DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

পাতা ফাঁদে পা না দেয়া তত্ত্ব – মাহমুদুর রহমান

মাহমুদুর রহমান : এ বছর ৮ ফেব্রুয়ারী শেখ হাসিনার বশংবদ আদালতের ফরমায়েসি রায়ে দন্ডিত হওযার কদিন আগে লা মেরিডিয়েন হোটেলে বেগম খালেদা জিয়া বিএনপির এক নির্বাহী সভা ডেকেছিলেন। সেই সভায় তিনি প্রারম্ভিক এবং সমাপনী বক্তৃতা দিয়েছিলেন। সেই সভায় উপস্থিত নেতাদের কাছ থেকে জেনেছিলাম বিএনপি চেয়ারপারসনের সমাপনী বক্তৃতাটি অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত ছিল। সেই বক্তৃতা শুরুর আগে বিএনপির নীতিনির্ধারনী নেতাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ন কয়েকজনের পক্ষ থেকে মঞ্চেই নীচু স্বরে তাকে কিছু পরামর্শ দেয়ার কথাও আমাকে উপস্থিত লোকজন জানিয়েছিলেন।

দৃশ্যত খালেদা জিয়া সেই পরামর্শে সম্মত হয়েছিলেন। সংক্ষিপ্ত সমাপনী বক্তৃতায় তার মূল কথা ছিল যে সাজার দন্ড ঘোষনা হলেও কারো ‘পাতা ফাঁদে পা দিয়ে’ কোন হঠকারী কাজ করা যাবে না। প্রতিবাদ, আন্দোলন ইত্যাদি সব অহিংসভাবে করতে হবে। কেউ যদি তার অন্যথা করে তাহলে বেগম জিয়া কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। ‘পাতা ফাঁদে পা না দেয়া’র কথাটি দলের নেতৃবৃন্দের মধ্যে বেদবাক্যের মত ছড়িয়ে পড়ে। তারা প্রতিদিন সেই রেকর্ড বাজাতে শুরু করেন। এমনকি লন্ডন প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান পর্যন্ত এই তত্ত্বে প্রভাবিত হন। তিনিও প্রতি বক্তৃতায় নেতা-কর্মীদের একই নসিহত করেছেন।

দলটির হাজার পাঁচেক নেতা-কর্মী ৮ ফেব্রুয়ারী মিছিল সহকারে খালেদা জিয়াকে দন্ড শোনা এবং ভোগ করার জন্য বিশেষ আদালতের নিকট পর্যন্ত পৌছে দিয়ে ঘরে ফিরেছিলেন। দেশবাসী টেলিভিশনের সামনে বসে সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছেন। এরপর কিছুদিন গৃহবন্দী সমাবেশ, মানব বন্ধন, অনশন জাতীয় অহিংস কর্মসূচি চলার পর সেই সব কর্মকান্ডেও এক সময় প্রকৃতির নিয়মে ভাটা পড়েছে। আমি দেশে থাকা অবস্থায় ওই জাতীয় হাতে গোনা কর্মসূচিতে ভিন্ন মেজাজের বক্তৃতা দিয়ে বিএনপির নীতিনির্ধারকদের বিরাগভাজন হয়েছি।

আমার বক্তৃতার সময় এবং পরবর্তীতে তাদের রোসকষায়িত দৃষ্টি আমাকে সহ্য করতে হয়েছে। লোকমুখে শুনেছি স্বয়ং তারেক রহমানও নাকি আমার কথা-বার্তায় যথেষ্ট বিরক্ত হয়েছেন। অবশ্য শেখ হাসিনার নির্দেশে কুষ্টিয়ায় আমার উপর হামলা হলে ইউনাইটেড হাসপাতালে তারেক রহমান আমাকে ফোন করেছিলেন। সেই সময়ের কথোপকথনে তিনি আমার প্রতি কোন বিরক্তি প্রকাশ করেননি। হয়ত মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি বিবেচনা করেই সহানুভূতি বশত: আমার প্রতি তার অসন্তোষ সংবরন করেছিলেন। তাছাড়া আমার মত জাতিয়তাবাদী দলের একজন সামান্য সমর্থককে দলীয় ভাবে সাজা দেয়ার তো কোন সুযোগ নেই। বড় জোর আমার সাথে সং¯্রব ত্যাগ করা যায়।

