DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনে ৪ জনের মৃত্যু

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ রাজধানীর কমলাপুর স্টেশনের অদূরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় চার জনের মৃত্যু হয়েছে।

আগুনে পুড়ে গেছে ট্রেনটির চারটি বগি। গতকাল রাত নয়টার দিকে ট্রেনে আগুনের তথ্য পায় ফায়ার সার্ভিস। বেনাপোল থেকে ছেড়ে আসা ট্রেনটি কমলাপুর স্টেশনে পৌঁছার ঠিক আগ মুহূর্তে গোপীবাগে যাত্রীরা আগুন দেখতে পান।

এরপর আশপাশের মানুষের চিৎকার শুনে চালক ট্রেন থামান। তখন ভয়ার্ত যাত্রীরা যে যার মতো নেমে যাওয়ার চেষ্টা করেন। ট্রেন থামার অন্তত আধা ঘণ্টা পর ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ঘটনাস্থলে যান।

দেড় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণের পর চার জনের লাশ উদ্ধারের তথ্য জানায় ফায়ার সার্ভিস। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগার পর ট্রেনটি থামলে স্থানীয়রা নানাভাবে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। তারা ভেতরের যাত্রীদের বাইরে আনারও চেষ্টা চালান।

স্থানীয়দের করা ভিডিওতে দেখা যায় দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল। এসময় এক যাত্রী জানালা দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। তাকে বের করতে চেষ্টা করছিলেন স্থানীয়রা। কিন্তু জানালার কাঁচ আটকে যাওয়ায় তিনি বের হতে পারেননি। বের করাও যায়নি। এ অবস্থায় শ শ মানুষের সামনেই আগুনে পুড়ে মারা যান এই ব্যক্তি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৪ জনের মধ্যে দু’জন শিশু রয়েছে বলে জানিয়েছেন উদ্ধারকারীরা। প্রাথমিকভাবে নিহত যাত্রীদের নাম পরিচয় জানা যায়নি। এ ঘটনায় দগ্ধ একজন যাত্রী চিকিৎসার জন্য শেখ হাসিনা বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি হয়েছেন।

ঢাকা মহানগর পুলিশের ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার ইকবাল হোসেন মানবজমিনকে বলেন, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনায় এখন পর্যন্ত চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তবে তাদের পরিচয় জানা যায়নি।

অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। আগামী তিন দিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বেনাপোল থেকে যাত্রীবাহী ট্রেনটি তার শেষ গন্তব্য কমলাপুরের একটু দূরে ছিল। রাত আনুমানিক ৯ টার দিকে ‘চ’ বগিতে আগুনের সূত্রপাত হয়। পরে নিমিষেই ‘ছ’ বগিসহ পাওয়ার কারের বগিতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে।

রেললাইনের পাশ দিয়ে চলাচলরত পথচারীরা চালককে সিগন্যাল দিলে চালক ট্রেন থামান। ঘটনার আধা ঘন্টা পরে ফায়ার সার্ভিস গিয়ে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ শুরু করে। ততক্ষণে আগুনের ভয়াবহতা ছড়িয়ে পড়ে।  আগুন লাগা বগির ভেতর থেকে চিৎকার করে বাঁচার আকুতি করছিলেন যাত্রীরা। ট্রেন থামার পর পথচারীদের সহযোগিতায় যাত্রীরা নেমে আসেন।

প্রত্যক্ষদর্শী পথচারী আহমেদ বলেন, আমি রেললাইনের পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। ট্রেনে পুরোপুরি গতিও ছিল না। তখন হঠাৎ একটি বগিতে আগুন দেখতে পাই।  মানুষ ট্রেনের জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে চিৎকার করছিল। তখন আমার মত আরও অনেকে সেখানে জড়ো হয়। আমরা আশপাশ থেকে যতটুকু পানি আনতে পেরেছি সেটুকু দিয়ে চেষ্টা করেছি আগুন নেভাতে। আরেক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, আগুন লাগার অনেক পরে ফায়ার সার্ভিস এসেছে। যদি আরও আগে আসতো তবে এত ক্ষতি ও প্রাণহানি হতো না।

