DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

প্রতিরোধ গড়ে তুললে হাসিনা সরকার ৫ মাসও টিকবে না: তারেক রহমান

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের এক মাস অতিবাহিত হলেও প্রধানমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার আতঙ্ক কাটেনি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। তিনি দাবি করেন, প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাঁচ বছর দূরে থাক, জনসমর্থনহীন এ সরকার হয়তো পাঁচ মাসও টিকবে না।

বুধবার এক ভিডিও বার্তায় তিনি বলেন,  ‘আজ ৭ ফেব্রুয়ারি। ফ্যাসিস্ট হাসিনার ‌ডামি নির্বাচনের এক মাস পূর্ণ হয়েছে। ডামি নির্বাচনের মাধ্যমে অন্য দেশের করুনায় ডামি সরকার গঠন করলেও এখনো শেখ হাসিনার আতঙ্ক কাটেনি। যেকোনো মুহূর্তে ক্ষমতা হারানোর ভয়ে আতংকিত ফ্যাসিস্ট হাসিনা। কারণ ফ্যাসিস্ট হাসিনার পদত্যাগের দাবি থেকে জনগণ সরে যায়নি। গণতন্ত্রকামী জনগণ রাজপথ ছাড়েনি। বরং পুলিশী বাধা উপেক্ষা করেই রাজধানীসহ সারাদেশে কালো পতাকা মিছিল প্রমাণ করেছে চূড়ান্ত বিজয় অর্জিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রকামী জনগণ রাজপথ ছাড়বে না।’  

তারেক রহমান বলেন, দেশে বিদেশে সবাই জানে ৭ জানুয়ারির কথিত ডামি নির্বাচন কোনোক্রমে জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ছিল না। বরং সেটি ছিল নির্বাচনের নামে বারো কোটি ভোটারের সঙ্গে এমন একটি রাষ্ট্রীয় প্রতারণা, যার উদ্দেশ্য অনৈতিক এবং অসাংবিধানিকভাবে ক্ষমতালোভী হাসিনার অবৈধ ক্ষমতার নবায়ন মাত্র।  জনগণের ভোটের অধিকার কেড়ে নিয়ে, জনগণের ভোট ডাকাতি করে, ভোট ডাকাত হাসিনা যেভাবে ২০১৪ এবং ২০১৮ সালেও অবৈধ সরকার গঠন করেছিল, একইভাবে ডামি প্রার্থী, ডামি দল, ডামি ভোটার ও ডামি পর্যবেক্ষকদের সমন্বয়ে মঞ্চস্থ করা হয়েছে ২০২৪ সালের ডামি নির্বাচন।

৭ জানুয়ারি দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে শতকরা ৫ ভাগেরও কম ভোটার উপস্থিতি ছিল দাবি করে তারেক রহমান বলন, বিএনপিসহ গণতন্ত্রের পক্ষের ৬৩টি রাজনৈতিক দলের নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত ছিল সম্পূর্ণ সঠিক এবং যৌক্তিক। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর যৌক্তিক সিদ্ধান্তে বিজয়ী হয়েছে ভোট বর্জনের আহ্বান সংবলিত 'লিফলেট' আর প্রত্যাখ্যাত হয়েছে, ডামি নির্বাচনের ব্যালট।   

তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ প্রমান করেছে বিএনপির অবস্থান এবং আন্দোলন গণআকাঙ্ক্ষারই প্রতিফলন। বিএনপির সাথে একাত্ম হয়ে প্রহসনের নির্বাচনের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রকামী মানুষের ভোট বর্জন কর্মসূচির প্রতি স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন মূলত বিএনপির রাজনীতির সফলতা প্রমাণ করেছে। এটি অবশ্যই চূড়ান্ত বিজয়ের পথে গণতন্ত্রকামী জনগণের চলমান আন্দোলনের বিজয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ।  

বিএনপির শীর্ষ এ নেতা বলেন, রাজনৈতিক বিবেচনায় ৭ জানুয়ারি জনগণের সামনে আওয়ামী লীগের পরাজয় এবং বিএনপির বিজয় সুস্পষ্ট। দেশের চলমান পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণের জন্য দেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় এবং বিপুল জনসমর্থিত রাজনৈতিক দল হিসেবে, চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের জন্য দেশের গণতন্ত্রকামী জনগণ আপনাদের দিকেই তাকিয়ে আছে। গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোর নেতৃত্বের দিকে তাকিয়ে আছে। দল হিসেবে জনগণের সেই প্রত্যাশা অবশ্যই আমরা সবাই সম্মানে সঙ্গে উপলব্ধি করি।   
বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দলের সাফল্যের যে মানদণ্ড অর্থাৎ জনগণের সমর্থন, জনমত গঠন, সাংগঠনিক কাঠামো ও সাংগঠনিক শক্তিমত্তা, দলের সদস্য সংখ্যা- প্রতিটি মানদণ্ডে বিএনপির সাফল্য বারবার প্রমাণিত হয়েছে। সকল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করে দেশজুড়ে জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ে বিএনপির সমাবেশসমূহে, আপনারা লক্ষ-লক্ষ মানুষ উপস্থিত হয়েছেন। প্রতিবার ঢাকার প্রতিটি মহাসমাবেশে ১০ লক্ষাধিক মানুষ যোগ দিয়েছেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রতিটি মহাসমাবেশে এমন ধারাবাহিক জনস্রোত অভূতপূর্ব। অতএব, সারাদেশে বিএনপির সর্বস্তরের নেতাকর্মী সমর্থক শুভার্থীরা বিশ্বাস করে রাষ্ট্রযন্ত্রের সর্বপ্রকার প্রতিবন্ধকতা পেরিয়েও বিএনপির প্রতিটি কর্মসূচিতে জনগণের যে স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি, তা একাধারে বিএনপির জনসম্পৃক্ততা এবং সাংগঠনিক সক্ষমতারই বহিঃপ্রকাশ।

