DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিএনপির ৪০ বছরঃ বাংলাদেশের জনগনের আশা আকাংখার মূর্ত প্রতিক

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  আজ ১ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। ১৯৭৮ সালের এই দিনে বিএনপি প্রতিষ্ঠিত হয়। শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান দলটির প্রতিষ্ঠাতা। দীর্ঘ ৩৯ বছরে সংগ্রাম ও নানান চড়াই-উতরাইয়ের পথপরিক্রমায় বিএনপি আজ দেশের জনপ্রিয় এক বৃহত্তম রাজনৈতিক দল।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, প্রতিষ্ঠার চার দশকে এসে সবচেয়ে খারাপ সময় পার করছে দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি। টানা আট-নয় বছর ক্ষমতার বাইরে থেকে দলটি সাংগঠনিকভাবে অনেকটা বিপর্যস্ত। সেই সাথে নির্বাচনের বছরে এসে চেয়ারপার্সনের কারাবন্দী হওয়াটা এ দলের মরার উপর খাড়ার ঘায়ের মতো অবস্থা।

এছাড়া আরেক কান্ডারি সিনিয়র ভাইস চেয়ারপারসন (বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমান দেশে ফিরতে পারছেন না। দলের দুই ডজন শীর্ষ নেতা জেলে, ৬০ হাজার মামলায় ২লাখ নেতাকর্মী আসামি। গুম হামলা মামলাসহ নানাবিধ কারণে এ দলটি এখন এক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে।
২০০৭ সালে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে বিএনপিকে কিছু প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে পড়তে হয়। তখন গ্রেফতার হয়ে কারাগারে যান দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও তখনকার সিনিয়র যুগ্মমহাসচিব তারেক রহমান।

এরপর তারেক রহমান লন্ডনে যান চিকিৎসা নিতে। এখনও তিনি সেখানে অবস্থান করছেন। সর্বশেষ ২০১৪ সালের নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি। দীর্ঘ সময় আন্দোলন করে শীর্ষস্থানীয় প্রায় সব নেতাকে একাধিকবার কারাগারে যেতে হয়েছে। দলের চেয়াপার্সন বেগম খালেদা জিয়া এখনও নির্জন কারাগারে বন্দি আছেন। এই রাজনৈতিক পরিস্থিতির মধ্যে বিএনপি আজ তার প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী পালন করছে।
দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দুইদিনের কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে।

এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন তারেক রহমান। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সকাল সাড়ে ৯টায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ এবং সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী শেরেবাংলা নগরে দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের মাজারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ এবং মোনাজাত করবেন।


জাতীয়তাবাদী দর্শন নিয়ে ১৯৭৮ তৎকালীন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের হাত ধরে প্রতিষ্ঠিত হয় জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক দল (জাগদল)। এর পর ১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর রমনা রেস্তোঁরায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি ১৯ দফার ভিত্তিতে বিএনপি গঠন করার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন। বিএনপি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে সঙ্গে বিলুপ্ত হয়ে যায় জাগদল।


শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান ছিলেন বিএনপির সমন্বয়ক ও প্রথম চেয়ারম্যান। অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী ছিলেন দলের প্রথম মহাসচিব। বর্তমানে দলটির চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমান। এ ছাড়া মহাসচিব হিসেবে দায়িত্বপালন করছেন ভদ্র এবং পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।


বিএনপির ঘোষণাপত্রে বলা হয়, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে ইস্পাত কঠিন গণঐক্য, ব্যাপক জনভিত্তিক গণতন্ত্র ও রাজনীতি প্রতিষ্ঠা, ঐক্যবদ্ধ ও সুসংগঠিত জনগণের অক্লান্ত প্রয়াসের মাধ্যমে জাতীয় অর্থনৈতিক মুক্তি, আত্মনির্ভরশীলতা ও প্রগতি অর্জন এবং সাম্রাজ্যবাদ, সম্প্রসারণবাদ, নয়া উপনিবেশবাদ আধিপত্যবাদের বিভীষিকা থেকে মুক্তির লক্ষ্যে বিএনপি গঠিত হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে নতুন দলের আহ্বায়ক কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে জিয়াউর রহমান প্রথমে ১৮ জন সদস্যের নাম এবং ১৯ সেপ্টেম্বর ৭৬ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করেন।


