DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

গোহত্যা বন্ধের লক্ষ্যে ভারতের মধ্যপ্রদেশে এবার গঠিত হলো গরু মন্ত্রনালয়!!!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গোরক্ষা আন্দোলনের সাফল্যের পর হিন্দু রাষ্ট্র গঠনে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেল ভারতের শাসক দল বিজেপি। এবার শুরু হলো গরু মন্ত্রণালয়। পথিকৃৎ মধ্যপ্রদেশ।

ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে আইন করে গোহত্যা বন্ধ হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ, কেরালার মতো গুটিকয় রাজ্য ছাড়া অধিকাংশ রাজ্যে হয় নিষিদ্ধ, নয়তো অনেক ধরনের বিধিনিষেধ রয়েছে। হিন্দি বলয়ে গোরক্ষকদের তাণ্ডবও অব্যাহত। এ অবস্থায় বিজেপিশাসিত মধ্যপ্রদেশ এক ধাপ এগিয়ে গড়ে তুলল গরু মন্ত্রণালয়। মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান গত রোববার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে পৌরোহিত্যও করেছেন। তিনি বলেছেন, গোরক্ষায় রাজ্যে গড়ে তোলা হবে অভয়ারণ্য বা গোশালা। তিনি জানিয়েছেন, এই লক্ষ্যে প্রয়োজনে কর আদায় করা হবে।

কংগ্রেসের মতে, গরু মন্ত্রণালয়ের এই ঘোষণা নিছকই আরও এক হিন্দুত্ববাদী চমক। মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র কৃষ্ণ কুমার শর্মা গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় প্র বলেন, মুখ্যমন্ত্রী যে মন্ত্রণালয়ের কথা ঘোষণা করেছেন, তা রাজনৈতিক ও হিন্দুত্ববাদী চমক, চটক ও কৌতুক ছাড়া অন্য কিছু নয়। তিনি বলেন, ‘কংগ্রেসের মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ ক্ষমতায় এসে রাজ্যে ১২০০ গোশালা তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। বেশ কিছু গোশালা তৈরিও হয়েছে। বাজেটে গোশালায় গরুপ্রতি দৈনিক ২০ টাকা বরাদ্দও হয়েছিল। অথচ বিজেপি তার ১৫ বছরের শাসনকালে একটিও গোশালা তৈরি করেনি। এখন মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যে ২ হাজার গোশালা তৈরির কথা বললেও যে অর্থ বরাদ্দ হচ্ছে, তাতে প্রতিদিন গরুপিছু খরচ হবে মাত্র ১ টাকা ২৬ পয়সা! তাও সেই টাকা কর বসিয়ে তুলবে বলেছে।’

মধ্যপ্রদেশ গোপালন পর্ষদের হিসাব অনুযায়ী রাজ্যে ৬২৫টি গোশালায় ১ লাখ ৬৭ হাজার গরু-বাছুর রয়েছে।

গরুর জন্য পৃথক মন্ত্রণালয় গঠনের বিষয়টি অভিনব। গরু মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সংশ্লিষ্টতা থাকবে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের। সেগুলো হলো পশুপালন, বন, পঞ্চায়েত, কৃষি, অর্থ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। মুখ্যমন্ত্রী বলেন, নতুন মন্ত্রণালয়ের লক্ষ্য গরু সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে গ্রামীণ অর্থনীতির বিকাশ ও মানুষের কল্যাণে গোসম্পদের সার্বিক ব্যবহার।

গরু সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে মানুষের কল্যাণ ও অর্থনীতির বিকাশে যে অর্থের প্রয়োজন, তার সংস্থান কীভাবে হবে? গরুর অভয়ারণ্য বা গোশালা তৈরিতে অর্থ প্রয়োজন। তা রক্ষণাবেক্ষণে লোক নিয়োগ করতে হবে। তাদের বেতন-ভাতা দিতে হবে। গরুদের খাওয়াতে, তাদের ঠিকমতো রাখতেও বিপুল অর্থের প্রয়োজন। কোথা থেকে তা আসবে? এর জবাবও দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেছেন, ধর্মপ্রাণ হিন্দু দিনের প্রথম রুটি গরুকে খাওয়ান। রাতের শেষ রুটি দেন কুকুরকে। এভাবেই জীবে প্রেমের মধ্য দিয়ে ঈশ্বরের সেবা হয়। সে জন্য মানুষকেই এগিয়ে আসতে হবে। গরু কর নেওয়া হবে আগামী বছর থেকে।

ভারতে বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অভয়ারণ্য রয়েছে। কিন্তু গৃহপালিত পশু-প্রাণীর জন্য নেই। সেই নিরিখে শিবরাজ সিংয়ের মধ্যপ্রদেশ গরুর অভয়ারণ্য স্থাপনে প্রথম রাজ্য হতে চলেছে। প্রশ্ন হলো, এই অভয়ারণ্য হিন্দুত্বের প্রসার ও বিকাশে সহায়ক হলেও নতুন ধরনের সামাজিক সংকট তৈরি করবে না তো? উত্তর প্রদেশ, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাট বা হরিয়ানায় বিধানসভার ভোটে ছেড়ে দেওয়া গরু একটা বিরাট বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ছেড়ে দেওয়া অশক্ত, রুগ্‌ণ ও বয়স্ক গরু কৃষকের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছিল। খেতের ফসল রক্ষায় কৃষককে দল বেঁধে পাহারা দিতে হয়েছিল। জাতীয় সড়কে বহু দুর্ঘটনার কারণও এই ছেড়ে দেওয়া গরু-মহিষ। গোরক্ষা করতে গিয়ে এটা এখন নতুন সংকট। তাই প্রশ্ন উঠছে, মধ্যপ্রদেশের অভয়ারণ্য কতটা কাজের হবে তা নিয়ে।

হিন্দুত্বের বিকাশ ও হিন্দু রাষ্ট্র গঠনের লক্ষ্যে অবশ্য এই সিদ্ধান্ত কার্যকর। বিজেপির ঘোষিত তিন লক্ষ্যের মধ্যে দুটি সম্পূর্ণ। সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল হয়েছে। অযোধ্যায় রামমন্দির স্থাপনেও কোনো বাধা নেই। তিন তালাক প্রথা তুলে দেওয়ার মধ্য দিয়ে অভিন্ন দেওয়ানি বিধি প্রণয়নের লক্ষ্যেও বিজেপি আগুয়ান। বিজেপিশাসিত রাজ্যে রাজ্যে ‘লাভ জেহাদ’ রুখতে আইন আনা হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে গরু মন্ত্রণালয় গঠন বা গরু কর প্রচলন হিন্দু রাষ্ট্র স্থাপনায় আরও এক কদম অগ্রগতি।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!