DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে নামাজের জায়গা বন্ধ করে ১লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রার নামে পূজা!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে ছাত্রীদের জন্য তৈরী করা নামাজের জায়গায় তালা দেয়ার একদিন পরই রাজধানী ঢাকায় ঢাকঢোল পিটিয়ে পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে মহাসমারোহে হিন্দু ধর্মীয় সংস্কৃতির ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র আয়োজন করা হয়েছে।

হিন্দুদের পুজার আদলে এবারের মঙ্গল শুভযাত্রায় প্রতিপাদ্য লেখা হয়েছে- ‘নির্মল করো, মঙ্গল করো মলিন মর্ম মুছায়ে’। অথচ, একদিন আগেই বুধবার (১৩ এপ্রিল) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে টিএসসিতে রোজার দিনে নামাজের জায়গায় তালা দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। পরের দিনই পুজার আদলে প্রতিবাদ্য লিখে শোভাযাত্রা বের করে একই বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইন্সটিটিউট।

টিএসটিতে নামাজের জায়গা বন্ধ করে দেওয়া নিয়ে আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান ফোনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি আক্তারুজ্জামানের সাথে কথা বলেন। তিনি জানতে চান- ৯০ শতাংশ মুসলমানের দেশে নামাজের স্থানে তালা দেয়ার ক্ষমতা তিনি কোথায় পেলেন? জবাবে ভিসি আক্তারুজ্জামান বলেছেন, ওই জায়গা নামাজের ছিল না। ওখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হবে। নামাজ পড়তে দেয়া হবে না। তিনি অভিযোগ করেন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের জায়গায় নামাজ পড়ার চেষ্টা করে একটি মহল সাম্প্রদায়িক উগ্রতা ছড়াচ্ছে।

উল্লেখ্য, গত এক বছরেরও বেশি সময় ধরে উক্ত জায়গাটিতে নামাজ আদায় করা হচ্ছিল।

এদিকে মঙ্গল শোভাযাত্রার আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে দখলদার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এক বক্তব্যে বলেন, “ধর্ম যার যার, উৎসব সবার”। এমন বক্তব্যের মাধ্যমে হিন্দুদের উৎসবকে মুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার অপচেষ্টা করেছেন শেখ হাসিনা।

বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলো দীর্ঘদিন ধরেই পহেলা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রাকে ভারতীয় হিন্দুত্ববাদী সংস্কৃতি হিসেবে আখ্যায়িত করছেন। অপর দিকে খোদ আওয়ামী লীগের প্ররোচনা, প্রণোদনা ও রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তায় হিন্দু ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠানকে ৯০ শতাংশ মুসলমানের মাথায় চাপিয়ে দিচ্ছে শেখ হাসিনার সরকার।

শেখ হাসিনা এই উৎসবকে মুুসলমানদের ওপর চাপিয়ে দেয়ার জন্য রাষ্ট্রকে ব্যবহার করলেও, এটা যে হিন্দুদেরই উৎসব তা কলকাতার প্রভাবশালী “আনন্দবাজার” পত্রিকার ২০১৮ সালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছিল। এই আয়োজনকে হিন্দুদের দুর্গাপূজার সঙ্গে তুলনা করে আনন্দবাজার পত্রিকার শিরোনাম ছিলো : “ঢাকার পয়লা যেন অষ্টমীর একডালিয়া”।

একডালিয়া হলো কলকাতার একটি স্থান বা বসতি। যেখানে একডালিয়া এভারগ্রীন ক্লাব নামে কলকাতার সবচেয়ে বড় ও জাঁকজমকপূর্ণ পূজা মন্ডপ রয়েছে। অষ্টমী হচ্ছে, হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শারদীয় দুর্গাপূজার সবচেয়ে আকর্ষণীয় এবং জাঁকজমকপূর্ণ দিন। হিন্দু ধর্মের অনুসারীরা তাদের দেবীর সন্ধ্যাপূজা আর কুমারী পূজার মধ্য দিয়ে দিনটি পালন করে।

