অর্থপাচার সংশ্লিষ্ট মামলায় যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী পাপিয়ার চার বছরের দণ্ড

ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ অর্থপাচারের অভিযোগে দায়ের করা মামলায় যুব মহিলা লীগের প্রাক্তন নেত্রী শামীমা নূর পাপিয়াকে চার বছর মেয়াদি কঠোর কারাভোগের সাজা দিয়েছে আদালত।

আজ রোববার ঢাকার ৮ নম্বর বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মঞ্জুরুল হোসেন এই রায় ঘোষণা করেন।

তবে পাপিয়ার স্বামী মফিজুর রহমান ওরফে সুমন চৌধুরী এবং তাঁর তিন সহযোগী—সাব্বির খন্দকার, শেখ তায়িবা নূর ও জুবায়ের আলম—এর বিরুদ্ধে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়ায় আদালত তাঁদের অব্যাহতি প্রদান করেন।

পাপিয়ার পক্ষে দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী শাখাওয়াত উল্লাহ ভূঁইয়া জানান, চার বছরের সশ্রম সাজার পাশাপাশি আদালত তাঁকে পাঁচ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা করেন। জরিমানার অর্থ অনাদায়ে তাঁকে অতিরিক্ত তিন মাস বিনাশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ১২ অক্টোবর পাপিয়া ও তাঁর স্বামীকে অস্ত্র আইনের মামলায় ২০ বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে উচ্চ আদালতের আদেশে তিনি জামিনে মুক্তি পান।

রায়ের দিন অসুস্থতার কারণে পাপিয়া আদালতে উপস্থিত থাকতে পারেননি। তাঁর পক্ষ থেকে সময় প্রার্থনা করা হলে বিচারক আবেদনটি নামঞ্জুর করেন। অপরাধে অভিযুক্ত চারজনের মধ্যে জুবায়ের পলাতক থাকলেও বাকি তিনজন আদালতে হাজির হন।

আদালতের বেঞ্চ সহকারী ফজলুর রহমান বলেন, “বিচারক পাপিয়ার জামিন বাতিল করে তাঁর বিরুদ্ধে সাজা কার্যকরের নির্দেশ সহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।”

শামীমা নূর পাপিয়া, যিনি নরসিংদী জেলা যুব মহিলা লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদিকা, ও তাঁর স্বামীকে ২০২০ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে আটক করা হয়। পরে দলীয় নীতিমালার লঙ্ঘনের দায়ে তাঁকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।

তাদের কাছ থেকে তখন উদ্ধার করা হয় সাতটি পাসপোর্ট, দুই লাখ বারো হাজারের বেশি নগদ টাকা, ২৫ হাজারের কিছু বেশি জাল নোট, ১১ হাজারের বেশি মার্কিন ডলার, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের মুদ্রা এবং দুটি ডেবিট কার্ড।

এরপর ফার্মগেট এলাকায় পাপিয়ার অ্যাপার্টমেন্টে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে একটি বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র, দুটি ম্যাগাজিন, বিশটি গুলি, বিদেশি মদের বোতল, প্রায় ৫৮ লাখ টাকা এবং একাধিক ব্যাংকের কার্ড জব্দ করে। একই সময়ে তাঁর নরসিংদীর বাসায়ও তল্লাশি চালানো হয়।

র‌্যাব জানিয়েছিল, পাপিয়া রাজধানীর গুলশানে অবস্থিত ওয়েস্টিন হোটেলের ঘর ভাড়া নিয়ে অনৈতিক কার্যকলাপ চালাতেন এবং সেই আয়ের মাধ্যমে হোটেলের বিল পরিশোধ করতেন, যার পরিমাণ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেত।

আটকের পর শেরেবাংলা নগর থানায় পাপিয়া ও তাঁর স্বামীর বিরুদ্ধে অস্ত্র ও মাদকদ্রব্য আইনে পৃথক মামলা করে র‌্যাব। বিমানবন্দর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ অনুসারে এবং গুলশান থানায় সিআইডি মুদ্রা পাচারবিরোধী আইনে মামলা দায়ের করে। পাশাপাশি দুদকও পাপিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করে।

সিআইডির পরিদর্শক ইব্রাহীম হোসেন ২০২১ সালের ২৭ ডিসেম্বর অর্থপাচার মামলায় পাপিয়াসহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে দাখিল করেন।

এর ধারাবাহিকতায় ২০২২ সালের ২১ আগস্ট আদালত আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার কার্যক্রম শুরু করে। বিচার চলাকালীন ২৭ জন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয় এবং সব পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ হলে আজ রায় ঘোষণা করা হয়।

Share this post

scroll to top