ভেবেছিলাম ডিসেম্বরের নির্বাচনী তামাশায় বিএনপির অসহায় এবং অবধারিত আত্মসমর্পন দেখা পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির বিষয়ে আমি আর কলম ধরবো না। কিন্তু, গতকাল দুর্নীতির দ্বিতীয় ভূয়া মামলায় খালেদা জিয়ার ৭ বছরের কারাদন্ডের রায় ঘোষনা এবং আজ হাইকোর্টের আপীলে পাঁচ বছরের সাজা দ্বিগুন হয়ে দশ বছর হওয়ার পর নিরব থাকা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। আমার এই লেখায় বাংলাদেশের রাজনীতির চিত্রের পরিবর্তন হওয়ার কোন রকম সম্ভাবনা না থাকলেও আমি লিখে অন্তত: কিছুটা মানসিক সান্তনা পাব। ২০১৬ সালের ২৩ নভেম্বর জেল থেকে মুক্তিলাভের পর থেকে অব্যাহত ভাবে বলে এসেছি যে গন আন্দোলন ব্যতীত দিল্লির প্রতিনিধিকে রাষ্ট্র ক্ষমতা থেকে বিতারিত করা সম্ভব হবে না। দূর্ভাগ্যবশত: বিএনপির নীতি-নির্ধারক মহল দলীয় সাংগঠনিক শক্তি সম্পর্কে হতাশ হয়ে বিদেশ নির্ভর কৌশল গ্রহন করেছেন। তারা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, ভারতের সমর্থন ছাড়া এদেশের গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। এই কৌশলের সপক্ষে আমি কোন যুক্তি খুঁজে পাইনি।

ফ্যসিস্ট শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করেই দিল্লি বাংলাদেশকে কবজা করতে পেরেছে। এখন সেই হাসিনাকে মাইনাস করে ভারতীয় শাসকগোষ্ঠী কেন বিএনপিকে ক্ষমতায় যাওয়ার রাস্তা করে দেবেন এর কোন যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা বিএনপি জনগনের কাছে হাজির করেনি। বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব শহীদ জিয়ার বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদি ত্যাগ করে যদি আজ ইসলাম বিরোধী সেক্যুলার আদর্শকে গ্রহন করে তাহলেও শেখ হাসিনা ঐতিহাসিক কারনেই ভারতের কাছে অধিকতর বিশ্বস্ত রয়ে যাবেন। আমার বাড়িতে একটি ছেলে প্রায় কুড়ি বছর ধরে কাজকর্ম করছে। উত্তরবঙ্গ থেকে বালক বয়সে ঢাকায় এসে এখন সে বিয়ে করেছে, এক মেয়ের বাবাও হয়েছে।

এই যে বৃদ্ধা মাকে ঢাকায় রেখে আমি দুমাস ধরে বিদেশে রয়েছি, ওই ছেলেটিই কিন্তু বাড়ির সবকিছু দেখাশোনা করছে। এখন হঠাৎ করে অপর এক ছেলেকে আমার যতই পছন্দ হোক না কেন, আমি পুরনো ছেলেটিকে পরিবর্তন করে নতুন কাউকে অবশ্যই বাসার দায়িত্ব দেব না। প্রত্যেক পরিবারের কর্তাই নিশ্চয়ই আমার মত করেই চিন্তা করেন। তাহলে দিল্লির কর্তা কেন তার সবচেয়ে বিশ্বস্ত ব্যক্তিকে ঢাকার দায়িত্ব থেকে সরাবেন? ঢাকা তো প্রকারান্তরে এখন দিল্লির উপনিবেশেই পরিনত হয়েছে। শেখ হাসিনাকে সরিয়ে নতুন কাউকে বাংলাদেশের অধিকর্তা বানানোর ঝুঁকি নেয়া ভারতের পক্ষে সম্ভব বলে আমি মনে করি না।