আনন্দবাজার পত্রিকার সেই প্রতিবেদনে বলা হয়েছিল, “কার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে! কখনও মনে হচ্ছিল কলকাতার কলেজ স্কোয়ার বা একডালিয়ার পুজো মন্ডপ। কখনও বা শান্তিনিকেতনের বসন্ত উৎসবের চেহারা। তা সে রমনার বটমূলের বৃন্দগানই হোক কিংবা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাজপথে মঙ্গল শোভাযাত্রা। পুজো, বসন্ত উৎসবের মিলমিশে একাকার ঢাকার নববর্ষের সকাল।”

করোনার ধাক্কা সামলে এবারও মসজিদের শহর ঢাকায় হিন্দুদের দেবী লক্ষ্মীর বাহন পেঁচা সহ বিভিন্ন পশু পাখির মুখোশ পরে একই ধরনের শোভাযাত্রার আদলে বৃহস্পতিবার (১৪ই এপ্রিল) মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়। এবার হিন্দুত্ববাদী এই আয়োজনের মূল প্রতিপাদ্য ছিলো রজনীকান্ত সেন রচিত হিন্দু ধর্মীয় প্রার্থনা সঙ্গীতের লাইন “তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে”।

এই সঙ্গীতের মাধ্যমে হিন্দুদের দেব-দেবীর কাছেই তথাকথিত মঙ্গল প্রার্থনা করা হয়েছে, যা কিনা মুসলমানদের জন্য প্রকাশ্য শিরক। ভয়াবহ এই কাজটা এবার রোজার মাসেই সম্পন্ন করল আওয়ামী লীগ ও তার অনুগত তথাকথিত সেক্যুলার ও ইসলামবিদ্বেষী লোকেরা।

রজনীকান্ত সেন রচিত হিন্দু ধর্মীয় প্রার্থনা সঙ্গীত “তুমি, নির্মল কর, মঙ্গল কর মলিন মর্ম মুছায়ে” – এর চরণগুলো পড়লে যে কেউ নিশ্চিত হবেন যে, কী ভয়াবহ শিরকের মধ্যে মুসলমানদের ঠেলে দিচ্ছে এই রাষ্ট্র ব্যবস্থা।
এতে বলা হয়,

“তুমি দাঁড়াও, রুধিয়া পন্থা;
তব, শ্রীচরণ তলে নিয়ে এস, মোর
মত্ত-বাসনা গুছায়ে!
মলিন মর্ম মুছায়ে ।”

পরিষ্কারভাবে এতে শ্রীচরণের কথা উঠে এসেছে। আর শ্রীচরণ হলো, হিন্দুদের ভগবান বিষ্ণুর পাদদেশ।
তো এই ধর্মীয় এই সঙ্গীতকেই এবার মঙ্গল শোভাত্রার মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হিসেবে বাছাই করেছে হিন্দুত্বাবাদীদের জোট।

সূর্যের উপাসনার মাধ্যমে দিন শুরু:

এদিন সকালে রমনা বটমূলে ছায়ানটের সূর্যের উপাসনার মাধ্যমে তাদের তথাকথিত প্রভাতী আয়োজন শেষ হয়। এরপর সকাল ৯টা ১ মিনিটে টিএসসির সড়ক দ্বীপের সামনে থেকে আওয়ামী লীগের তল্পিবাহক উপাচার্য অধ্যাপক মো. আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে শুরু হয় হিন্দুদের মঙ্গল শোভাযাত্রা।

