DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙতে টাকা পেয়েছেন রেজা কিবরিয়াঃনূরুল হক নূর

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গণ অধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নুর দাবি করেছেন,দলের আহবায়ক ড. রেজা কিবরিয়ার অপকর্ম প্রকাশ করার কারণে তার (নুর) বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘মূলত গণ অধিকার পরিষদে রেজা কিবরিয়ার কোনো অবস্থান নেই। উল্টোদিকে আমার অবস্থান শক্ত। নেতাকর্মীরা আমার অনুগত, আমার কথাবার্তা তারা শোনে।’

মঙ্গলবার (২০ জুন) সন্ধ্যার পর গনমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে নুরুল হক নুর এসব কথা বলেন। গত দুদিন ধরে গণ অধিকার পরিষদের আহ্বায়ক রেজা কিবরিয়া ও সদস্য সচিব নুরুল হক নুরের মধ্যকার চরম বিরোধ প্রকাশ্যে আসে।

গণমাধ্যমে রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ—‘নুরুল হক ইসরায়েলি গোয়েন্দার সঙ্গে সম্পর্ক করে অর্থ আদায় করেছেন। দলের অর্থ নিজের আয়ত্তে রেখেছেন। দেশের বাইরে ব্যবসা করছেন নুরুল হক নুর।’ এর প্রতিক্রিয়ায় রবিবার ও সোমবার কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক করে অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়াকে সরিয়ে দলের এক নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক মো. রাশেদ খাঁনকে ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক হিসেবে দায়িত্ব দিয়েছে গণ অধিকার পরিষদ।

তরুণদের প্রাধান্যে সৃষ্ট গণ অধিকার পরিষদ গঠনের সময় জ্যেষ্ঠ ব্যক্তি হিসেবে রেজা কিবরিয়াকে দলের আহ্বায়ক করেছিলেন নুরুল হক নুর ও তার অনুসারীরা। তাকে দল থেকে বাদ দেওয়ায় দলের সাংগঠনিক শক্তি কমবে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক নুর বলেন, ‘সাংগঠনিক শক্তিক্ষয়ের আশঙ্কা করছি না। একটা বিভ্রান্তি তৈরি হবে, যারা তাকে কাছ থেকে দেখেননি, তাদের জন্য। কারণ, যারা দূর থেকে তাকে দেখেছেন—সবাই তার সম্পর্কে উচ্চ ধারণা পোষণ করেন। আমরাও তাকে উচ্চ ধারণা থেকে এনেছিলাম। কিন্তু তাকে কাজ করতে দেখিনি। উনি বাইরে ফিটফাট। এই যে স্যাংশন নিয়েও বলেছিলেন, আরও স্যাংশন আসবে, কিন্তু বাস্তবে তা ঘটেনি। ওনার কথা ও কাজে কোনও মিল নেই।’

২০২১ সালের ২৬ অক্টোবর অর্থনীতিবিদ ড. রেজা কিবরিয়া ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে আত্মপ্রকাশ ঘটে বাংলাদেশ গণ অধিকার পরিষদের। আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পর ছয় মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি করার বিষয়ে গঠনতন্ত্রের নীতিমালা থাকলেও তা করা হয়নি।

দলের প্রথম কাউন্সিল তাহলে কবে করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে নুরুল হক বলেন, ‘আমরা আগামী জুলাইয়েই কাউন্সিল করার চিন্তা-ভাবনা করছি। গঠনতন্ত্রেও বিধি রয়েছে। আমরা দ্রুততম সময়ে কাউন্সিল করবো। এই কাউন্সিল প্রথম ছয় মাসে করার কথা থাকলেও ওনার (রেজা কিবরিয়া) কারণে তা হয়নি।’

 কিন্তু রেজা কিবরিয়ার অভিযোগ—দলকে আপনি নিজের আওতায় রাখতে চেয়েছেন সবসময়, অর্থ সংগ্রহ করেছেন ব্যক্তিগতভাবে? এ প্রসঙ্গে নুরুল হক নুরের জবাব, ‘ড. রেজা কিবরিয়ার অপকর্ম প্রকাশ করার কারণে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করা হয়েছে। কাতার সফর তো কত আগের, গত বছরের ডিসেম্বরের। তো এতদিন আমাদের দলের এত মিটিং হলো, বৈঠক হলো, উনি তো এসব কিছু বলেননি। তিনি কেন ওই সময়ই মিটিং ডেকে সদস্য সচিবকে বহিষ্কার করেননি, কারণ দর্শানোর নোটিশ করেননি? মূলত ইসরায়েলি গোয়েন্দার সঙ্গে যে অপপ্রচার, সেটা আওয়ামী লীগের সাইবার সেলের। উনি অভিযোগ করার কারণ হচ্ছে—আমি তার রাজনৈতিক অবস্থান ও প্রসেস নিয়ে প্রশ্ন তুলেছি। তিনি বিএনপিকে ভেঙে প্রধানমন্ত্রী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।’

