DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ডয়চে ভেলের সাথে জেনারেল আজিজের সাক্ষাতকারঃ নিজেকে সম্পূর্ন নির্দোষ দাবি!!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ নিজের বিতর্কিত চরিত্রের ক্রিমিনাল ভাইদের পরিচয়পত্র ও অন্যান্য কাগজে তথ্য পরিবর্তনে কোন প্রভাব খাটাননি বলে দাবি করেছেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর সাবেক প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ৷সাথে সাথে তার বিরুদ্ধে আনিত বিভিন্ন অভিযোগ গুলোর বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জও জানিয়েছেন তিনি৷

জার্মান গনমাধ্যম ডয়চে ভেলের 'খালেদ মুহিউদ্দীন জানতে চায়' অনুষ্ঠানে হাজির হয়েছিলেন বাংলাদেশের বহুল আলোচিত সাবেক সেনাপ্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ৷ এক ঘণ্টার এই আলোচনায় ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগের প্রধান খালেদ মুহিউদ্দীনের নানা প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন তিনি৷ কথা বলেছেন তাকে নিয়ে নানা অভিযোগের বিষয়ে৷ এর মধ্যে উঠে এসেছে আল জাজিরার তথ্যচিত্র, ভাইদের বিষয়ে নানা অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিল, নির্বাচনের সেনাবাহিনীর ভূমিকাসহ বিভিন্ন প্রসঙ্গ৷  

বহুল প্রতিক্ষিত এই টকশোটি দেখতে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশীদের মাঝে ব্যপক আগ্রহ থাকলেও,জেনারেল আজিজ অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে অহেতুক কালক্ষেপন করায় এবং নিজ ইমেজ উদ্ধারের ব্যর্থ চেষ্টার প্রয়াস অনুষ্ঠানটিকে ফিকে করেছে নিঃসন্দেহে।  পুরো অনুষ্ঠান জুড়ে জেনারেল আজিজ নিজেকে নির্দোষ প্রমান করতে অসংখ্যবার মিথ্যাচার করেছেন বলে এই প্রতিবেদক বিশ্বাস করেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ভিসা বাতিলের খবরঃ

সম্প্রতি বাংলাদেশে কিছু গণমাধ্যমের সংবাদে বলা হয়েছিল, সাবেক এই সেনাপ্রধানের ভিসা বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র৷ শুরুতেই এ নিয়ে প্রশ্ন ছিল তার কাছে৷ জেনারেল আজিজ সরাসরি তা অস্বীকার করেন৷ জানান, তিনিও গণমাধ্যমেই এই সংবাদ শুনেছেন৷

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র কারো ভিসা বাতিল করলে তাকে তা জানানোর বিধান আছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত তিনি এই সংক্রান্ত কোন তথ্য দেশটির কোন দায়িত্বলীল দপ্তরের কাছ থেকে পাননি৷ গণমাধ্যমগুলো যথাযথ সূত্র ও তথ্য-প্রমাণ উল্লেখ না করেই এই বিষয়ে প্রতিবেদন ছাপিয়েছে বলে তার অভিযোগ৷ এই মুহূর্তে তার বৈধ ভিসা আছে কি না এই প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানি, আছে৷’’

‘এক-দুই কোটি টাকা দেখান’

তিনি শতশত কোটি টাকার মালিক কি না এমন প্রশ্ন করেন সঞ্চালক৷ জবাবে আজিজ আহমেদ বলেন, ‘‘কয়েকশো কোটি নয় আমাকে সামান্য কিছুর সূত্র দিন যাতে বাকি জীবন স্বাচ্ছন্দে কাটাতে পারি৷ শত শত কোটি নয় যদি.. বলতে পারেন লক্ষ লক্ষ বা এক-দুই কোটি টাকা আছে তাহলে ওটা দিয়ে আমি পরিকল্পনা করব আমার ভবিষ্যতটা স্বচ্ছন্দ্য হতে পারে কীনা৷’’

তার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ মনগড়া হিসেবে অভিহিত করেন তিনি৷ অবসর জীবন নিয়ে তিনি বলেন, রিটায়ারম্যান্টের পরে তিনি এখন দায়িত্বের চাপ থেকে মুক্ত৷ এই মুহূর্তে পোস্ট ডক্টরাল করছেন তিনি, সেই বিষয়ে গবেষণা করেই সময় কাটাচ্ছেন৷

ব্যক্তিগত সহকারীর ‘পদচ্যুতি’

সেনাপ্রধানের দায়িত্ব ছাড়ার পরপরই তার ব্যক্তিগত সহকারীকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয় বলে খবর বের হয়৷ এ বিষয়ে বাংলাদেশে ১৬তম সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘আমি যতটুকু জানতে পেরেছি, আমি যখন রিটায়ারম্যান্টে আসি তখন শুনেছি৷ সে অবসরে গিয়েছে৷… ডিসিপ্লিন বলে একটা কথা আছে৷ দুর্নীতির বিষয়টি আরো গভীর৷…অতো সিরিয়াস যদি কোনো কিছু হতো ‘হি শুড হ্যাভ বিন ডিসক্লোজড ফ্রম দ্য সার্ভিস’৷ সেক্ষেত্রে আমরা অনেককে জেল দিয়ে থাকি, অনেককে বরখাস্ত করে থাকি৷ ‘হি ওয়াজ গিভেন নরম্যাল রিটায়ারম্যান্ট'৷ আমি এই ব্যাপারে ‘ফারদার’ কিছু বলতে চাচ্ছি না৷’’