৮ ফেব্রুয়ারী থেকে আাজ ৩০ অক্টোবর, এই প্রায় নয় মাসে খালেদা জিয়ার সাজার মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে বেড়ে সতের বছর হয়েছে। এই নয় মাসে বিএনপি আন্দোলনের কোন ‘পাতা ফাঁদে পা দিয়েছে’, এমন অভিযোগ আওয়ামী লীগের কট্টর সমর্থক শ্যামল দত্ত, মুন্নি সাহা গংদের পক্ষেও করা সম্ভব নয়। বিএনপি ভারতের সাথে সম্পর্কোন্নয়নের চেষ্টায় কোন ত্রুটি রাখেনি। শীর্ষ নেতৃবৃন্দ বারে বারে দিল্লিতে ধর্না দিতে ছুটে গেছেন। ভারতীয় মিডিয়ায় যেচে কথা বলেছেন। ব্রাক্ষণ্যবাদী শাসকদের মন পাওয়ার জন্য দলটির ঢাকা এবং লন্ডনের নেতারা এমন কথাও বলেছেন যে, আশি এবং নব্বই দশকের রাজনীতি ভুল ছিল। সেই কথিত ভুল রাজনীতিকে জানালা দিয়ে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে নতুন ভারত প্রেমে আপ্রুত হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতেও কোন দ্বিধা করেননি। সর্বশেষ, ঐক্যজোটের নামে দলের নেতৃত্বে রীতিমত বিপ্লবী পরিবর্তন ঘটানো হয়েছে।

বাংলাদেশের যে কোন নাগরিকের এখন মনে হওয়া স্বাভাবিক যে, বিএনপির কারাবন্দী চেয়ারপারসন, প্রবাসী ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন কিংবা স্ট্যান্ডিং কমিটির সকল সিনিয়র নেতৃবৃন্দ দলের নীতি নির্ধারনে আর কোন ভূমিকা রাখছেন না। ঐক্যজোটের প্রধান ড. কামাল হোসেন, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাসদ (রব) এর আ.স.ম আব্দুর রব এবং গন স্বাস্থ্যের ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী মিলে বর্তমানে শহীদ জিয়ার প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের কান্ডারীর ভূমিকা পালন করছেন। উল্লিখিত চারজনই সেক্রুলার রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন। ড. কামাল হোসেনের এমন কোন বক্তৃতা নেই যেখানে তিনি মরহুম শেখ মুজিবর রহমানের প্রশংসা করেন না। এমনকি সংলাপ চেয়ে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সম্প্রতি তিনি যে চিঠি লিখেছেন সেখানেও শেখ মুজিবের উল্লেখ রয়েছে। চিঠিতে ড. কামাল হোসেন দাবী করেছেন যে, বাংলাদেশে গনতন্ত্র প্রতিষ্ঠাই নাকি শেখ মুজিবর রহমানের স্বপ্ন ছিল। কিন্তু, বাংলাদেশের ইতিহাস ভিন্ন সাক্ষ্য দিচ্ছে।

১৯৭৫ সালের ২৫ জানুয়ারী এক দলীয় বাকশাল সরকার প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে প্রথম দফায় হত্যা করা হয়েছিল। শেখ মুজিবের সেই সরকার জনগনের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছিল, দেশের সকল পত্রিকা নিষিদ্ধ ঘোষনা করা হয়েছিল। ড. কামাল হোসেন সেই গণবিরোধী বাকশাল সরকারেরই অত্যন্ত প্রভাবশালী মন্ত্রি ছিলেন। এসব ইতহিাস বিএনপির বর্তমান নেতৃত্ব ধামাচাপা দিতে চাইলেও বাংলাদেশের জনগন সম্ভবত: এখনও এতখানি স্মৃতিভ্রষ্ট হন নাই। যে ড. কামাল হোসেন সর্বক্ষন তার ‘বঙ্গবন্ধু’র বন্দনা করছেন, তিনি একবারের জন্যও স্বাধীনতার মহান ঘোষক জেনারেল জিয়ার নাম উচ্চারন করেছেন এমন কোন সংবাদ চোখে পড়েনি। একই মঞ্চে উপস্থিত থেকে বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দ নিরবে অব্যাহত শেখ মুজিব বন্দনা শুনে চলেছেন। কিছুদিন আগে তো দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ড: কামাল হোসেনের পরম পূজনীয় ‘বঙ্গবন্ধুকে’ যথেষ্ট সমালোচনা করে লন্ডনে বক্তব্য রেখেছিলেন। বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাহলে কি বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদের দর্শনের অবলুপ্তি ঘটলো? ২৭ অক্টোবর বিএনপির সাংগঠনিক শক্তিকে ব্যবহার করে চট্রগ্রামে যে জনসভা হলো সেখানে নাকি পবিত্র কোরআন, গীতা এবং ত্রিপিটক পাঠ দিয়ে সভা শুরু করা হয়েছে। বাইবেল কেন বাদ পড়লো বুঝতে পারলাম না।