এতে পূজায় যেমন ঢাক-ঢোল পিটিয়ে আনন্দ করা হয়, সামনে-পেছনে বাদ্যের তালে তালে চলে নৃত্য। সবার হাতে হাতে ছিল পেঁচা, বাঘ সহ বিভিন্ন পশুর মুখোশ। এছাড়া, পুষ্পাকৃতির চরকি, টেপা পুতুল আর পাখির কাঠামো পৌত্তলিক এই শোভাযাত্রায় জুড়ে দেয়া হয়। পেঁচা হলো হিন্দুদের দেবী লক্ষ্মীর বাহন। এছাড়া, কার্তিকের বাহন ময়ূর, সরস্বতীর বাহন হাঁস, গণেশের বাহন ইঁদুর ইত্যাদির মুখোশও তৈরী করা হয় এসব শোভাযাত্রায়।
মঙ্গল প্রদীপও হিন্দুদের পূজার একটি অনুষঙ্গ। করোনা থেকে বাঁচতেও বাংলাদেশে ও ভারতের হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সময় মঙ্গল প্রদীপ জ্বালিয়ে পূজা করেছেন।

সাধারণত মঙ্গল শোভাযাত্রায় বাঘ-ভাল্লুক, সাপ, বিচ্ছু, কুমির ও বিভিন্ন দেব-দেবীর বড় বড় মূর্তি, ছবি ও মুখোশ নিয়ে র‌্যালি বের করা হয়। বলা হয়, এর মাধ্যমে মঙ্গল কামনা করা হয়। ঠিক যেভাবে হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা পূজার মতো তাদের ধর্মীয় উৎসবগুলোতে বিভিন্ন মূর্তি তৈরি করে তাদের কাছে মঙ্গল কামনা করে।

ঢাকার পহেলা বৈশাখ উদযাপন ও বর্ষবরণের শুরু হয় সূর্যোদয়ের সাথে সাথে রমনা বটমূলে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা বৃন্দগানের মাধ্যমে। যে গানে বলা হয়েছে, ‘অগ্নিস্নানে সূচি হোক ধরা’।

পৌত্তলিকতার প্রতিবাদ জানিয়ে সাজিদ হাসান নামে একজন ফেসবুকে লেখেন, টিএসসিতে নামাজের স্থান ভেঙ্গে, সারা দেশে পূজায় রসদ যোগাচ্ছেন শেখ হাসিনা।

মামুন হোসেইন নামে আরেকজন লেখেন, আশির দশকে এরশাদবিরোধী সামরিক শাসনের বিরুদ্ধে পহেলা বৈশাখে চারুকলা থেকে প্রথমে “আনন্দ শোভাযাত্রা” এর প্রচলন হলেও, পরে এটিকে পরিকল্পনামাফিক পূজার রূপ দেয়া হয়। নাম দেয়া হয় মঙ্গল শোভাযাত্রা। এরপর থেকেই আওয়ামী লীগের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে হিন্দুত্ববাদী সাম্প্রদায়িক ভারতের নির্দেশে মুসলমানদের মধ্যে বর্ষবরণের ছদ্মাবরণে কৌশলে হিন্দুত্ববাদের চর্চা হয়ে আসছে।
পূজার এই শোভাযাত্রায় যোগ দিয়ে সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ বলেন, “আমরা মনে করি আমাদের ঐতিহ্য এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে নিশ্চয়ই আমরা বিজয়ী হব”।

প্রকৃতপক্ষে সব ইসলামী রাজনৈতিক দলকেই তারা জঙ্গি বলে অভিহিত করে থাকেন। মানুষের কাছে এখন আর তা গোপন নয়। হিন্দুত্ববাদী ভারতের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে তথাকথিত “জঙ্গিবাদ” এর তকমা ব্যবহার করে ইসলামপন্থীদের নির্মমভাবে দমন করে চলেছে আওয়ামী লীগ। পহেলা বৈশাখের পূজার শোভাযাত্রাতেও ইসলামবিদ্বেষী একই মনোভাব প্রকাশ করেছেন আওয়ামী লীগের মন্ত্রী।

সূত্রঃ আমার দেশ

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!