DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জোড়া সেঞ্চুরির পরও শেষ বিকেলে অস্বস্তি

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  সিলেটে শোচনীয় পরাজয়ের পর বাংলাদেশ বেশ সতর্ক। কিভাবে এই শোচনীয় হারের লজ্জা থেকে বের হওয়া যায়, ঢাকায় এসে টিম ম্যানেজমেন্টের ভাবনায় ছিল শুধুই এই বিষযটা। সে কারণেই ঢাকা টেস্টে তিন পরিবর্তন নিয়ে খেলতে নেমেছে বাংলাদেশ দল। অভিষেক হয়েছে দু’জনের- মোহাম্মদ মিঠুন এবং খালেদ আহমেদ। দলে ফিলেছেন মোস্তাফিজুর রহমানও।

টস জিতে ব্যাট করতে নামার পরই বাস্তবতাটা বুঝতে পারলো বাংলাদেশ। ১৩ রানের মাথায় ইমরুল কায়েস, ১৬ রানের মাথায় লিটন দাস এবং ২৬ রানের মাথায় ফিরে যান মোহাম্মদ মিঠুন। ২৬ রানেই নেই হয়ে গেলো তিন উইকেট। এমন পরিস্থিতিতে সিলেটের শঙ্কাই বার বার মাথাচাড়া দিয়ে উঠছিল। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় কি?

এমনটা যখন সবাই ভাবছিলেন, তখন ব্যাট হাতে ঘুরে দাঁড়ালেন মুশফিকুর রহীম এবং মুমিনুল হক। দু’জনের ব্যাটে বাংলাদেশ শুধু ঘুরেই দাঁড়ায়নি, প্রথম দিনেই ঢাকা টেস্টকে নিয়ে এসেছে নিজেদের হাতের মুঠোয়। জোড়া সেঞ্চুরি এসেছে মুশফিক-মুমিনুল দু’জনের ব্যাট থেকে। প্রথম দিন শেষে বাংলাদেশের রান ৫ উইকেট হারিয়ে ৩০৩। এখনও ১১১ রান নিয়ে উইকেটে রয়েছেন মুশফিকুর রহীম।

দিনটা আরও অনেক বেশি স্বস্তি নিয়ে শেষ করতে পারতো বাংলাদেশ। যদি শেষ মুহূর্তে পরপর দুটি উইকেট হারাতে না হতো। ১৬১ রান করে মুমিনুল নতুন বলে উইকেট দিলেন। তেন্দাই চাতারাকে চেয়েছিলেন কাভার ড্রাইভ করতে। কিন্তু বল চলে যায় পয়েন্টে দাঁড়ানো ব্রায়ান চারির হাতে। অনায়াসেই বলটা তালুবন্দী করে ফেলেন চারি। দলীয় ২৯২ রানের মাথায় আউট হন মুমিনুল। ২৪৭ বলে ১৬১ রানের অনবদ্য ইনিংসটি তিনি সাজিয়েছেন ১৯টি বাউন্ডারিতে।

নাইটওয়াচম্যান হিসেবে মাঠে নামেন তাইজুল ইসলাম। কিন্তু তিনি আর নাইটওয়াচম্যান হতে পারলেন না। কাইল জার্ভিসের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন তাইজুল। ৪ রান করে আউট হয়ে গেলেন তিনি। যদিও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ মাঠে নেমে অপরাজিত থেকে যান শূন্য রানে।

দিনের শুরুতে ২৬ রানে ৩ উইকেপ পড়ার পর দারুণ ব্যাটিং বিপর্যয়ের শঙ্কায় সবাই ভুগতে শুরু করে দিয়েছিল। প্রয়োজন ছিল ঘুরে দাঁড়ানোর এবং বড় একটি জুটি। অবশেষে দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক এবং মুশফিকুর রহীমের ব্যাটে গড়ে উঠলো বিশাল এক জুটি। বাংলাদেশকে স্বস্তির জায়গাতেই নয় শুধু, নিয়ে গেলো প্রভাব বিস্তারকারী এক জায়গায়। পুরো ম্যাচটাই নিজেদের হাতের মুঠোয় নিয়ে এসেছেন মুমিনুল এবং মুশফিক।

দু’জনের ব্যাটে গড়ে উঠলো ২৬৬ রানের বিশাল এক জুটি। ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করার পর মুমিনুল নিজেকে ধীরে ধীরে তুলে ফেলছিলেন রানের চূড়ায়। ১৫০ রানের গণ্ডি পেরিয়ে চলে যায় ১৬০ এর ঘরে। অবশেষে ১৬১ রান করে বিদায় নিতে হলো বাংলাদেশের অন্যতম সেরা এই টেস্ট ব্যাটসম্যানকে।

বাংলাদেশের লিটল মাস্টার কিংবা বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান- কত নামেই না তাকে ডাকা হয়। টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রানের গড়ও তার। সেই মুমিনুলের ব্যাট যখন কথা বলে, তখন হাসে বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা। কিন্তু তার ব্যাট কিছুদিন ছিল নিষ্প্রভ। বাংলাদেশও পাচ্ছিল না কাঙ্খিত সাফল্য।

গত আটটি ইনিংসে সেঞ্চুরি দুরে থাক, মুমিনুলের ব্যাটে হাফ সেঞ্চুরির দেখাও নেই। সর্বোচ্চ রান ৩৫। সেই অবস্থায় মুমিনুলের নিজের যেমন ঘুরে দাঁড়ানো খুব প্রয়োজন ছিল, তেমনি দলেরও প্রয়োজন ছিল তার ব্যাটে রান।

সেই অতি গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই করে ফেললেন দারুণ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে। ২৬ রানের মধ্যেই যখন টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ, তখন সিলেটের শঙ্কাই পেয়ে বসেছিল আবার। সে অবস্থা থেকে বাংলাদেশকে সঠিক পথে ফেরানোর জন্য একটি জুটির খুব প্রয়োজন ছিল। অভিজ্ঞ মুশফিকুর রহীমকে নিয়ে সে কাজটাই করে দেখালেন মুমিনুল।

দারুণ বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে শুধু উইকেটে অটলই থাকেননি, দৃঢ়তার সাথে ব্যাটিং করে দলের রানকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাশাপাশি ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরির দেখা পেয়ে গেলেন মুমিনুল হক। ১৫০ বল খেলে ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরির মাইলফলকে পৌঁছান বাংলাদেশের এই টেস্ট স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!