DMCA.com Protection Status
title=""

ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চান সেনাপ্রধান, করিডোরে ‘না’

ক্যাপ্টেন (অবঃ) মারুফ রাজুঃ চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন হওয়া উচিত বলে মনে করেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান। তিনি আশা প্রকাশ করেছেন, যথা শিগগিরই সম্ভব একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনৈতিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর হবে। আজ বুধবার (২১ মে) ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’-এ তিনি এ কথা বলেন।  সেনা প্রধানের প্রত্যাশা, আগে সম্ভব না হলে ২০২৬ সালের ১ জানুয়ারিতে নতুন সরকার দায়িত্ব গ্রহন করবে।

কর্তব্যরত ব্যতীত দেশের সব সেনানিবাস ও জাতিসংঘ মিশনে মোতায়েন ছাড়া সব সেনা কর্মকর্তা এই অনুষ্ঠানে সশরীরে ও ভার্চুয়ালি যোগদান করেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় শুরু হওয়া অফিসার্স অ্যাড্রেস-এ প্রথমে প্রায় ৩০ মিনিট বক্তব্য দেন সেনাপ্রধান। এরপর প্রায় সোয়া ১ ঘণ্টা সেনা অফিসারদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। আসন্ন নির্বাচনে সেনাবাহিনীকে সততার সঙ্গে নিরপেক্ষ থেকে যথাযথ দায়িত্ব পালনের নির্দেশনা দেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে মানবিক করিডোরের মতো স্পর্শকাতর ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার বর্তমান সরকারের নেই উল্লেখ করে সেনাপ্রধান বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারই যথাযথ পদ্ধতি অনুসরণ পূর্বক এরূপ সিদ্ধান্ত নিতে পারে। করিডোর বিষয়ে সরকার কি ভাবছে অথবা জাতিকে একটি প্রক্সি ওয়ারের দিকে ঠেলে দিচ্ছে কিনা, এই বিষয়ে সরকার স্পষ্টভাবে কিছুই জানাচ্ছে না। এক অফিসারের প্রশ্নের উত্তরে তিনি স্পষ্টভাবে বলেন, কোনো করিডোর হবে না।

একইসঙ্গে চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ারও এই সরকারের নেই বলে উল্লেখ করেন সেনা প্রধান।এ সময় একের পর এক গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই বিষয়েও সরকারের কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই।

সার্বিকভাবে দেশে একটি অরাজক পরিস্থিতি বিরাজ করছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সময়ের সাথে পরিস্থিতির আরো অবনতি হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, বেসামরিক প্রশাসন সহ সকল সংস্থা ভেঙে পড়েছে এবং পুনর্গঠিত হতে পারছে না। শুধুমাত্র সশস্ত্র বাহিনী এখনো পর্যন্ত টিকে আছে এবং দেশের স্থিতিশীলতা রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ৫ ই আগস্ট এর পর হতে আজ পর্যন্ত দেশের সার্বিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে সেনাবাহিনীর অক্লান্ত ও নিঃস্বার্থ ভূমিকা সত্বেও বিভিন্ন মহল হতে সেনাবাহিনী ও সেনা প্রধানকে টার্গেট করা হচ্ছে।

এ সময় তিনি দেশি-বিদেশি স্বার্থান্বেষী মহলগুলো পরিস্থিতিকে আরও অবনতি ঘটাতে চাচ্ছে যাতে করে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করে তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে পারে বলেও মন্তব্য করেন। 

জাতিসংঘের তৈরি করা জুলাই-আগস্ট বিষয়ে প্রতিবেদনে সেনাবাহিনীর কোনো বক্তব্য নেওয়া হয়নি উল্লেখ তিনি বলেন, এ বিষয়ে জাতিসংঘের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানতে পারেন জাতিসংঘ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যোগাযোগ করতে চাইলেও বর্তমান সরকার জাতিসংঘকে সে সুযোগ দেয়নি।

সংস্কারসহ বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সরকার কি সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বা কিভাবে নিচ্ছে সে বিষয়ে দেশবাসীর পাশাপাশি তিনি এবং সেনাবাহিনী অবগত নন বলে তিনি হতাশা ব্যক্ত করেন।