১৯৭৯ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় বিএনপি। ওই নির্বাচনে ২০৭টি আসন পেয়ে সরকার গঠন করে দলটি। ওই নির্বাচনে ৩৯টি আসন পেয়ে বিরোধী দল হয় আওয়ামী লীগ (মালেক)।


১৯৮১ সালের ৩০ মে চট্টগ্রামে বিপথগামী একদল সেনাসদস্যের গুলিতে শহীদ হন প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান। এরপর দলের কর্মীদের দাবি ও শীর্ষ নেতাদের অনুরোধে রাজনীতিতে আসেন জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বেগম খালেদা জিয়া। ১৯৮২ সালের ৩ জানুয়ারি বিএনপির প্রাথমিক সদস্যপদ গ্রহণ করেন খালেদা জিয়া। পরের বছর দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান হন খালেদা জিয়া।
১৯৮৪ সালে ১০ মে বিএনপির চেয়ারপার্সন নির্বাচিত হন বেগম খালেদা জিয়া। খালেদা জিয়া ও তাঁর দল বিএনপি এরশাদবিরোধী আন্দোলনে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বিএনপির অন্যতম অঙ্গ সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল ওই আন্দোলনে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কোনো ধরনের আপস না করার প্রতিজ্ঞা নিয়ে দীর্ঘ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে তখন এগিয়ে যায় বিএনপি। এরশাদ সরকারের পতনের পর ১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয় বিএনপি। ১৪০টি আসন নিয়ে সংসদে বৃহত্তম দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে বিএনপি। খালেদা জিয়া দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।


১৯৯৬ সালে ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও জয়ী হয় বিএনপি। ওই সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান পাস করে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন এ দলটি। পরে একই বছর সংসদ ভেঙে দিয়ে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুর রহমান বিশ্বাস বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। একই বছর অনুষ্ঠিত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিরোধী দল হিসেবে সংসদে যায় বিএনপি।


১৯৯৯ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে গঠিত হয় চার দলীয় জোট। ২০০১ সালের ১ অক্টোবর অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট। খালেদা জিয়া আবারও দেশের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন।


 ২০০৬ সালের ২৮ অক্টোবর তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করে বিএনপি। পরে খালেদা জিয়াসহ একাধিক শীর্ষ নেতাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় বিএনপির নেতৃত্বের মধ্যেও কোন্দল দেখা দেয়। এ সময় দলের মধ্যে নানা ষড়যন্ত্রও শুরু হয়। তবে তৎকালীন মহাসচিব খোন্দকার দেলোয়ার হোসেন ও স্থায়ীকমিটির সদস্য ব্রিগেডিয়ার (অব.) আ স ম হান্নান শাহসহ শীর্ষ নেতারা পরিস্থিতি অনুকূলে নিয়ে আসেন।

২০০৮-এর সাধারণ নির্বাচনে মাত্র ২৯টি আসন পায় বিএনপি। ২০০৭ সালের জরুরি অবস্থার সরকারের সময় খালেদা জিয়ার কারারুদ্ধ হওয়া এবং দল ভাঙনের চেষ্টা সংকটে ফেলে বিএনপিকে। নির্দলীয় সরকারের দাবিতে দু’দফা আন্দোলনের ব্যর্থতা, শীর্ষ ও তৃণমূল নেতাকর্মীদের নামে অসংখ্য মামলা আর গ্রেফপ্তার দলটিকে এক কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি এনে দাঁড় করিয়েছে।
বর্তমানে বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট নির্বাচনে সহায়ক সরকার দাবিতে আন্দোলন করছে। এরইমধ্যে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা দিয়েছেন দলের চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!