশ থেকে আরও শ্রমিক নেয়ারও আশ্বাস দেয়া হয়। কিন্তু বাংলাদেশ দুবাইকে ভোট না দিয়ে রাশিয়ার পক্ষে ভোট দেয়। আমিরাত প্রবাসী বাংলাদেশীরা মনে করছেন, এতে বাংলাদেশীদের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছে আমিরাত সরকার। 

এক্সপোর ভেন্যু নির্বাচনে ভোট দিলে বিপুল শ্রমিক নেয়া হবে, এই আশ্বাসে নেপাল দুবাইকে ভোট দিয়েছে। জানা গেছে, আমিরাত সরকার নেপাল থেকে আগামী তিন বছরে তিন লাখ শ্রমিক নেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে।

স্থানীয় বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, নেপাল থেকে এরই মধ্যে শ্রমিক নেয়া শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে দুবাইয়ে বাংলাদেশ কন্স্যুলটের শ্রম সচিব বলেন, আমরা বসে নেই। আমরা সাধ্যমত চেষ্টা করে যাচ্ছি। আরব আমিরাতের প্রবাসী বাংলাদেশীদের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা যায়, এরই মধ্যে অনেকেই চাকরি থেকে বিভিন্ন অজুহাতে বহিষ্কৃত হচ্ছেন। 

এদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতিতে রাশিয়াকে কাছে টানতেই এ সরকার আরব আমিরাতের শ্রম বাজারকে উপেক্ষা করে রাশিয়াকে ভোট দেয়ায় প্রবাসী শ্রমিকদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, গত বছরের ২৬ নভেম্বর প্যারিসে অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক প্রদর্শনী ব্যুরোর ১৫৪তম সাধারণ অধিবেশন। সেখানেই ভোটাভুটির মাধ্যমে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর স্বাগতিক দেশের ভাগ্য নির্ধারিত হয়। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ ভোট দেয় রাশিয়ার একাতেরিনবার্গের পক্ষে। তবে শেষ পর্যন্ত গোপন ভোটাভুটিতে জিতে ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর স্বাগতিক শহর নির্বাচিত হয় দুবাই। মূলত ওই ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে অনেক বেশি কড়া অবস্থান গ্রহণ করে দুবাই তথা ইউএই কর্তৃপক্ষ। 

ঢাকায় দুবাইয়ের ভিসা প্রক্রিয়াকরণের দায়িত্বে আছে অন্যতম বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সায়মন ওভারসিস। ঢাকা থেকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলশানে অবস্থিত প্রতিষ্ঠানটির অফিসে গত সেপ্টেম্বরের আগে যে কোনো কর্মদিবসে গেলে ভিসা প্রত্যাশীদের অস্বাভাবিক ভিড় দেখা যেত। কিন্তু গত দুই সপ্তাহ ধরে অফিসটিতে দুবাইয়ের ভিসা প্রসেসিং পুরোপুরি বন্ধ। এছাড়া ফ্লাই দুবাই বা ইতিহাদ এয়ারওয়েজের সূত্রে যেসব প্রতিষ্ঠান ভিসা প্রক্রিয়াকরণের কাজ করত, তাদেরও একই দশা।

স্বাভাবিক সময়ে বাংলাদেশ থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ৫ হাজার মানুষ বিভিন্ন কারণে দুবাই ভ্রমণ করত। বিরাট এ যাত্রী সংখ্যাকে ঘিরে ঢাকা-দুবাই রুটে লাভজনকভাবে চলাচল করত বেশ কয়েকটি এয়ারলাইনের ফ্লাইট। এর মধ্যে কেবল এমিরেটস এয়ারলাইনস এককভাবে সপ্তাহে ২১টি ফ্লাইট পরিচালনা করত। কিন্তু গত তিন মাসে পর্যায়ক্রমে কমিয়ে এখন সপ্তাহে মাত্র ১৪টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে এয়ারলাইনসটি। তারপরও বেশিরভাগ ফ্লাইটে ৫০ শতাংশেরও বেশি আসন খালি থাকছে। এ কারণে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে এমিরেটসের ফ্লাইট সংখ্যা আরও কমে যেতে পারে। এছাড়া ফ্লাই দুবাই চট্টগ্রাম থেকে সপ্তাহে সাতটি এবং ঢাকা থেকে চারটি ফ্লাইট পরিচালনা করত। তাদের ফ্লাইট সংখ্যাও এরই মধ্যে অর্ধেকে নামিয়ে আনা হয়েছে।

দুবাই ও ইউএই’র ভিসা প্রক্রিয়াকরণকারী প্রতিষ্ঠানগুরোর সূত্রে জানা গেছে, গত নভেম্বর মাসের পর থেকে দুবাই তথা ইউএই সরকার বাংলাদেশী নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রে পর্যায়ক্রমে অতিমাত্রায় কড়াকড়ি আরোপ করতে থাকে। এ অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে যথাসময়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হলে পরিস্থিতি এতটা জটিল হতো না।

সূত্রগুলো জানায়, সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিভিন্ন রাজ্যে সব মিলিয়ে প্রায় ২৩ লাখ বাংলাদেশী রয়েছেন। সৌদি আরবের পর সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশী আছেন এ দেশটিতে। এ কারণে রেমিট্যান্স আয়ের দ্বিতীয় বৃহত্তম উত্স ইউএই। সেখানে শ্রমজীবীসহ বিভিন্ন রকম পেশায় কর্মরত মানুষের সংখ্যা বেশি হলেও অনেক বাংলাদেশীর বড় রকমের ব্যবসাও রয়েছে। বর্তমান ভিসা জটিলতার কারণে তারা গুরুতর সমস্যায় পড়েছেন। এরই মধ্যেই তাদের ব্যবসার যথেষ্ট ক্ষতি হয়েছে বলে জানা গেছে। 

দুবাইয়ে রিয়েল এস্টেট সেক্টরে বিনিয়োগকারী বাংলাদেশের একজন ব্যবসায়ী বলেন, সরকারের হঠকারিতার কারণে ইউএইতে থাকা লাখ লাখ বাংলাদেশী এখন ভাগ্য বিপর্যয়ের মুখে। অথচ ওয়ার্ল্ড এক্সপো ২০২০-এর স্বাগতিক দেশ হিসেবে দুবাইকে সমর্থন দেয়ায় নেপাল ৩ লাখ শ্রমিক পাঠানোর সুযোগ পাচ্ছে। দুবাইকে সমর্থন দিয়ে বাংলাদেশও এর চেয়ে বেশি সুযোগ নিতে পারত। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে বাংলাদেশের সরকার সে পথে অগ্রসর হয়নি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!