DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনঃ ভারতীয় পোশাক বিক্রি হচ্ছে না ঈদ বাজারে

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মাদারীপুরের টেকেরহাটে একটি বেসরকারি ব্যাংকে চাকুরি করেন খালিদ হোসাইন। সোমবার (২৫ মার্চ) রাত ১১ টা ৫৪ মিনিটে ফেসবুকে ভারতীয় পণ্য বর্জন বিষয়ক একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেই সূত্র ধরে তার সঙ্গে দীর্ঘ আলাপ। খালিদ বললেন, একজন দেশপ্রেমিক হিসেবে আমি চাই ভারতীয় অর্থনৈতিক আগ্রাসন বন্ধ হোক। সবাই তাদের পণ্য বর্জন করুক। আমাদের দেশের শিল্প-কারখানার প্রসার হোক, মাথা উঁচু করে দাঁড়াক। কিন্তু আমাদের দেশের পণ্যের যে গুণগত মান সেটি সব ক্ষেত্রে কাঙ্ক্ষিত নয় বলে তার অভিযোগ।

দীর্ঘ আলাপচারিতায় খালিদ বললেন, রাজনৈতিকভাবে আমাদের পুরো পরিবার আওয়ামী লীগের সঙ্গে সম্পৃক্ত হলেও দেশের বৃহত্তর কল্যাণের কথা মাথায় রেখে আমি সব সময়ই দেশীয় পণ্য ব্যবহারের পক্ষে। এ নিয়ে প্রতিদিন অনেকের সঙ্গে কথা বলি। এটি আমাদের জাতীয় চেতনার অংশ হওয়া উচিত।

খালিদের ওই স্ট্যাটাসে পক্ষে-বিপক্ষে মোট ৩৬টি মন্তব্য পড়েছে। বিপক্ষে মন্তব্যকারীদের মধ্যে মানস মিত্র ও সুজন সাহা ভারতীয় পণ্যের পক্ষে বেশ যুক্তি উপস্থাপন করেন।

মন্তব্যের ঘরে খালিদ হোসাইন ভারতীয় পণ্যের বিকল্প দেশীয় পণ্যের একটি লম্বা তালিকাও দিয়েছেন। তার মতে, এসব পণ্যের সবগুলোই বাংলাদেশি, সেটি তিনি আগে থেকেই জানতেন না।

গতকাল মঙ্গলবার রাজধানীর কয়েকটি বৃহত শপিংমল, চেইন শপ ও বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ভারতীয় পণ্য বর্জনের বিষয়টি অনেকেই জানেন। তারা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে বিচ্ছিন্নভাবে ভারতীয় পণ্যের আধিপত্যের ব্যাপারে শুনে আসলেও ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের পর দেখা গেছে, দেশের বাজার ভারতীয় পণ্যে সয়লাব।

বিশেষ করে ভোগ্যপণ্যে দেশের বৃহৎ প্রতিষ্ঠানগুলোর বাহারি সব পণ্য রয়েছে। সেগুলোর দাম ও গুণগত মানও ভালো। সেগুলোতে সাধারণ মানুষ ভারতীয় পণ্য থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন।

শুধু খালিদ হোসাইন একা নন। তার মতো শত শত মানুষ ফেসবুকে ভারতীয় পণ্য বর্জন সংক্রান্ত স্ট্যাটাস দিচ্ছেন। এর আগে ইসরায়েলি পণ্য বর্জনের আহ্বানের পর বর্তমানে ভারতীয় পণ্য বয়কটের এই ক্যাম্পেইনের কারণে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে বলা যায়- এ সংক্রান্ত পোস্টই বেশি।

মঙ্গলবার রাত ১০ টায় ঢাকার অন্যতম ব্যস্ত বাণিজ্যিক এলাকা নয়াপল্টনে কথা হয় ইমরানের সঙ্গে। স্ত্রী ও সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ওয়ারী থেকে এখানে এসেছেন ঈদের কেনাকাটার জন্য।  তিনি বললেন, এবারের ঈদে ভারতীয় পণ্য কিনবেন না। বিকল্প হিসেবে দেশীয় কিংবা চীনা পণ্য কিনবেন।

ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে চায়না টাউন, পলওয়েলসহ এখানকার বিশাল বিশাল শপিং মলগুলোতে ক্রেতাদের আনাগোনা অনেকটাই বেড়েছে। স্বাধীনতা দিবস ও ঈদ উপলক্ষ্যে শপিংমলগুলোর আলোক সজ্জা চোখ ধাঁধানো। মার্কেটে উচ্চ স্বরে গান বাজছে। সামনে লাকি কুপন ফেলতে ব্যস্ত অনেক ক্রেতা।

তাদের কেউ কেউ জানালেন, যেখানে ভারতীয় পণ্যের বিকল্প রয়েছে সেখানে তারা বিকল্পটাকেই বেছে নিচ্ছেন। তবে তাদের অনেকেই বলছেন, মানসম্পন্ন পোশাকে ভারতের বিকল্প সেভাবে নেই। তারপরও খুঁজছেন।

এই ধরণের ক্যাম্পেইন অব্যাহত থাকলে ভারতের পোশাকের বিকল্প সৃষ্টি হবে বলেও মনে করেন আইরীণ মজুমদার। তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে একটি ট্রেন্ড চলে আসছে। টিভি সিরিয়াল, বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের কারণে দেশের মানুষের মধ্যে ভারতীয় পোশাকের প্রতি একটা দূর্বলতা রয়েছে। এটি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে।

দোকানিরা বলছেন, এ বছর ডলার সংকটের কারণে ভারতীয় পণ্যের যোগান কিছুটা কম। দাম বেশি। মানুষের হাতে অর্থের প্রাচুর্য নেই। যেখানে ঈদ বাজার এখনো সেভাবে জমেনি।

থ্রি-পিছসহ মেয়েদের পোশাকে ভারতই সেরা বলে দাবি করছেন ডিভা বাংলাদেশের কর্ণধার। তিনি বলছেন, আগে দেশে সেই মানের ফ্রেব্রিকস ছিল না। এখন কিছু কিছু উৎপাদন হচ্ছে। স্টোন, আঠাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্যের মান উন্নত হলে দেশেও ভালো পোশাক তৈরি হবে।

ইন্ডিয়া আউট ক্যাম্পেইনের প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটি দেশের ১৮ কোটি লোককে চেতনায় ফেরানোর একটি উদ্যোগ। এখনই এর শতভাগ সুফল আসবে না। তবে শুরু যেহেতু হয়েছে ধীরে ধীরে এটি ছড়িয়ে পড়বে। এতে দেশেরই লাভ হবে বলে মনে করেন তিনি।

তার মতে, ঈদ কেনাকাটায় এ বছর ১০ ভাগ লোকও যদি ভারতীয় পণ্য বর্জন করতে পারে তাহলেও সেটি দেশের জন্য ইতিবাচক হবে।

বিক্রেতারা বলছেন, এবারের ঈদে মেয়েদের পোশাকে ভারতীয় আলীয়া কাট ও ছেলেদের পাঞ্জাবি ‘সুলতান’ রাজ করতে পারে। তবে এসব পোশাকের নাম কোনোটিই ভারত থেকে দেওয়া হয়নি জানিয়ে তারা বলছেন, মূলত কয়েক বছরের পুরোনো জামা-কাপড় চালাতে তারাই এমন সব নামকরণ করে বাজারে ছাড়েন। এসব নামের মধ্যে যেটি ভাইরাল হয় সেটিই সে বছর বেশি চলে। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!