ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ উচ্চ হারে সুদ, রপ্তানি বাড়ছে না, রেমিট্যান্স বাড়ছে না, তেলের দাম বাড়ছে, বিদ্যুতের দাম বাড়ছে, পাচার থামছে না, বেকারত্ব কমছে না। তার ওপর খরাদাহ ভালো একটা ধাক্কা দিয়ে গেল। সামনে আবার বন্যার আশঙ্কা!
গতকাল শনিবার (৪ মে) রাজধানীর মহাখালী ব্র্যাক সেন্টারে দ্য ঢাকা ফোরাম এক সেমিনার আয়োজন করে। সেখানে দেশের অর্থনীতি বিশ্লেষকরা বলেছেন, ঋণনির্ভর অর্থনীতি দেশকে খাদের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। ব্যাংকিং খাতে নীতি তৈরি করা হচ্ছে নির্দিষ্ট কোনো দুর্নীতি করার জন্য। দুর্নীতি এখন আমাদের সিস্টেমে (ব্যবস্থাপায়) যুক্ত হয়ে যাচ্ছে।
তারা সরকারের ঋণনির্ভর উন্নয়নের সমালোচনা করেন। তারা এই উন্নয়ন নিয়ে উদ্বেগেরে কথা জানিয়ে বলেন, দেশে যদি চেইন ইন ব্যালেন্সিং কাউন্টার বেইলিং ফ্যাক্টর না থাকে তাহলে দেশের রাজনীতি অর্থনীতির অবস্থা খারাপ হয়ে যায়। একই সঙ্গে শক্তিশালী বিরোধী দলের অভাবে জনগণের ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটছে না বলেও জানান তারা।
তারা বলেন, সরকারের ব্যাংক থেকে ধার করার পরিমাণ নতুন অর্থবছরেও বাড়তে থাকবে। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের শর্ত পূরণে বাজেট ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে নতুন বাজেটের আকার কমিয়ে আনবে সরকার, তবে ব্যাংকঋণের উপর নির্ভরশীলতা থেকেই যাবে। কারণ জাতীয় উৎপাদন বা আয় বাড়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
তারা বলেন, ব্যাংক থেকে ধার করার উপরে অন্তত আগামী বছরও নির্ভরশীল থাকবে সরকার।
ব্যাংক থেকে অতিরিক্ত ঋণ নেওয়া বিপজ্জনক। এতে একদিকে সরকারের দেউলিয়াত্বের ঝুঁকি বাড়ে অন্যদিকে বেসরকারি বিনিয়োগে টান পড়ে।
বিশ্লেষকরা সরকারের কিছু নীতি ও রাজস্ব আয়ে ঘাটতিকে দায়ী করেছেন।
সরকারের আর্থিক মুদ্রা ও মুদ্রা বিনিময় হার সংক্রান্ত কো-অর্ডিনেশন কাউন্সিল বৈঠকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি) ৩৯.৮২ শতাংশ বাজেট বাস্তবায়ন হয়েছে। অর্থাৎ ৬০ শতাংশের বেশি বাস্তাবায়নের সময় মাত্র চার মাস (মার্চ-জুন) বাকি।
৬০ শতাংশ মানে ৪ লাখ ২৯ হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা। চার মাসে এই বিপুল টাকা খরচ করতে গিয়ে অনিয়ম-দুর্নীতি হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অর্থনীতিবিদরা। তাদের মতে, এতে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা ও সঠিক ব্যয় অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোকে ভালো ব্যাংকের সঙ্গে যুক্ত করার আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়া শুরু হলেও এখনও অনেক প্রশ্নেরই উত্তর মেলেনি। দুর্বল ব্যাংকের বিপুল মন্দ ঋণ কোন প্রক্রিয়ায় সমন্বয় করা হবে তা কারও কাছেই স্পষ্ট নয়। মন্দ ঋণের চাপে ভালো ব্যাংকও ধসে পড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা।
আইএমএফ থেকে ঋণ পাওয়ার শর্ত হিসেবে প্রতি মাসে জ্বালানি তেলের দাম সমন্বয় করা শুরু হয়েছে। আবার ভর্তুকি তুলে দিতে বছরে চারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর ঘোষণা এসেছে। বিদ্যুতের দাম বাড়বে একাধারে আগামী তিন বছর।
এই উদ্যোগ ভোক্তা-ব্যবসায়ী সবার মাথার ওপর খড়গের মতো। ব্যবসায়ীরা বলছেন, এসব সিদ্ধান্ত শিল্পায়নবিরোধী। ব্যবসায়ীরা ইতোমধ্যেই কোভিড ও ইউক্রেন যুদ্ধের ধাক্কায় নাজেহাল। তার ওপর দফায় দফায় বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম বাড়ানো হচ্ছে। তার ওপর নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ-গ্যাস পাচ্ছেন না তারা। ফলে উৎপাদন কমে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। তাতে তাদের উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে। কিন্তু বিদেশে পণ্যের দাম বাড়ছে না।
এতে তাদের প্রতিযোগিতার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। ফলে বাজার ধরে রাখা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতে তিন মাস অন্তর বিদ্যুতের দাম বাড়লে কোনো শিল্পকারখানাই আর ভালোভাবে টিকতে পারবে না। বেশির ভাগই বন্ধ হয়ে যাবে।