এতদিন তো সম্ভবত: কেবল কোরআন পাঠ দিয়েই বিএনপির সভা শুরু করা হতো। আমরা কি তাহলে ধরে নেব যে দলের এত যুগের ভুল এখন শোধরানো হচ্ছে? এই সব কর্মাকান্ডের অন্তর্নিহিত রাজনৈতিক বার্তাটি দেশের জনগনকে উপলদ্ধি করতে হবে। ঐক্যজোটের নেতৃবৃন্দ ভারত এবং পশ্চিমা রাস্ট্রসমূহকে সম্ভবত: বোঝাতে চাইছেন যে, তারাও সেক্যুলারিজম নামক মুদ্রার অপর পিঠ। এতকাল সেক্যুলারিজমের পতাকাবাহী হিসেবে আওয়ামী লীগেকে গন্য করা হতো। এখন থেকে বিএনপিও একই পতাকাতলে সামিল হয়েছে। তারাও আওয়ামী লীগের সাথে একমত হচেছন যে, রাজনীতিতে ইসলাম নৈব নৈব চ:। ইসলাম কেবল মসজিদ এবং বাড়ির নামাজের জায়গায় (যদি সেটা থাকে) সীমিত থাকবে। আশা করি গনভবনের উপাদেয় নৈশভোজের পর যৌথ বিবৃতি আসবে যে, ইসলাম এবং শেখ মুজিবর রহমানকে নিয়ে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি এক ঐতিহাসিক ঐকমত্যে উপনীত হয়েছে। এই দুই বিষয়ে আর তাদের মধ্যে কোন মতপার্থক্য নেই।

পরিবর্তনের রাজনীতি আওয়ামী লীগের মধ্যেও কিছুটা পরিলক্ষিত হচ্ছে। তবে সেই পরিবর্তনের চরিত্রটি ভিন্ন। বিএনপি যখন ইসলাম সম্পর্কে এক প্রকার হীনমন্যতায় ভুগছে, সেই সময় আওয়ামী লীগ হেফাজতে ইসলামকে কোলে তুলে নিয়েছে। ২০১৩ সালে যাদেরকে নির্মমভাবে গুলি করে মারতে শেখ হাসিনা বিন্দুমাত্র দ্বিধা করেননি, আজ তাদের কাজ থেকেই সম্বর্ধনা নেয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছেন। হেফাজতে ইসলামের মধ্যকার বাস্তবাদী নেতারাও শেখ হাসিনার কাছ থেকে উপহার গ্রহনের মধ্যে কোন মোনাফেকি দেখতে পাচ্ছেন না। শেখ হাসিনার কাছ থেকে সনদ প্রাপ্তির কৃতজ্ঞতা এদের কাছে শাপলা চত্বরের গনহত্যাকে দূর্ভাগ্যজনকভাবে জায়েজ করে দিয়েছে। হেফাজত নেতৃবৃন্দ এখন আলেম হত্যাকারীকে সম্বর্ধনা দেয়ার পক্ষে নানারকম স্বার্থবাদী যুক্তি দেখাচ্ছেন। ওদিকে যে ইন্দো-মার্কিন গোষ্ঠী এতদিন হেফাজত লালনের জন্য বিএনপিকে দোষারোপ করে এসেছে তারাই শেখ হাসিনা এবং হেফাজতের মিলমিশকে রাজনৈতিক প্রজ্ঞার সার্টিফিকেট দিচ্ছে।