তিনি বলেন, প্রথম দিন থেকেই প্রয়োজনীয় সংস্কারের বিষয়ে তিনি বারংবার সরকারকে অনুরোধ করেছেন। তবে সরকার অনুরূপ সংস্কারের বিষয়ে সত্যিকার অর্থে সিরিয়াস নয়।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশ ও জনগণের কোনরকম ক্ষতি হয় এমন কোন কাজ করবে না এবং কাউকেই এমন কোনো কাজ করতে দেবে না বলেও তিনি উল্লেখ করেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাক্টিভিস্টরাও সেনাবাহিনী সম্পর্কে নেতিবাচক প্রচারণা করছে বলেও উল্লেখ করা হয়। 

সবশেষে তিনি সকলকে ঐক্যবদ্ধ এবং অর্পিত দায়িত্ব ও দেশপ্রেমের আদর্শে অবিচল থাকার নির্দেশনা প্রদান করেন। নিজ অবস্থান ও আদর্শে অবিচল থাকলে কোনো মহলই সেনাবাহিনী ও দেশের কোনো ক্ষতি করতে পারবে না বলে উল্লেখ করে বক্তব্য শেষ করেন তিনি। 

এদিকে, আজকের অনুষ্ঠান ও সেনাপ্রধানের বক্তব্যের ব্যাপারে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তরে (আইএসপিআর) যোগাযোগ করলেও এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য করেনি।

অন্যদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের অবস্থান হলো—বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে স্থিতিশীল মানবিক করিডোর বজায় রাখতে এবং সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর (বিজিবি) উপর চাপ কমাতে সীমান্তকে ‘মিলিটারি অপারেশনস জোন (এমওজেড)’ ঘোষণা করা একমাত্র সমাধান। এটি সেনাবাহিনীকে সীমান্তের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিতে এবং সম্পদের সঠিক বণ্টন নিশ্চিত করতে সক্ষম করবে, যা বিজিবিকে ভারত সীমান্তসহ অন্যান্য নিরাপত্তা কাজে মনোনিবেশ করতে সহায়তা করবে।

এদিকে, সেনাবাহিনীর একটি অংশ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে ব্যবহার করে মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও অন্যান্য পিপলস ডিফেন্স ফোর্সেসকে গোপনে সমর্থন করতে চায়। এই গোষ্ঠীর মতে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের বর্তমান নিরাপত্তা পরিস্থিতি চীন, রাশিয়া এবং ভারতের অর্থনৈতিক স্বার্থের উপর প্রভাব ফেলতে পারে, যারা রাখাইন রাজ্যে তাদের নিজস্ব স্বার্থ রক্ষায় জড়িয়ে পড়তে পারে। এটি বাংলাদেশকে একটি ভূ-রাজনৈতিক ঝড়ের কেন্দ্রে ঠেলে দিতে পারে।

গত সোমবারও (১৯ মে) বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে প্রস্তাবিত ‘মানবিক করিডোর’ ইস্যুতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান তার অবস্থানে অটল ছিলেন। সেদিন সকালে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের নেতৃত্বে তিনজন মার্কিন কূটনীতিক জেনারেল ওয়াকারের সঙ্গে বৈঠক করেন। এই বৈঠকে মানবিক করিডোরের গুরুত্ব সম্পর্কে তাকে বোঝানোর শেষ মুহূর্তের প্রচেষ্টা চালানো হয় বলে নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে।

এর আগে, গত ১৮ মে বিকালে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা ও রোহিঙ্গা সংকট বিষয়ক প্রধান উপদেষ্টার প্রতিনিধি খলিলুর রহমান এবং সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট জেনারেল কামরুল হাসান তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে একটি বৈঠক করেন। বৈঠকে তারা মার্কিন চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্সের মাধ্যমে জেনারেল ওয়াকারকে মানবিক করিডোরের প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে বোঝানোর চেষ্টা করেন।

উল্লেখ্য, গত ১১ মে ড. ইউনূসের পরামর্শে জেনারেল ওয়াকার যুক্তরাষ্ট্র সফর বাতিল করেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!