DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সিইসি নুরুল হুদার নির্লজ্জ মিথ্যাচারে আমরা স্তম্বিতঃ সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ যৌক্তিক সমালোচনার যুৎসই জবাব না থাকলে সমালোচনাকারীর চরিত্র হননের হীন অপচেষ্টায় লিপ্ত হওয়া বহুল ব্যবহৃত একটি  অপকৌশলে লিপ্ত হয়েছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদা, এমনটি মনে করছে সুজন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সিইসি নূরুল হুদার এই নির্লজ্জ মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত।

আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১১টায় সুজন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নূরুল হুদার মিথ্যচারের প্রতিবাদ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলা হয়। সংবাদ সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সভাপতিত্ব করেন আয়োজক সংগঠনের সভাপতি এম হাফিজউদ্দিন খান।

লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ২৭ জানুয়ারি সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স ফোরাম ফর ইলেকশন অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (আরএফইডি) আয়োজিত 'আরএফইডি টক উইথ কে এম নুরুল হুদা' শীর্ষক অনুষ্ঠানে সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদারের বিরুদ্ধে ১ কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগসহ কিছু কুরুচিপূর্ণ, অশালীন, অসত্য বক্তব্য দিয়েছেন। দেশের মর্যাদাপূর্ণ একটি সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানের সর্বোচ্চ পদে বসে তাকে এমন মিথ্যাচার করতে দেখে আমরা হতবাক।

এতে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে ড. বদিউল আলম মজুমদারের ব্যক্তিগত আর্থিক লেনদেনের কোনো সম্পর্ক নেই এবং কোনোদিন ছিলও না। তিনি কমিশন থেকে কখনো কোনো কাজ নেননি, অসমাপ্ত রাখার তো কোনো প্রশ্নই আসে না। অর্থাৎ ড. মজুমদারের বিরুদ্ধে, সিইসির নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী কান কথার ভিত্তিতে উত্থাপিত, ১ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগ এবং কাজ নিয়ে কাজ না করার অভিযোগ সম্পূর্ণ বানোয়াট ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। তাই সিইসি হুদাকেই এসব অভিযোগের প্রমাণ দিতে হবে। একইসঙ্গে জবাব দিতে হবে: তার কাছে এ সম্পর্কে কোনোরূপ তথ্য থাকলে তিনি কেন তা প্রকাশ করলেন না? কেন অভিযোগটি  তদন্ত করলেন না? দুর্নীতি দমন কমিশনেই বা কেন তা পাঠালেন না?

২০১১ সালে অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় হলফনামায় বর্ণিত প্রার্থীদের তথ্য প্রকাশ ও ভোটারদের মধ্যে বিতরণ, পোস্টারিং এবং প্রার্থী-ভোটার মুখোমুখি অনুষ্ঠানের আয়োজনের কাজটি করার জন্য ড. শামসুল হুদা কমিশন ইউএনডিপির অর্থায়নে পরিচালিত এসইএমবি প্রকল্প থেকে সুজনকে ৯ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা দিয়েছিলেন। ২০১২ সালের  জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের সময় একই ধরনের কাজের জন্য সুজনকে ৩ লাখ দেয়। অর্থাৎ দুটি নির্বাচনে সর্বমোট ১২ লাখ ৫০ হাজার ৬০০ টাকা সুজন নির্বাচন কমিশন থেকে পায়। নির্বাচন দুটির জন্য নির্ধারিত কাজগুলো যথাযথভাবে সম্পন্ন করে যথাসময়ে কমিশনের কাছে বিল-ভাউচারসহ হিসাব-নিকাশ বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। এ সম্পর্কে কোনোরূপ অনিয়মের অভিযোগ ওঠা সম্পূর্ণ অমূলক, জানায় সুজন।

সিইসি হুদা আরও অভিযোগ করেছেন, ড. মজুমদার কমিশন থেকে কাজ না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়েছেন এবং এ লক্ষ্যে চাপ সৃষ্টি করতে অপ্রত্যাশিতভাবে অনেক লোক নিয়ে তার অফিসে হাজির হয়েছেন। তার এ মিথ্যাচারে আমরা স্থম্ভিত। নতুন কমিশন দায়িত্ব নেওয়ার পর স্বাভাবিক রীতি অনুযায়ীই সুজন নেতারা নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতে গিয়েছিলেন এবং তা পদ্ধতিগতভাবে অ্যাপয়েন্টমেন্ট করেই।

ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহের সেই আনুষ্ঠানিকতায় সুজন প্রতিনিধি দলে এম হাফিজউদ্দিন খান, ড. হামিদা হোসেন, প্রয়াত সৈয়দ আবুল মকসুদ, ড. তোফায়েল আহমদ, জাকির হোসেন, ড. বদিউল আলম মজুমদার, প্রকৌশলী মুসবাহ আলীম, দিলীপ কুমার সরকার, প্রয়াত সানজিদা হক বিপাশাসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। সাক্ষাৎকালে সুজনের কার্যক্রম এবং সুষ্ঠু নির্বাচন করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনের করণীয় সম্পর্কে মতবিনিময় করা হয়। সেই সভায় কিংবা পরবর্তীতে কখনো নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সুজনের ব্যবসায়িক কাজে জড়িত হওয়ার কোনা আলাপ হয়নি; কারণ সুজন কোনো ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত নয়।

এরপর ড. মজুমদারের সঙ্গে সিইসি নূরুল হুদার সঙ্গে আরও ২ বার সাক্ষাত হয়। একবার সাক্ষাত হয় ২০১৮ সালের নির্বাচনের  পর, যখন ড. মজুমদার নির্বাচনের কেন্দ্রভিত্তিক ফলাফলের তথ্য পাওয়ার জন্য আবেদন করেন, যদিও অতীতে নির্বাচন কমিশন এসব তথ্য স্বউদ্যোগে ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতো।

সাক্ষাৎকালে সিইসি হুদা অত্যন্ত অভদ্রভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানালে ড. মজুমদার তথ্য অধিকার আইনের অধীনে আবেদন করেন। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রভিত্তিক তথ্য নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। এই তথ্যের বিশ্লেষণ থেকেই ২১৩টি কেন্দ্রে শতভাগ ভোট পড়া, ৫৯০টি কেন্দ্রে প্রদত্ত  বৈধ ভোটের সবগুলো এক প্রতীকে পড়া, ১ হাজার ১৭৭টি কেন্দ্রে বিএনপি এবং ২টি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগের শূন্য ভোট পাওয়া ইত্যাদি চিত্র উঠে আসে। এসব অবিশ্বাস্য তথ্য জালিয়তির নির্বাচনেরই অকাট্য প্রমাণ, যা সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদার জাতির সামনে তুলে ধরে সিইসি নূরুল হুদা ও তার কমিশনকে অভিযুক্তের কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় লিখিত বক্তব্যে।

একটি বিতর্কিত নির্বাচনের অকাট্য কিছু প্রমাণ ও তথ্য প্রকাশ করায় সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর কে এম নুরুল হুদার ক্ষিপ্ত হওয়ার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। তা ছাড়া, ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে বৈশাখী টেলিভিশনের ৮ পর্বের একটি  প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ৪২ জন নাগরিক সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিল গঠন করে নূরুল হুদা কমিশনের বিরুদ্ধে গুরুতর অসদাচরণ ও দুর্নীতির অভিযোগ তদন্ত করার যে আবেদন করেন, তাতে ড. বদিউল আলম মজুমদারসহ সুজন-এর অনেক নেতারা ছিলেন স্বাক্ষরকারী। আর এ জন্যই সিইসি হুদার গাত্রদাহ এবং তার অপকর্ম ও পক্ষপাতদুষ্টতার কলঙ্ক আড়াল করতেই—যে কলঙ্ক বাংলাদেশের নির্বাচনী ব্যবস্থাকে অকার্যকর করে জনগণের ভোটাধিকার হরণ করেছে—তিনি আমাদের বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ তুলেছেন। এ কারণেও কে এম নুরুল হুদা সুজন ও ড. বদিউল আলম মজুমদারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে আমাদের ধারণা।