তারেক রহমান বলেন, বিশ্বের সমসাময়িক ইতিহাসে বিএনপির মতো আর একটি রাজনৈতিক দল কি কোথাও আছে যে দলের ৫০ লাখেরও বেশি নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলা দায়ের করা হয়েছে? কোন অপরাধে গত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট হাসিনার লেলিয়ে দেয়া খুনি বাহিনী বিএনপির প্রায় তিন হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে? কেন ৭ শতাধিক মানুষকে গুম করা হয়েছে? কি কারণে  ‘মাদার অফ ডেমোক্রেসি’ বেগম খালেদা খালেদা জিয়াকে অন্যায়ভাবে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে? একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে কেন উন্নত চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত করে রাখা হয়েছে? বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কেন একের পর এক সাজানো কিংবা গায়েবি মামলায় ফরমায়েশি রায় দেওয়া হচ্ছে?

বিএনপি নেতা বলেন, গত ২৮ অক্টোবর হিটলারি কায়দায় একটি নাটক সাজিয়ে ফ্যাসিস্ট হাসিনা বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ দলের বিভিন্ন স্তরের ২৭ হাজারেরও বেশি নেতা-কর্মীকে পরিকল্পিতভাবে গ্রেপ্তার করে এখনো কেন কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে? শুধু বিএনপির রাজনীতিতে জড়িত থাকার কারণে কেন গত দুইমাসে কমপক্ষে ১২ জনকে কারাগারে হত্যা করা হয়েছে? এই প্রতিটি প্রশ্নের উত্তরেই নিহিত দেশের বৃহত্তম ও জনপ্রিয়তম রাজনৈতিক দল হিসেবে গণতন্ত্রের পক্ষের প্রধান শক্তি হিসেবে বিএনপির আত্নত্যাগের সাহসী ইতিহাস। জনগণের দল হিসেবে এখানেই বিএনপির রাজনৈতিক স্বার্থকতা।

তারেক রহমান বলেন, এই যে এতো আক্রোশ, এতো আক্রমণ, এতো অত্যাচার, এতো কিছু করে বিএনপিকে জনগণের কাছ থেকে দূরে সরানো যায়নি। জনগণও  বিএনপিকে ছেড়ে যায়নি। এভাবেই বিএনপির গণসম্পৃক্ততার কাছে পরাজিত আওয়ামী লীগ। আর এখানেই বিজয়ী বিএনপি। নিপীড়ন চালিয়ে বিএনপির মতো একটি জনপ্রিয় গণতান্ত্রিক বিরোধী দলকে দমন করা সম্ভব? সম্ভব নয়। তাই  ক্ষমতার মোহে অন্ধ আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক চরিত্র হারিয়ে একদিকে দানবীয় শক্তিতে বিএনপিসহ সকল বিরোধী ও ভিন্ন দল ও মতের মানুষের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।  

তিনি আরো বলেন, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশের আওয়ামী দুঃশাসনের ধারাবাহিকতায় এখনো ফ্যাসিস্ট হাসিনার সরকার দেশে লাগামহীন নৈরাজ্য ও লুটপাটে সরাসরি পৃষ্ঠপোষকতা করছে। বিভিন্ন দেশের রাস্তা নির্মাণের ব্যয় তুলনা করে বিশ্বব্যাংক দেখিয়েছে, বাংলাদেশে প্রতি কিলোমিটার রাস্তা নির্মাণ করতে খরচ পড়ে ১১ মিলিয়ন ডলার, যা কিনা পৃথিবীতে সর্বোচ্চ। শুধু রাস্তা নয় প্রতিটি খাতেই অস্বাভাবিক এবং অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ে বিশ্বের যে কোনো দেশের চেয়ে বাংলাদেশ শীর্ষে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্ট বলছে, ৩৬ হাজার কোটি টাকার মাতারবাড়ী কয়লাবিদ্যুৎ প্রকল্প পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র।  পায়রায় ১ লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার যে সমুদ্রবন্দর হচ্ছে, এটি এ যাবৎকালে সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল সমুদ্রবন্দর। রূপপুরের ১ লাখ ১৪ হাজার কোটি টাকায় যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, এটিও পৃথিবীর সর্বোচ্চ ব্যয়বহুল পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র। একইভাবে, সাড়ে ৩৩ হাজার কোটি টাকার মেট্রোরেল প্রজেক্ট, এই মেট্রোরেল প্রতি কিলোমিটার হিসেবে বিশ্বের সবচেয়ে ব্যয়বহুল। শুধু তাই না, প্রায় সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকার বিমানবন্দর-গাজীপুর র্যাপিড বাস ট্রান্সপোর্ট প্রকল্পটি পৃথিবীর সবচেয়ে ব্যয়বহুল বিআরটি লাইন। অর্থাৎ, মেগা প্রজেক্টের নামে দেশে চলছে হাসিনা ও তার পরিবার এবং আওয়ামী মাফিয়া চক্রের মেগা দুর্নীতি।   

