DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

অবৈধ হাসিনা সরকারের মিথ্যা মামলায় এপর্যন্ত বিএনপির ৩৬ লাখ কর্মী আসামী।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অবৈধ  সরকার বিরোধী আন্দোলনে বিএনপির অন্যতম সহায়ক শক্তি ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল। এর বাইরে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির নেতাকর্মীরাও বিশেষ ভূমিকা পালন করেন।

তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, আন্দোলনে দলটির এই শক্তি ম্লান করে দিতে নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মিথ্যা মামলা করেছে ক্ষমতাসীন সরকার। যখনই দলটির পক্ষ থেকে আন্দোলনের কথা বলা হয়, তখনই শুরু হয় নতুন মামলা আর পুরনো মামলায় গ্রেপ্তার। এই পরিস্থিতিতে দলটি কোনো অবস্থাতেই রাজপথে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না। এ থেকে বের হওয়ার বিকল্প পথও খুঁজে পাচ্ছেন না দলটির নীতিনির্ধারকরা। যদিও নীতিনির্ধারকরা বলছেন, এসব মামলার উদ্দেশ্য স্পষ্ট, জনগণকে আন্দোলনে সম্পৃক্ত করা গেলে সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়ে যাবে।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, ‘আমাদের শত শত কর্মী, ভাই, সহযোগীকে হত্যা, গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে দেওয়া হয়েছে মামলা। শুধু বিএনপি নয়, দেশের মানুষ ভয়াবহ একটা পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। এখান থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। সময়ই বলে দেবে কিভাবে আমরা বেরিয়ে আসব।’

মামলা-গুম-খুনের বিষয়ে খোঁজ রাখে, বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের এমন সেলের তথ্যানুযায়ী, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের ২৪ নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মোট মামলা হয়েছে এক লাখ এক হাজার ৯৮৬টি। এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৯০৫ জনকে। জেলহাজতে আছেন এক লাখ চার হাজার ৮১৪ জন। হত্যার শিকার হয়েছেন এক হাজার ৫২৬ জন; এর মধ্যে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৭৮৮ জন।

বিএনপির দপ্তর থেকে পাওয়া তথ্যে আরো দেখা গেছে, ২০০৯ সাল থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত বিএনপিসহ জোটের নেতাকর্মী গুম হয়েছেন এক হাজার ২০৪ জন। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজত থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে ৭৮১ জনকে। আর শুধু বিএনপির নেতাকর্মী গুম হয়েছেন ৪২৩ জন। ২০০৯ থেকে চলতি বছরের নভেম্বর পর্যন্ত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুরুতর জখম ও আহত হয়েছেন ১১ হাজার ১২৬ জন নেতাকর্মী।

বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এসব তথ্য সংগ্রহের কাজ করেন কৃষক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন খান। তিনি বলেন, ‘এই তথ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক কয়েক মাসের আরো কিছু তথ্য যোগ হবে।’

দলটির বিভিন্ন স্তরের নেতাকর্মী, আইনজীবীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দলের চেয়ারপারসন দেশনেত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে মোট ৩৭টি। এর মধ্যে ২১টি আদালতের নির্দেশে স্থগিত, ১৪টি মামলা বিচারাধীন। দুটি মামলায় তাঁর দণ্ড হয়েছে। তিনি বর্তমানে সরকারের নির্বাহী আদেশে জামিনে রয়েছেন।

অর্থপাচার ও দুর্নীতির অভিযোগে দুটি মামলায় সাজা হয়েছে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। এই দুই মামলা ছাড়াও তাঁর বিরুদ্ধে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দুটিসহ ঢাকার আদালতগুলোয় বর্তমানে ১৯টি মামলার কার্যক্রম চলমান। এসব মামলার প্রায় প্রতিটিতে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। এর বাইরে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা রয়েছে বলে জানান তাঁর আইনজীবীরা।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৮৬টি। এর মধ্যে ৩৫টি মামলার ওপর হাইকোর্ট থেকে স্থগিতাদেশ রয়েছে। বিএনপির সিনিয়র নেতাদের মধ্যে স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ১১টি, ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের বিরুদ্ধে দুদক, নাইকো দুর্নীতিসহ বেশ কয়েকটি মামলা রয়েছে। স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে ৯৬টি, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের বিরুদ্ধে প্রায় ৫০টি। ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়ার বিরুদ্ধে ১৯টি, নজরুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে সাতটি, সালাহ্ উদ্দিন আহম্মেদের নামে ৪৭টি, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীর নামে ৯টি, সেলিমা রহমানের নামে ১১টি, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর নামে ৩৭টি মামলা রয়েছে।

দলের ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহানের বিরুদ্ধে রয়েছে ২০টি মামলা, এ জেড এম জাহিদ হোসেনের বিরুদ্ধে ২৫টি, আবদুল আউয়াল মিন্টুর নামে ১২টি, শামসুজ্জামান দুদুর নামে ৩২টি, শওকত মাহমুদের নামে ৪৫টি, আবদুল্লাহ আল নোমানের নামে ১৩টি, শাহ মোয়াজ্জেম হোসেনের নামে ১৮টি, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদের নামে ছয়টি মামলাসহ ভাইস চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধে মোট মামলা রয়েছে ৩০৮টি।

চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নুল আবদিন ফারুকের নামে ৩১টি, মিজানুর রহমান মিনুর নামে ১৩টিসহ উপদেষ্টাদের বিরুদ্ধে ২৯৪টি মামলা রয়েছে। পাঁচজন সাংগঠনিক সম্পাদক, ১৭ জন সম্পাদকের বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে মোট ৩৩৩টি।

মামলায় সেঞ্চুরি, হাফ সেঞ্চুরি করেছেন এমন নেতাদের মধ্যে রয়েছেন ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু ৯৫টি, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান ১২৬টি, দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী ১৩৫টি, যুগ্ম মহাসচিব মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল ১৪০টি, হাবিব-উন-নবী খান সোহেল ১৮০টি, সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট রুহুল কুদ্দুস তালুকদার দুলু ৫৫টি, যুবদল সভাপতি সাইফুল আলম নীরব ২৩৫টি এবং সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর বিরুদ্ধে ২৫৭টি মামলা রয়েছে।

এসব মামলার সত্যতা নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর  বলেন, ‘আমরা মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে রাজনীতি করি না। আমাদের কাছে এফআইআরের কপি আছে। একটি মামলায় পাঁচ হাজার আসামি, এটা ধারণারও বাইরে। আবার ঘটনাই ঘটেনি কিন্তু মামলা হয়েছে। সবগুলোই গৎ বাঁধা এবং একই রকম। আমাদের অফিসে সব তথ্য সংরক্ষিত আছে। কেউ চাইলে যাচাই করে দেখতে পারেন।’

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!