সিইসি হুদার সঙ্গে ড. মজুমদারের তৃতীয়বার বৈঠক হয় ২০১৮ সালের শেষ দিকে কলোম্বোতে অনুষ্ঠিত একটি আন্তর্জাতিক  সম্মেলনে, যে বৈঠকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আইনুল ইসলাম, বান্দরবানের ডনাই প্রু নেলী ও আরেকজন বেসরকারি  সংগঠন কর্মকর্তা উপস্থিত ছিলেন। সে বৈঠকে সেমিনারে আলোচ্য বিষয়গুলো কাজে লাগিয়ে এবং তা থেকে শিক্ষা নিয়ে আসন্ন  নির্বাচনকে সুষ্ঠু করার বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়। সিইসি হুদা সুজনের কাজ নিয়ে গুরুতর ও অত্যন্ত অশালীন প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেছেন, সুজন হলফনামার তথ্যের ভিত্তিতে আসনওয়ারী প্রার্থীদের তুলনামূলক চিত্র তৈরি করে যে গ্রন্থ প্রকাশ করেছে তা 'ঝালমুড়ির ঠোঙ্গা' বানানোর জন্যই ব্যবহৃত হতে পারে। এ ধরনের বক্তব্য সিইসি হুদার অজ্ঞতারই নিদর্শন বহন করে। তিনি হয়তো জানেন না যে, সুজন এবং আরও কিছু ব্যক্তি আদালতে অনেক লড়াই করে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা, অপরাধের খতিয়ান, আয়, সম্পদ ও দায়-দেনা ইত্যাদি তথ্য সম্পর্কে ভোটারদের জানার অধিকার প্রতিষ্ঠা করে, যাতে জনগণ জেনে-শুনে-বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

২০০৫ সালে আমাদের হাইকোর্ট নির্বাচন কমিশনকে এসব তথ্য প্রকাশের এবং প্রচারের নির্দেশ দেন। আদালতের অভিমতে এসব তথ্য ভোটাদের বাক স্বাধীনতার অংশ এবং এগুলো প্রকাশ না করলে নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য হবে না। সুজন ভোটারদের তথ্য দিয়ে ক্ষমতায়িত করার গুরুত্বপূর্ণ এই কাজটিই করছে। আদালতের নির্দেশ অমান্য করে নুরুল হুদা কমিশন এসব তথ্য ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছে না। এমনকি প্রচলিত বিধি-বিধান অমান্য করে প্রার্থীদের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করছে না। উদাহরণস্বরূপ, সম্প্রতি অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে কমিশন প্রার্থীদের আয়কর বিবরণী প্রকাশ করেনি। আমাদের জানা মতে, এমনকি গত নির্বাচন সম্পর্কে একটি প্রতিবেদনও এখন পর্যন্ত প্রকাশ করেনি। এসব অপারগতা সিইসি হুদার দায়িত্বে অবহেলারই নয়, জনগণের অধিকার ও আইন-আদালতের প্রতি তার শ্রদ্ধাশীলতার অভাবেরই প্রতিফলন বলে মনে করে সুজন।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, হলফনামার মাধ্যমে প্রার্থীদের তথ্য প্রদানের বাধ্যবাধকতা এখন আইনে অন্তর্ভুক্ত। আইনুযায়ী এসব তথ্য না দিলে কিংবা তথ্য গোপন করলে বা ভুল তথ্য দিলে প্রার্থীতা বাতিল হওয়ার কথা এবং তথ্য গোপন করে নির্বাচিত হলে নির্বাচনও বাতিল হওয়ার কথা। তাই নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব হলো হলফনামার তথ্যগুলো যাচাই-বাছাই করে দেখা, যাতে হলফনামা সত্যিকারার্থে 'আমলনামায়' পরিণত হয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত ব্যক্তিদেরকে নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখে, যা করতে নূরুল হুদা কমিশন সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এসব তথ্য প্রকাশ, প্রচার ও বিশ্লেষণের জন্য সুজনকে যেখানে বাহবা দেওয়ার কথা, তার পরিবর্তে সিইসি হুদা তার মন্তব্যে আমাদের কাজের প্রতি চরম তাচ্ছিল্য এবং সুজনের প্রতি অন্ধ বিদ্বেষ প্রদর্শন করেছেন। একইসঙ্গে প্রদর্শন করেছেন নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব সম্পর্কে তার এবং তার সহকর্মীদের সুস্পষ্ট ধারণার অভাব, যা এসব গুরুত্বপূর্ণ পদের জন্য তাদের অযোগ্যতারই পরিচায়ক।

সুজন আরও বলে, গত কিছু দিন ধরে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগের জন্য যোগ্যতা-অযোগ্যতার মাপকাঠি নিয়ে অনেক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সিইসি নূরুল হুদা ও তার সহকর্মীদের আচরণ আমাদেরকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে যে, এসব পদের জন্য শুধু নাগরিকত্ব, বয়স ও প্রশাসনিক অভিজ্ঞতাই যোগ্যতার গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি নয়, এগুলোর জন্য আরও বড় যোগ্যতা হলো সততা, সাহসিকতা, প্রজ্ঞা ও নিরপেক্ষতা তথা ব্যক্তির সুনাম। দুর্ভাগ্যবশত, নুরুল হুদা কমিশনের এসব গুরুত্বপূর্ণ যোগ্যতার ঘাটতির মাসুল পুরো জাতিকে আজ দিতে হচ্ছে।