আল জাজিরার তথ্যচিত্রে বিব্রত আজিজঃ

চলতি বছরের ফেব্রয়ারি মাসে এই সেনাপ্রধান ও তার ক্রিমিনাল ভাইদের নিয়ে একটি অনুসন্ধানী তথ্যচিত্র প্রকাশ করে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা৷ এ নিয়ে তখন তোলপাড় হয় বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্বে৷ এই তথ্যচিত্র প্রকাশের পর শুরুতে বিব্রত হয়েছিলেন বলে উল্লেখ করেন আজিজ আহমেদ৷ সেই সময়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্র সফরে থাকলেও সেখানে এর কোন প্রভাব পড়েনি বলে দাবি করেন৷

তথ্যচিত্রে, অভিযোগ করা হয়েছিল ইসরায়েল থেকে স্পাইওয়্যার ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন ক্রয় প্রক্রিয়ায় জেনারেল আজিজ প্রভাব খাটিয়েছেন৷ এর উত্তরে তিনি দাবি করেন কেনাকাটাগুলো যখন হয় তখন সেনাপ্রধান হিসেবে এর সঙ্গে তার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না৷ যদিও তিনি দায়িত্ব নেবার একদিন পর নজরদারি প্রযুক্তি ক্রয়ের স্বাক্ষর হয়, তিনি দাবি করেন, প্রক্রিয়াগুলো আগেই সম্পন্ন হয়েছিল৷

তিনি বলেন, ‘‘আমি চ্যালেঞ্জ করছি কেউ যদি কোনো একটা ‘এভিডেন্স’ দিতে পারে যে আমি বিজিবিতে থাকাকালে, আমি সেনাপ্রধান থাকাকালীন আমার কোন ভাই বা আত্মীয়কে বিজিবি বা সেনাবাহিনীর কোনো ‘আর্মস, ইকুয়েপমেন্ট, অ্যামুনেশন প্রক্রিউরম্যান্ট, কন্ট্রাক্ট’ দিয়েছি এটা যদি কেউ প্রমাণ করতে পারে ‘আই উইল অ্যাকসেপ্ট অ্যানিথিং৷ আই অ্যাম রেডি৷ আই এম গিভিং এ চ্যালেঞ্জ৷’’

ভাইদের জাতীয় পরিচয়পত্রঃ

বাংলাদেশে গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, জেনারেল আজিজের দুই ভাই  হারিছ আহমেদ ও তোফায়েল আহমেদ নতুন নাম আর ভিন্ন ঠিকানা ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র ও পাসপোর্ট সংগ্রহ করেছেন৷ এ বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরে সাবেক সেনাপ্রধান বলেন, ‘‘কত লক্ষ লক্ষ বাংলাদেশি লোকজন বিদেশে আছে তাদের কি নিজস্ব নাম পিতৃপরিচয় বা ঠিকানা কি একচুয়েলটা ইউস করছে?’’

নাম পরিচয় পরিবর্তনে তিনি প্রভাব খাটিয়েছিলেন কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘একটা উদাহরণ দেন কোন জায়গায় আমি কাউকে টেলিফোন করেছি কি না, যে আপনি একে নির্দেশ দিয়েছেন যে এটা করে দেও৷ এইরকম কোন এভিডেন্স কি আপনাদের কাছে আছে? প্রমাণ দেন৷’’

আবেদনপত্রের কোন পর্যায়ে তার অধীন কোন বিজিবি অফিসার যুক্ত ছিলেন কি না এমন প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘‘এই ধরনের কোন কিছু হয়েছে কীনা আমার কিছু জানা নেই৷ আর এ ধরনের সাক্ষর করার প্রসঙ্গ এসেছিল কীনা আমার ঠিক মনে পড়ছে না৷’’

কোর্সমেটের সঙ্গে ফোনালাপঃ

আল জাজিরার তথ্যচিত্রে জেনারেল আজিজ ও তার একজন কোর্সমেটের কথোপকথন ফাঁস করা হয়৷ এ নিয়ে প্রশ্নের জবাবে আজিজ আহমেদ দাবি করেন অডিওটি সঠিক নয়৷ ‘‘ইট ওয়াজ এ কাট অ্যান্ড পেস্ট৷ ইট ওয়াজ টেম্পার্ড৷…অনেক কিছু করা হয়েছে,’’ বলেন তিনি৷

এই বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেয়ার পরিকল্পনা করেছেন বলেও তিনি উল্লেখ করেন৷ বলেন, ‘‘এতদিন আমি ইউনিফর্মে ছিলাম, এটার ব্যাপারে যদি আমি কোন লিগ্যাল অ্যাকশনের বা ব্যবস্থা নিতাম অনেকে প্রশ্ন করত যে আই এম এক্সারসাইজিং মাই অথরিটি৷ আই এম মিসইউজিং মাই পাওয়ার৷ আমি কিন্তু এখন ইউনিফর্মের বাইরে আসছি৷ আগামী জুনের ২৫ তারিখের পর আমার সম্পূর্ণ রিটায়ারম্যান্ট শুরু হবে৷ তখন আমি চিন্তা করব হোয়াট কাইন্ড অব লিগ্যাল অ্যাকশন আই শুড টেক এগেইন্সট দিস কাইন্ড অব প্রপাগান্ড অ্যান্ড আদার থিংস৷’’

নির্বাচন প্রসঙ্গঃ

বাংলাদেশের সবশেষ জাতীয় নির্বাচনে সেনাবাহিনীর ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন করা হয় তাকে৷ জবাবে তিনি বলেন, সেনাবাহিনী কী দায়িত্ব পালন করবে তার পরিস্কার নির্দেশনা ছিল৷ ‘‘চাইলেই সেনাবাহিনী যা করার এখতিয়ার নাই,’’ বলেন তিনি৷

নির্বাচন কেমন হয়েছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় ভাল নির্বাচন হয়েছে৷

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!