ইসলাম এবং হেফাজতকে সমর্থন দেয়ার অপরাধে আমার দেশ পত্রিকা মার্কিনীদের কাছে অস্পৃশ্য হলেও শেখ হাসিনা যখন ইসলামপন্থীদের কাছে টানেন তখন এর মধ্যে সা¤্রাজ্যবাদীরা কোন সমস্যা দেখেন না। অনেকেই ভাবতে পারেন এসব পশ্চিমাদের দ্বি-মুখি চরিত্রের প্রমান দেয়। আসল কথা হলো ইন্দো-মার্কিন লবি ঠিকই জানে যে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে সাময়িকভাবে হেফাজতকে খানিকটা সুযোগ-সুবিধা শেখ হাসিনা দিলেও, ইসলামের বিরুদ্ধে সকল যুদ্ধে তিনি হিন্দত্ববাদ, জায়নবাদ এবং নব্য রক্ষনশীল পশ্চিমাদেরকেই সহযোগীতা দেবেন। অতএব, সর্ব অবস্থায় একমাত্র শেখ হাসিনাই বিশ্বের তাবৎ ইসলাম বিদ্বেষীদের মিত্র রয়ে যাবেন।
বাংলাদেশের জনগন গনভবনের ১ নভেম্বরের নৈশভোজের দিকে অধির আগ্রহে তাকিয়ে আছেন। আশা-নিরাশার দোলাচলের মধ্যে অনেকে এই আশাও পোষন করছেন যে, সফল সংলাপের মাধ্যমে তারা গনতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পাবেন। আগামী নির্বাচনে কোনরকম ভয়-ভীতি ছাড়াই নিজের ভোটটি পছন্দের দল এবং প্রার্থীকে দিতে পারবেন।

আমি মনে করি তারা পুনরায় হতাশ হবেন। ঐক্যজোটের নামে বিএনপিকে শেখ হাসিনার অধীনে এবং বর্তমান মেরুদন্ডহীন দলীয় নির্বাচন কমিশনের ব্যবস্থাপনাতেই নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে হবে। সেই নির্বাচনী তামাশাতেও কোন দল কতগুলো আসন পাবে সেটা শেখ হাসিনা দিল্লির সাথে আলোচনাক্রমেই স্থির করবেন। এরশাদ এবং ড. কামাল হোসেনের মধ্যে কে গৃহপালিত বিরোধী দলের নেতার পদ অলংকৃত করবেন সেই সিদ্ধান্তও নির্বাচনের আগেই নেয়া হয়ে যাবে। শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক বিশ্বকে ধোকা দেয়ার জন্য এবার শুধু নির্বাচনের আগে সংসদ ভেঙে দিতে পারেন। বিএনপি নেতৃবৃন্দ হয়ত এটুকু পেয়েই নেতা-কর্মী-সমর্থকদের বোঝাতে চেষ্টা করবেন যে সংলাপে তারা বিরাট সাফল্য অর্জন করেছেন। নির্বাচনের দিনে গনজোয়ারে তারাই ক্ষমতায় বসতে যাচ্ছেন। আমি দেশবাসীকে শুধু এটুকু স্মরন করিয়ে দিতে চাই যে নির্বাচন একদিনের কোন বিষয় নয়। নির্বাচনের নির্ধারিত দিনের এক সপ্তাহ আগেই বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের এলাকা ছাড়া করে দিয়ে শেখ হাসিনার পক্ষে জিতে যাওয়া সম্ভব।