সিইসি হুদার বিরুদ্ধে আমাদের অভিযোগের আরেকটি কারণ হলো যে, তিনি এবং তার সহকর্মীরা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের ভোটাধিকার হরণ করেই ক্ষান্ত হননি, তারা আমাদের ভবিষ্যতের নির্বাচনী ফলাফলকে প্রভাবিত করার লক্ষ্যে একটি 'ট্রোজান হর্স'ও রেখে যাচ্ছেন। এই ট্রোজান হর্সটি হলো ইভিএম নামে পেপার ট্রেইল বিহীন একটি নিম্নমানের যন্ত্র, যা  দিয়ে ডিজিটাল জালিয়তি করা যায় এবং টেকনিক্যাল উপদেষ্টা কমিটির প্রধান হিসেবে প্রয়াত জামিলুর রেজা চৌধুরী যেটি কেনার সুপারিশে স্বাক্ষর করেননি। গত চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারে ডিজিটাল জালিয়তি করা হয়েছিল ২ বার ভোটের ফলাফল প্রকাশ করার মাধ্যমে। অন্যান্য দেশ, এমনকি তথ্য-প্রযুক্তিতে উন্নত দেশও যখন ইভিএম ব্যবহার থেকে সরে আসছে, তখন এ ভয়াবহ যন্ত্র ব্যবহারে সিইসি হুদার অতি উৎসাহ এবং রাজনৈতিক দলের ঐক্যমত্য ছাড়া ইভিএম ব্যবহার না করার অঙ্গীকার থেকে সরে আসা লক্ষণীয় ও প্রনিধানযোগ্য।

'রাতের ভোট' প্রসঙ্গে নূরুল হুদা বলেছেন, মধ্য রাতের ভোট তিনি দেখেননি, তবে এ ব্যাপারে অভিযোগ উঠেছে কিন্তু তদন্ত হয়নি। আর এ তদন্ত না করে তিনি তার দায়িত্ব পালনে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন, যার মূল কারণ তার পক্ষপাতদুষ্টতা। বিখ্যাত [নূর হোসেন বনাম নজরুল ইসলাম ৫ বিসিএল (এডি) (২০০০)] মামলায় বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে নির্বাচনের  সময়ে অনিয়মের অভিযোগ উঠলে তদন্ত সাপেক্ষে নির্বাচনী ফলাফল বাতিলের ক্ষমতা নির্বাচন কমিশনকে দেওয়া হয়েছে। [আলতাফ হোসেন বনাম আবুল কাশেম ৪৫ ডিএলআর (এডি) ১৯৯৩] মামলার রায়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশনকে অগাধ ক্ষমতা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে কমিশন এমনকি বিধি-বিধানের সঙ্গে সংযুক্তও  করতে পারে, যে ক্ষমতা সাধারণত সংসদের জন্য নির্ধারিত। তাই একটি স্বাধীন সাংবিধানিক পদে অধিষ্ঠিত এবং সুষ্ঠু ও প্রহণযোগ্য  নির্বাচন করতে অগাধ ক্ষমতার অধিকারী হয়েও, জনগণের ভোটধিকার রক্ষা করতে ব্যর্থতার দায় সিইসি হুদার এড়ানোর কোনো  সুযোগ নেই।