প্রত্যক্ষদর্শী ফারুক বলেন, এলাকাবাসী সবাই মিলে অনেক চেষ্টা করেছি, কিন্তু তাদেরকে উদ্ধার করতে পারিনি। একজন ব্যক্তি জানালা দিয়ে ঝুলে ছিল। আমরা অনেক টানাটানি করেছি কিন্তু তাকে বের করতে পারিনি। পরে জানালায়ই তিনি মারা গেছেন।

ভিডিওতে দেখা যায় ট্রেনে আগুন লাগার সময় জানালা দিয়ে ওই যাত্রী বের হওয়ার চেষ্টা করছিলেন। হাত বাড়িয়েছিলেন সাহায্যের জন্য, বের হতে পারেননি। তার অর্ধেক শরীর ট্রেনের জানালার বাইরের, অর্ধেকটা ভেতরে ছিল।

ওই ব্যক্তিকে জানালা থেকে টেনে বের করার চেষ্টা করেছেন অনেকে। তাকে উদ্ধার করতে যাওয়া একজন তার শরীরে স্পর্শ করতে গিয়ে আগুনে আহত হন। এরপর অনেকে বাঁশ দিয়ে তাকে বের করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সবার সামনে পুড়ে মৃত্যু হয়েছে তার।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, ট্রেনটির ‘চ’ বগির একটি সিটে প্রথমে আগুন লাগে। প্রাথমিক পর্যায়ে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন যাত্রীরা। পরে আগুন ছড়িয়ে পড়লে যাত্রীরা প্রত্যক্ষদর্শীদের সহায়তায় নিচে নেমে আসেন।

স্থানীয় আরেক এলাকাবাসী বলেন, ট্রেনটি চলতি অবস্থাতেই আগুন লেগে এখানে আসে। ট্রেনটি দাঁড়ানোর সাথে সাথেই স্থানীয় লোকজন ছুটে আসে। পার্শ্ববর্তী বাড়িগুলো থেকে যে যেভাবে পেরেছে পানি দিয়ে সহযোগিতা করেছে।

ট্রেনের যাত্রী আতিয়ার জানান, ‘চ’ বগির পাশে একটি পাওয়ার কার রুম ছিল। সেখান থেকেই আগুনের সূত্রপাত হতে পারে।

তিনি বলেন, আমি ছেলে ও নাতীসহ ‘জ’ বগি থেকে লাফ দিয়েছিলাম। আমাদের দুটি লাগেজ ট্রেনের ভেতরেই রেখে আসতে হয়েছে।

চুয়াডাঙ্গার দর্শনা থেকে স্ত্রী ও দুই সন্তানকে নিয়ে আসছিলেন আশরাফুল হক। তারা ‘ছ’ বগিতে ছিলেন। ৯ই জানুয়ারি আশরাফুলের দুবাই যাওয়ার কথা রয়েছে। তিনি বলেন, ট্রেন থামার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি তার তিন বছরের মেয়েকে ট্রেনের বাইরে একজনের দিকে ছুড়ে দেন।  এরপর তিনজন ট্রেন থেকে ঝাঁপ দেন। আশরাফুল বলেন, আমার পাসপোর্ট, নগদ ৫০ হাজার টাকা এবং লাগেজ ট্রেনের ভেতরেই ছিল। আমার চোখের সামনেই সেগুলো পুড়ে গেছে।

ওদিকে বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের ঘটনাকে নাশকতা বলে দাবি করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশনস) খ. মহিদ উদ্দিন। তিনি বলেছেন, পরিকল্পিতভাবে ট্রেনটিতে আগুন দেয়া হয়েছে।

ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে রাত সাড়ে ১১টার দিকে পুলিশ কর্মকর্তা মহিদ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, যাত্রীবেশে ট্রেনে উঠে আগুন দেয়া হয়েছে। যারা সাধারণ মানুষ, নারী ও শিশুর বিরুদ্ধে এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

এর আগে গত ১৯শে ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও স্টেশনে মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। আগুনে ট্রেনটির তিনটি বগি পুরোপুরি পুড়ে যায়। একটি বগি থেকে মা ও শিশুসহ চারজনের লাশ উদ্ধার করা হয়।  মোহনগঞ্জ ট্রেনটি এর আগে গাজীপুরে দুর্ঘটনায় পড়েছিল। দুর্বৃত্তরা লাইন কেটে রাখায় ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে ১ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!