DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

র‍্যাবের উপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে ‘ল’ ফার্ম নিয়োগে কাজ হবে কি?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ মুখে বড় বড় কথা বললেও বাংলাদেশের হাসিনা সরকার এখন এলিট ফোর্স র‌্যাব এবং এর সাতজন শীর্ষ কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়কেই সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

সেজন্য বিভিন্ন কৌশল নেয়ার কথা বলছে সরকার। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একদিকে যুক্তরাষ্ট্রে ল ফার্ম নিয়োগ করা হচ্ছে, অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা শুরুর চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

র‌্যাব এবং এর বর্তমান ও সাবেক সাতজন কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের কাজে জড়িত থাকার অভিযোগে। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, এ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আইনগত যে প্রক্রিয়া আছে, সে অনুযায়ী এগুতেই যুক্তরাষ্ট্রে ল ফার্ম নিয়োগ করা হচ্ছে। কিন্তু এ নিষেধাজ্ঞা ল’ফার্ম প্রত্যাহার করাতে পারবে কী- এই প্রশ্নে রয়েছে নানা আলোচনা

মিডনাইট হাসিনা সরকারের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, র‌্যাব এবং এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আইনগত যে প্রক্রিয়া আছে, তারা সেই প্রক্রিয়ায় এগুতে চাইছেন। সেজন্যই ল ফার্ম নিয়োগ করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে এরইমধ্যে। সেই বৈঠকেও ল ফার্ম নিয়োগের ব্যাপারে মন্ত্রণালয় থেকে একই বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছে।

কিন্তু ল ফার্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার আসলে কী করতে চাইছে এবং আইনগত প্রক্রিয়ায় এগুনোর যে কথা বলা হচ্ছে- সেটা কি আইনী লড়াই? এসব প্রশ্নে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে বিস্তারিত কিছু বলা হচ্ছে না।


পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল ফারুক খান বলেছেন, নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আইনগতভাবে বাংলাদেশ কী করতে পারে- সে ব্যাপারে ল ফার্ম নিয়োগের পর তাদের সাথে আলোচনা করে ঠিক করা হবে। এমনটাই তাদের সংসদীয় কমিটির বৈঠকে মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ইতিমধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে ল ফার্ম নিয়োগের প্রক্রিয়া শুরু করেছে।

যদিও পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য তাদের বিভিন্ন পদক্ষেপের মধ্যে ল ফার্ম নিয়োগের বিষয়টি অন্যতম। একইসাথে তিনি বলে আসছেন, অল্প সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করানো যাবে- এটা বলা যায় না। তবে যুক্তরাষ্ট্রের ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, নিষেধাজ্ঞার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রের কোনো ল ফার্ম বা কোনো উকিল বড় কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না।

‘যদিও যুক্তরাষ্ট্রের আইনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত হয়েছে। কিন্তু আইনগতভাবে এটি মোকাবেলা করা কোনো সরকারের পক্ষেই সম্ভব নয়’ বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।
এর কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে অভিযোগ যেগুলো উঠেছে, সেগুলোর ব্যাপারে ব্যবস্থা নিয়ে কূটনৈতিকভাবে যদি যুক্তরাষ্ট্রকে আশ্বস্ত করা যায়, তাহলে তা বড় প্রভাব ফেলতে পারে।

ল ফার্ম তাহলে কী করতে পারে : অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র তাদের কোন কোন আইনের ভিত্তিতে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, ল ফার্মের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকার হয়তো সেটা খতিয়ে দেখতে চাইছে। তিনি বলেন, কোন ধরনের তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, ল ফার্ম সেই প্রমাণাদি চাইতে পারে।

‘অতীতে আমরা দেখেছি যে, যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি যখন এ ধরনের কোনো সিদ্ধান্ত নেয়, তাদের হাতে যথেষ্ট পরিমাণ তথ্য প্রমাণ থাকে’। ‘এসব প্রমাণ ল ফার্ম দেখতে চাইতে পারে। এ ধরনের অনুরোধ ল ফার্ম করতে পারে’ বলেন অধ্যাপক আলী রীয়াজ।

তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, তার জানামতে, ল ফার্ম এ ধরনের তথ্য দাবি করলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তা দিতে বাধ্য নয়।
কূটনৈতিকভাবে চাইতে পারে : পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, কোন কোন কারণে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে, সেসব কারণ জানতে চাওয়া হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। কূটনৈতিকভাবে সিদ্ধান্তের কারণ এবং তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করা সম্ভব বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

অধ্যাপক আলী রীয়াজ বলেছেন, কূটনৈতিকভাবে তথ্য প্রমাণ সংগ্রহ করার পর বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের ল ফার্মকে দিয়ে সেগুলোর আইনগত দিক বিশ্লেষণ করতে পারে। ‘তখন ল ফার্মের মাধ্যমে দেখতে পারে যে, যুক্তরাষ্ট্রে আইনে কোন ফাঁকফোকর আছে কিনা, যার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে আবেদন করতে পারে কিংবা যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের মনোযোগ আকর্ষণ করতে পারে’ বলেন অধ্যাপক রীয়াজ।

কূটনৈতিক চেষ্টা কতটা আছে : সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্য বলা হচ্ছে, কূটনৈতিক দিক থেকেও বাংলাদেশ জোর চেষ্টা চালাচ্ছে। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছেন, আগামী মার্চ মাস থেকেই বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যুতে অংশীদারিত্বের বৈঠকগুলো শুরু হবে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আমন্ত্রণে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এপ্রিলের প্রথম সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রে যাবেন।

তাদের আলোচনাসহ এখন দুই দেশের সব পর্যায়ের আলোচনাতেই র‌্যাব এবং এর এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি আলোচনায় অগ্রাধিকার পাবে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। তবে অধ্যাপক আলী রীয়াজ মনে করেন, শুধু আলোচনা করে লাভ হবে না। র‌্যাব এবং এর কর্মকর্তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের যে অভিযোগ আনা হয়েছে, সে ব্যাপারে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে সংস্কার এবং ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন।

যদিও নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে ল ফার্ম নিয়োগ এবং কূটনৈতিক তৎপরতা চালানোর কথা বলছে সরকার। তবে দ্রুত কোনো ফল পাওয়া সম্ভব নয় বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন।

অধ্যাপক রীয়াজ বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে যেমন অনেক সময় লাগে, তা পরিবর্তন করতেও তেমন দেরি হয়। অবশ্য সহসাই যুক্তরাষ্ট্রের সিদ্ধান্ত পাল্টানো সম্ভব না- এমন ধারণা বাংলাদেশ সরকারের মাঝেও রয়েছে।

সূত্র : বিবিসি বাংলা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!