DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জনগণ ভোট দিতে পারলেই সেটা হয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনঃশেখ হাসিনা

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন বলতে তিনি জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণকেই বোঝেন বলে জানিয়েছেন মিডনাইট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, জনগণ নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিলে সেটিই হয় অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। বিগত কয়েকটি নির্বাচনে জনগণ ভালো পরিবেশে ভোট দিয়েছে, আগামীতে ভালোভাবে ভোট দিতে পারবে। জনগণ যাকে ভোট দেবে তারাই ক্ষমতায় আসবে, এটাই বিশ্বাস করি।

গতকাল প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে দক্ষিণ আফ্রিকা সফর সম্পর্কে অবহিত করতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর দুই পাশে দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সংসদ উপনেতা বেগম মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী শুরুতে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের বিষয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন। পরে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন। 

 

অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণটা কার? ভোট চোরদের, ভোট ডাকাতদের, খুনি, জাতির পিতার হত্যাকারী, ২১শে আগস্টের হামলাকারীদের? এদেরকে মানুষ চায়? এদের প্রতি তো মানুষের ঘৃণা আছে। ২০০৮ সালে প্রমাণ হয়েছে। আমার কাছে অংশগ্রহণ বলতে জনগণের অংশগ্রহণ।

সেটা থাকবে। জনগণ এরই মধ্যে সব নির্বাচনে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিদেশে যখন গেলাম, যার সঙ্গে দেখা হয়েছে, বলেন কী করে বাংলাদেশ এত উন্নতি করলো? আর দেশের এরা এটা বলে না। তারা পরশ্রীকাতরতায় ভোগে। আমি ওটা নিয়ে চিন্তা করি না। যতক্ষণ আছি, দেশের জন্য কাজ করে যাবো। বিএনপি’র দিকে ইঙ্গিত করে সরকার প্রধান বলেন, এই দলটি ক্ষমতায় গেলে দুর্নীতি করে কিছু টাকা যাবে গুলশানে, কিছু যাবে হাওয়া ভবনে, বাকিটা যাবে লন্ডনে। নিজেরা নিজেরা মারামারি করবে, দুর্নীতি করতে করতে এক সময় তারা বলবে আমরা পারবো না। সেই দলকে জনগণ ভোট দেবে?

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এত উন্নয়নের পর জনগণকে এখন সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কী চায়? মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছি, খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, কোনো খাদ্য ঘাটতি নেই। যা কিছু করেছি, সব তো জনগণের কাজে লাগছে। সবই তো জনগণ ভোগ করছে। মেট্রোরেল করতে গিয়ে আমাদের নানা কথা শুনতে হয়েছে। সব জায়গায় কথা শুনতে হচ্ছে। আর উন্নয়ন করে সবার প্রশংসা পাবো, এটা আশা করিও না। আশা করাও ঠিক হবে না। যাদের এক সময় জনগণ প্রত্যাখ্যান করেছিল তারা তো এখন সমালোচনা করবেই। শেখ হাসিনা আরও বলেন, জনগণের জন্য কাজ করছি, জনগণের জন্য আছি, ১৪ বছরের মধ্যে দেশকে কোথায় নিয়ে এসেছি, সেটাও দেখতে হবে। টানা ক্ষমতায় থাকার কারণে দেশের দ্রুত একটা পরিবর্তন আনা সহজ হয়েছে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আছে বলেই এটা সম্ভব হয়েছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ সুদূরপ্রসারী প্ল্যান করে রাখে। যখনই ক্ষমতায় আসি সেগুলো নিয়ে কাজ করি। ডিজিটাল রূপকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। দেশে গরিব মানুষ একটাও থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কখনো পদের জন্য রাজনীতি করিনি। রাজনীতি করেছি দলের জন্য। স্কুলজীবন থেকে রাজনীতি করছি। তারপর কলেজ জীবন, ভার্সিটি সবখানেই রাজনীতি করেছি।

 