নুর বলেন, ‘বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার এজেন্ট পরিচয়ে বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় মাসুদ করিম ও এনায়েত করিমের বিএনপি ভাঙার প্রক্রিয়ার সঙ্গে উনি যুক্ত। তিনিসহ আরও কয়েকজন দেশের বাইরে এই নিয়তে মিটিংও করেছেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উকিল আব্দুস সাত্তার মডেলে আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে কথিত সরকারবিরোধী প্রোগ্রামের নামে ব্যাংকক, কাঠমান্ডুতে একাধিকবার মিটিংয়ে অংশ নেওয়া এবং দেশে এসে মনোনয়ন বিক্রি ও বিএনপির বহিষ্কৃত নেতা শওকত মাহমুদের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ এবং সর্বশেষ ইনসাফ কায়েম কমিটি প্রোগ্রামে অংশ নেওয়ার বিষয়ে রবিবার রেজা কিবরিয়ার বাসায় জরুরি মিটিংয়ে এসব জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু তিনি কোনও উত্তর না দিয়েই মিটিং ত্যাগ করেন। এরপরই তিনি একাধিক গণমাধ্যমে আমার বিরুদ্ধে বক্তব্য দিয়েছেন।’

গণ অধিকার পরিষদের নেতা নুরুল হক নুর দাবি করেন, রেজা কিবরিয়া মূলত গোয়েন্দাদের পরামর্শে বিএনপিকে ভেঙে নির্বাচনে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী হতে চান। আগামী নির্বাচনের আগে বিএনপিকে ভাঙতে তাকে প্রতিমাসে বড় অঙ্কের টাকা দেওয়া হয়। যেন তাদের আইডিয়া দেশে তিনি বাস্তবায়ন করেন। শওকত মাহমুদ এসবের কারিগর, বিএনপি তাকে বাদ দিয়েছে। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে আরও অনেকে যুক্ত ছিল। এখন কেবল শওকত মাহমুদ ও রেজা কিবরিয়া। সর্বশেষ তারা ফরহাদ মজহারকে যুক্ত করেছে। তারা হাজার হাজার লোকের অংশগ্রহণে সম্প্রতি সমাবেশ করেছে। আমরা তো রাজনৈতিক দল, আমরা তো পারি না, ওরা কীভাবে করে?

আপনি একজন দায়িত্বশীল রাজনীতিক হিসেবে বিষয়টি  প্রকাশ্যে এনেছেন। বিএনপির পক্ষ থেকে কি এ বিষয়ে জানতে চেয়েছে, আপনার সঙ্গে যোগাযোগ করেছে? জবাবে নুর বলেন, ‘বিএনপির সর্বোচ্চ নেতাদের জায়গা থেকে পরিষ্কার হতে চেয়েছে। আমরা জানিয়েছি, এসব প্রক্রিয়ার সঙ্গে গণ অধিকার পরিষদের কোনও যুক্ততা নেই। আমরা বলেছি, আমাদের সঙ্গে দুয়েকবার কথা হলেও আমরা প্রক্রিয়াটিতে যুক্ত হইনি। রেজা কিবরিয়া মাসোহারা পান, উনি যুক্ত আছেন। এ কারণে বিএনপির মধ্যেও অস্বস্তি ছিল। শুধু তাই নয়, গণতন্ত্র মঞ্চ থেকে বেরিয়ে আসার কারণও রেজা কিবরিয়া।’

কীভাবে? উত্তরে নুরুল হক নুর বলেন, ‘‘রেজা কিবরিয়া আমাদের বলতেন, ‘গণতন্ত্র মঞ্চে কেন যাবো। আমরা তো বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার কাজ করি না।’ কিন্তু ইনসাফ কায়েম কমিটির প্রোগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা নিশ্চিত হলাম, উনি মূলত বিএনপি ভাঙতে চান।’’

রেজা কিবরিয়া দলের আহ্বায়ক হিসেবে নির্বাচন কমিশনে প্রাধান্য পাবেন কিনা, এমন প্রসঙ্গে নুরুল হক বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনে আমাদের আবেদনে বলাই ছিল—আমরা কাউন্সিল করে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করবো। তিনি তো আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে বিভোর। সেক্ষেত্রে নিবন্ধন প্রক্রিয়ার তৎপরতা তিনি চালাতে পারেন। তবে আমাদের দলের কোনও সমস্যা হবে না। দল যে সিদ্ধান্ত নেবে, নির্বাচন কমিশন সেই সিদ্ধান্তই মানবে।’

দল গঠনের শুরুতে আপনারা বলেছিলেন—তরুণনির্ভর দলে সিনিয়র একজনকে যুক্ত করার জন্য রেজা কিবরিয়াকে গণ অধিকার পরিষদের যুক্ত করা হয়েছিল। সেক্ষেত্রে আবারও কি বাইরে থেকে কাউকে এনে দলের প্রধান করবেন? এ প্রশ্নে দলের সদস্য সচিব নুরুল হক বলেন, ‘এখন আমাদের অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে। এক গাছের ছাল আরেক গাছে লাগে না। আমরা কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচন করবো।’

গত দুই দিন ধরে চলমান ঘটনা নিয়ে রেজা কিবরিয়ার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। গণ অধিকার পরিষদের (রেজা কিবরিয়া) দফতর উপকমিটির সহ-সমন্বয়ক শাহাবুদ্দিন শুভ  জানান, রেজা কিবরিয়া দেশের বাইরে আছেন।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!