তারেক রহমান বলেন, গত ১৫ বছরে দেশ থেকে ১৩ লক্ষ কোটি টাকার বেশি বিদেশে পাচার করে দেয়া হয়েছে। দেশের টাকা পাচারকারী চক্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক হাসিনা আজ পর্যন্ত  বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ ফান্ড থেকে আট শ ১০ কোটি টাকা লোপাটের তথ্য জনগণকে জানায়নি।

তিনি আরো বলেন, দেশের প্রায় সকল ব্যাঙ্ক দেউলিয়া অবস্থা। ব্যাংকিং সেক্টরের খেলাপি ঋণের পরিমাণ ১ লাখ ৫৬ হাজার কোটি টাকারও বেশি। পুনতফসিল করা ঋণের স্থিতির চিত্র আরো ভয়াবহ। প্রায় ২ লক্ষ ৫০ হাজার কোটি টাকা। এমন বেপরোয়া দুর্নীতি, বিশৃঙ্খলা ও সমন্বয়হীনতায় যে তীব্র তারল্যের সংকট সৃষ্টি হয়েছে, এতে ব্যাংকগুলোতে বর্তমানে শুধু ডলার নয়, টাকার সংকটেও ভুগছে। বাজার ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতায় ও আওয়ামী সিন্ডিকেটের কারণে প্রতিটি দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিতে নাভিশ্বাস উঠছে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের। আয় না বাড়লেও, লাগামহীনভাবে বাড়ছে ব্যয়। বেড়েই চলেছে প্রতিটি পণ্যের দাম। একের পর এক রেকর্ড গড়ে, কখনো চালের দাম কেজি প্রতি ৭০ টাকা, মসুর ডাল ১৫০ টাকা, কখনো কাঁচা মরিচের কেজি ১ হাজার টাকা, পেঁয়াজের কেজি ৩ শ টাকা/ কখনো আদা প্রতি কেজি ৫ শ টাকা, এলাচ ৬ হাজার টাকা, আবার কখনো গরুর মাংস প্রতি কেজি ৯ শ টাকা, খাসির মাংস ১৩ শ  টাকা। সরকারি হিসেবেই, বর্তমানে দেশে প্রায় ৪১ শতাংশ তরুণ, অর্থাৎ প্রায় ১ কোটি ২৯ লক্ষ তরুণ বেকার। বাস্তবতাবিবর্জিত এবং বিতর্কিত শিক্ষা ব্যবস্থা বাড়িয়ে চলছে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা।  আর বিদেশিরা এসে দখল করছে বাংলাদেশের চাকরির বাজার। দেশের স্বাস্থ্যখাত নিজেই এতো অসুস্থ যে এর ভয়াবহ অব্যবস্থাপনায় হাসপাতালের বেহাল দশায়, ও জীর্ণ মেডিকেল যন্ত্রপাতির কারণে, সর্বজনীন আস্থাহীনতা বিরাজমান। ফলে জীবন বাঁচাতে, সুচিকিৎসা পেতে, বছরে ৫ লক্ষেরও বেশি মানুষ চিকিৎসার জন্য বাধ্য হয়ে বিদেশ যাচ্ছে।

সবশেষে তারেক রহমান বলেন, এখন দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বই হুমকির সম্মুখীন। অরক্ষিত দেশের সীমান্ত। বিজিবিকে হত্যা করলেও প্রতিবাদ করার সাহস হারিয়ে ফেলেছে বাংলাদেশ। ৫ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাতে ফেনীর ছাগলনাইয়ার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে ২৩ বাংলাদেশি নাগরিককে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বাংলাদশের প্রতিবাদ করার সাহস নেই। সুতরাং, দেশ এবং জনগণের জনগণের স্বাধীনতা রক্ষায়, স্বাধীনতাপ্রিয় জনগণের ক্ষোভকে প্রতিবাদের ভাষায় পরিণত করতে হবে। বিশ্বাস রাখুন আপনারা ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুললে পাঁচ বছর দূরে থাক, জনসমর্থনহীন এ সরকার হয়তো পাঁচ মাসও টিকবে না…টিকতে পারবে না ইনশাআল্লাহ। 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!