সিইসি হুদা ২০০৮ সালের নির্বাচনে প্রার্থী হলফনামায় তথ্যের বিশ্লেষণ সম্বলিত ৭০১ পৃষ্ঠার গ্রন্থেটি দেখিয়ে বিষোদগার করার আগে এর পাতা উল্টে দেখননি এতে কী লেখা আছে। গ্রন্থের ভূমিকায় অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রয়াত মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান নির্বাচন কমিশনের সংস্কার, নির্বাচনী প্রক্রিয়ার সংস্কার, রাজনৈতিক দলের  নিবন্ধিকরণ, ছবিসহ ভোটার তালিকা প্রণয়ন, প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্তকরণ, নির্বাচনী এলাকার সীমানা পুননির্ধারন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সুজনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতি দেন। তিনি বলেন: 'নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে সুজন-এর পক্ষ থেকে  প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের হলফনামা ও আয়কর রিটার্নে প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রতিটি আসনের জন্য তূলনামূলক চিত্র প্রকাশ করে ভোটারদের মধ্যে বিতরণ করা হয় এবং প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জনগণের সামনে উস্থাপন করা হয়। এটি জনগণের সচেতনতার স্তর উন্নীত করে বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে নতুন এক মাইলফলক উন্মোচন করে। সুজন-এর অব্যাহত চাপ ও নির্বাচনকালীন প্রার্থীদের সম্পর্কে নানা তথ্য প্রকাশ, ভোটারদের সচেতনতা এবং এর পাশাপাশি দলের নির্বাচনী  ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত সুস্পষ্ট অঙ্গীকার নিঃসন্দেহে সবার মনেই নতুন আশাবাদের উন্মেষ ঘটিয়েছে। তথ্যের যে অপার ক্ষমতা এবং তথ্যের ভিত্তিতে নাগরিকের মনে যে ইতিবাচক ক্ষমতায়ন সম্ভব, তা আরও একবার প্রমাণিত হয়েছে। আর নির্বাচন সম্পর্কে  প্রার্থীদের হলফ করে তথ্য প্রদান এবং এর বিশ্লেষণ বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে তো বটেই, একইসঙ্গে তা অন্যান্য দেশের জন্যও এক অনন্য ও গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ হয়ে থাকবে…আমি কামনা করি প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে সুজন-এর এ ধরনের বলিষ্ঠ পদক্ষেপ ও সাহসী প্রয়াস অব্যাহত থাকবে।'

সিইসি হুদা নির্বাচন সম্পর্কে ড. মজুমদারের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা নিয়ে অশালীন মন্তব্য করেছেন। তার জানা থাকার কথা যে ড. মজুমদার দেশে-বিদেশের বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বছর শিক্ষকতা করেছেন—তিনি মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফুল প্রফেসর ছিলেন। তিনি একজন প্রতিষ্ঠিত লেখক ও গবেষক। বাংলাদেশের রাজনীতি ও নির্বাচন নিয়ে তিনি ১ ডজনের বেশি বই লিখেছেন এবং লিখেছেন বহু বিদেশি জার্নালে অনেক প্রবন্ধ। গত ২০ বছরের বেশি সময় ধরে তিনি নির্বাচন নিয়ে কাজ করে আসছেন এবং এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক খ্যাতি অর্জন করেছেন। এমনকি আমাদের উচ্চ আদালতও এ বিষয়ে তার জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার স্বীকৃতি দিয়েছেন। উদাহরণস্বরূপ, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা ১ মামলায় বিচারপতি মীর্জা হায়দার হোসেন ও  বিচারপতি খুরশিদ আলম সরকারের হাইকোর্ট বেঞ্চ ড. মজুমদারকে 'এমিকাস ক্যুরি' হিসেবে নিয়োগ দেন, যাতে অন্যান্য এমিকাস ক্যুরিরা ছিলেন: ড. কামাল হেসেন, ব্যরিস্টার রফিকুল হক, ব্যরিস্টার আমিরুল ইসলাম, ব্যরিস্টার মওদুদ আহমদ, মাহমুদুল ইসলাম, ব্যরিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ ও ব্যরিস্টার আজমালুল হোসেন কিউসি, যাদের সবাই বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী। আদালতের ১২০ পৃষ্ঠার রায়ের ১৩ পৃষ্ঠায় ড. মজুমদারের জমা দেওয়া লিখিত বক্তব্যের পর্যালোচনা করা হয় (পৃ. ৪৮-৬১)। নির্বাচন বিষয়ে ড. মজুমদারের অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞা সম্পর্কে উপরিউক্ত আদালত তাঁর রায়ে বলেন: '…Mr. Badiul Alam  Majumdar despite not being a legal expert, rendered his valuable service by making oral arguments as  well as by filing written submissions which have been of much assistance to us for deciding the present  cases. He has, in the true sense, rendered real and valuable assistance to the Court with his versatile  wisdom and experience in the field of election matters…His efforts to show up-to-date and correct laws and citations of different judicial decisions in support of his submissions, which he made against the respondents, reflect enormous industry and versatile erudition; his attitude in seeking substantial and real justice by a Court while ignoring the technical flaws and irregularities and the mode of his  masterly and authoritative written submissions are a lesson to all' (p. 115). [Khandaker Abdus Salam v  Bangladesh,6 ALR (Spl Issue) 2015.] বলা হয় লিখিত বক্তব্যে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!