এখনই ব্রিকসের সদস্য হতে হবে, এমন চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল নাঃ
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘ব্রিকসে এখনই সদস্যপদ পেতে হবে, সে ধরনের কোনো চিন্তা আমাদের মাথায় ছিল না। সে রকম কোনো চেষ্টাও আমরা করিনি। সংবাদ সম্মেলনে ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের জেনারেল সেক্রেটারি শ্যামল দত্ত প্রশ্ন করেন, ‘ব্রিকসে বাংলাদেশের সদস্যপদ পাওয়ার বিষয়ে আমি জানতে চাই, যেহেতু এটা নিয়ে কিছু আলোচনা-সমালোচনা চলছে। আমরা কি আদৌ আবেদন করেছিলাম? বা আবেদন করার কোনো পদ্ধতি আছে কিনা, বা আমরা কি চেয়েছিলাম কিনা ব্রিকসের সদস্যপদ পাওয়ার জন্য। প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, চাইলে পাবো না, সে অবস্থাটা আর নেই। কিন্তু প্রত্যেক কাজের একটা পদ্ধতি আছে। একটা নিয়ম আছে। আমরা সেটা মেনেই চলি। তিনি বলেন, আমার সঙ্গে যখন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ হলো তিনি আমাকে বললেন যে, ব্রিকস সম্মেলন করবো। সে সময় তিনি জানালেন যে তারা কিছু সদস্য বাড়াবেন। আমাদের মতামত জানতে চাইলেন। আমি বললাম এটা খুবই ভালো হবে। ব্রিক্স যখন প্রতিষ্ঠিত হয় তখন থেকেই এই পাঁচ দেশের সরকার প্রধানের সঙ্গে আমার ভালো যোগাযোগ ছিল এবং আছে। ব্রিকসের ব্যাংক নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকে যোগদানের বিষয়ে বাংলাদেশ আগে থেকেই আগ্রহী ছিল উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা যখন শুনলাম নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক হবে, আমাদের ওটার ওপর বেশি আগ্রহটা ছিল। যখন থেকে তৈরি হয়, তখন থেকেই এই আগ্রহটা ছিল এর সঙ্গে যুক্ত হবো। সেখানে আমরা যুক্ত হতে চেয়েছিলাম। এটা যখন থেকে তৈরি হয়, তখন থেকে আমাদের এটার প্রতি আগ্রহ ছিল। সেটা হয়েছি।  প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, ব্রিকস থেকে প্রথম থেকেই আমাদের বলেছিল যে তারা ধাপে ধাপে সদস্য নেবে। তারা ভৌগোলিক অবস্থান বিবেচনা করে সদস্য নেবে এবং পর্যায়ক্রমে সদস্য সংখ্যা বাড়াবেন। তিনি বলেন, সেখানে আমার সঙ্গে সব রাষ্ট্র প্রধান, সরকার প্রধানের সঙ্গে দেখা হয়েছে। আমরা কিন্তু কাউকে বলতে যাইনি আমাদের এখনই মেম্বার করেন। আমরা জানি যে প্রথমে কয়েকটা দেশ হবে এবং এটা আমাকে প্রেসিডেন্ট লাঞ্চের সময় বলেছেন। সেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট এবং নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট ছিলেন। সে সময় আলোচনা হয় যে আমরা এই কয়জনকে নেবো। পরে ধাপে ধাপে আমরা সদস্য সংখ্যা বাড়াবো। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, এখন আমাদের অপজিশন থেকে খুব হতাশ যে আমরা সদস্যপদ পাইনি। বাংলাদেশ কিছু চেয়ে পাবে না এটা ঠিক না। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আমাদের যে মর্যাদা আমরা তুলে ধরেছি, সেখানে আমাদের সে সুযোগ আছে। তারা বলতে পারে কারণ বিএনপি’র আমলে ওটাই ছিল। বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের কোনো অবস্থানই ছিল না। বাংলাদেশ মানে ছিল দুর্ভিক্ষের দেশ, ঝড়ের দেশ, ভিক্ষার দেশ। হাত পেতে চলার দেশ। এখন সবাই জানে, বাংলাদেশ ভিক্ষা চাওয়ার দেশ নয়। 

 

আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবো তোঃ 
দেশে সিন্ডিকেট করে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কে কতো বড় শক্তিশালী আমি দেখবো। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এটা কোনো কথা নয়। কে কতো বড় শক্তিশালী আমি দেখবো। সিন্ডিকেট ভাঙা যাবে না এমন কিছু বাণিজ্যমন্ত্রী বললে তাকে আমি ধরবো। উৎপাদন বাড়িয়ে এবং বিকল্প ব্যবস্থা করে সিন্ডিকেট ভেঙে দেয়ার কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। 
সংবাদ সম্মেলনে যুগান্তর এর সম্পাদক সাইফুল আলম প্রশ্ন করেন যে, বাজারে সরবরাহ আছে, মজুত আছে, কোনো কিছুর অভাব নেই। তারপরও কিছু কিছু জিনিসের দাম মৌসুমী ব্যবসায়ীরা বাড়িয়ে দেয়, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বাড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। অথচ মন্ত্রীরা বলে যে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। সাইফুল আলম তার প্রশ্নে এটিও বলেন যে, একশ’ টাকা কেজি পিয়াজ হয়েছে, এখন ডাবের দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। মন্ত্রী বলেন যে, সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে সমস্যা হবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কে বলেছে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া যাবে না। উত্তরে যুগান্তর সম্পাদক বলেন যে, বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন এবং উপস্থিত সাংবাদিকরাও বলেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি বাণিজ্যমন্ত্রীকে ধরবো তো। কেন তিনি এই কথা বলেছেন। এ সময় নিত্যপণ্যের সিন্ডিকেট প্রতিরোধে পণ্য সরবরাহ ও সংরক্ষণে বিকল্প পদ্ধতি নেয়ার কথা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এক্ষেত্রে তিনি বাড়িতে শাক-সবজি উৎপাদন ও সেগুলো নিজেরাই সংরক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছুদিন আগে ডিমের দাম বাড়লো। ডিম সেদ্ধ করে রেখে দিলে দীর্ঘদিন সংরক্ষণ করা যায়। পরে (দাম বাড়লে) সেগুলো ভর্তা করে বা রান্না করে খাওয়া যায়। দেশের বাজারে ডিমের দাম যখন কমবে, তখন ডিম সেদ্ধ করে ফ্রিজে রেখে দেবেন। তাহলে বহুদিন ভালো থাকবে।
সর্বজনীন পেনশন নিয়ে মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানো প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই টাকা নিয়ে ইলেকশন ফান্ড করতে হবে, আওয়ামী লীগ তো ওইরকম দৈন্যতায় পড়েনি। আওয়ামী লীগ হচ্ছে নিজের খেয়ে নৌকা। নিজের খেয়ে নৌকা, জনগণ নিজের খেয়েই কিন্তু নৌকায় ভোট দেয় এবং আওয়ামী লীগের জন্য কাজ করে। এটিই হলো বাস্তবতা। সরকারি অফিসাররা পেনশন পায় কিন্তু সাধারণ জনগণ কোনো পেনশন ব্যবস্থায় নেই। বৃদ্ধ বয়সে তাদের নিশ্চয়তা দেয়ার জন্যই এই সর্বজনীন পেনশনের কথাটা আমরা বলেছি। 

সরকার কোনো বিবৃতিতে প্রভাবিত হবে নাঃ 
আত্মবিশ্বাস থাকলে ড. ইউনূস আন্তর্জাতিক বিবৃতি ভিক্ষা করে বেড়াতেন না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, সরকার কোনো বিবৃতিতে প্রভাবিত হবে না। ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা আইন অনুযায়ী চলবে। 
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা বিবৃতি দিয়েছেন তাদের আহ্বান জানাই, বিবৃতি না দিয়ে বিশেষজ্ঞ পাঠান, আইনজীবী পাঠান। দলিল-দস্তাবেজ, কাজগপত্র ঘেঁটে দেখুন অন্যায় আছে কিনা। তিনি বলেন, কেউ যদি ট্যাক্স (কর) না দেয় আর যদি শ্রমিকের অর্থ আত্মসাৎ করে, শ্রমিকদের পক্ষ থেকে যদি মামলা করা হয়। আমাদের কী সেই হাত আছে যে মামলা বন্ধ করে দেবো প্রশ্ন করেন প্রধানমন্ত্রী। নোবেলজয়ী বলে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে না? এমন প্রশ্ন রেখে শেখ হাসিনা বলেন, পৃথিবীতে এমন বহু নোবেল বিজয়ী আছেন, পরবর্তী সময়ে তাদের কাজের জন্য কারাগারে আছেন (যেতে হয়েছে)। আদালত স্বাধীনভাবেই কাজ করবে। ন্যায়বিচার করবে। তারা প্রভাবিত হবে কেন? ভয় পেলে তো চলবে না। শ্রমিকদের পাওনা তাদের দিতে হবে। ১২শ’ কোটির বেশি পাওনা রয়েছে। ৪৬০ কোটি টাকা দিয়েছে। বাকিটা ঘুষ দিয়ে ব্যবস্থা করবে এটা তো হতে পারে না। তিনি বলেন, এখন যদি জিজ্ঞেস করি, গ্রামীণ ব্যাংক কিন্তু সরকারি (নিয়মে চলে)। তাহলে সরকারি বেতনভুক্ত একজন কীভাবে বিদেশে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেন? কীভাবে তিনি এগুলো করেন?

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!