সেক্ষেত্রে ভোট দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে ওঠার আশংকা রয়েছে। তাছাড়া, এবার নাকি ভোট কেন্দ্র থেকে নির্বাচনের ফলাফল ঘোষনার পরিবর্তে কেন্দ্রীয় ভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে কাজটি করা হবে। সেই পরিস্থিতিতে ভোট কেন্দ্রে কারচুপির আর প্রয়োজন হবে না। ক্ষমতাসীন ফ্যাসিস্ট শাসকের পক্ষে যা কিছু করবার সেটি ঢাকা থেকেই করা হবে। ১৯৭৩ সালে বাংলাদেশের প্রথম সংসদ নির্বাচনে শেখ মুজিবর রহমান এভাবেই নির্বাচনের ফলাফল নিয়ন্ত্রন করেছিলেন। গন আন্দোলনের কোন রকম প্রেক্ষাপট তৈরী না করে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিয়ে কেবল শেখ হাসিনাকেই বৈধতা দেবে। সেই সঙ্গে ফ্যাসিস্ট সরকারের দশ বছর ব্যাপী জুলুমের বিরুদ্ধে ভবিষ্যতে কোন প্রতিবাদ করার নৈতিক অধাকারটুকুকেও হারাতে হবে। আসলে ‘পাতা ফাঁদে পা না দেয়ার’ তত্বের মধ্যেই দলের পরাজয় নিশ্চিত হয়ে গেছে। বরঞ্চ বলা যেতে পারে যে, শেখ হাসিনা এবং ভারতের ফাঁদে দুই পা রেখেই বিএনপির নেতারা সেই ফেব্রুয়ারী থেকে ফাঁদ তত্ত্ব আওড়ে চলেছেন।

বেগম খালেদা জিয়ার সাজার অন্যায় আদেশকে উপলক্ষ করেই আজ লিখতে বসেছিলাম। এখনও বাংলাদেশের জাতীয়তাবাদী শক্তির প্রতীক হিসেবে আমি তাকেই মনে করি। ভুল রাজনীতির কারনে সেই প্রতীককে আমরা হারাতে বসেছি। তিনি কারাগারে যাওয়ার আগেই আমি বক্তব্যে এবং লেখায় বলেছিলাম যে, এই বিচারহীনতার দেশে কোন আইনী লড়াইয়েই খালেদা জিয়া মুক্ত হবেন না। হয় গন আন্দোলন অথবা মোদি-হাসিনার কৃপা ব্যতীত বিএনপির চেয়ারপারসনকে জেলেই থাকতে হবে। বিএনপির নীতি-নির্ধারক মহল বারে বারে উচ্চ আদালতে গিয়ে অন্যায় সাজাকে এক প্রকার আইনগত বৈধতা দিচ্ছেন। শেখ হাসিনার নির্দেশে পরিচালিত আদালতকে সম্মিলিতভাবে বয়কট করার প্রস্তাব করেও আমি কোন ফল পাইনি।

আমার অন্যান্য বক্তব্যের মত এই প্রস্তাবকেও বিএনপির নীতিনির্ধারকরা হঠকারীই বিবেচনা করেছেন। এখন নির্বাচনী তমাাশার পরিসমাপ্তি পর্যন্ত বেগম জিয়ার অপেক্ষা করা ছাড়া আর কোন উপায় নেই। বিএনপি প্রদত্ত বৈধতা নিয়ে পাকাপোক্ত ভাবে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে শেখ হাসিনা তাকে প্যারোলে বিদেশে যাওয়ার সুযোগ করে দিতেও পারেন। একদিকে খালেদা জিয়ার ১৭ বছরের সাজা অন্যদিকে গনভবনে নৈশভোজের আমন্ত্রন, এ জাতিয় তামাশায় বেগম খালেদা জিয়ার কোন ভূমিকা আছে কি না আমি জানিনা। যে ব্যক্তি দলের নেত্রীকে অন্যায় ভাবে কারাগারে রেখেছেন তার সঙ্গে একত্রে আহার কিভাবে সম্ভব তাও আমার অজানা। রাজনীতিবিদ হলে হয়ত বুঝতে পারতাম। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন, নানা রকম শংকা বিরাজ করছে। আশা করি আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে সব প্রশ্নেরই জবাব মিলবে। সেই জবাবের আলোকে ফ্যাসিবাদ এবং ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে স্বাধীনতাকামী জনগোষ্ঠীর লড়াইয়ের কৌশলও আমরা ঠিক করে ফেলতে পারব ইনশাআল্লাহ।

 লেখকঃ সম্পাদক, আমার দেশ।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!