DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ,আমাদেরই বিজয়ের গৌরব বিরত্ব গাঁথা-ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজু।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  একটি জাতির ইতিহাসে তাদের জন্মলগ্ন কিংবা স্বাধীনতার বিষয়টি সবচেয়ে গুরুত্বপুর্ন একটি বিষয়।ইদানিং আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে নিয়ে অনেক কথাই শোনা যাচ্ছে বা আমাদের শোনানো হচ্ছে।

মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা সীমান্ত পার হয়ে ভারত গিয়েছিলেন, তারা মনে করেন তারাই হচ্ছেন আসল মুক্তিযোদ্ধা। দেশের সাধারন মানুষ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যে যুদ্ধ করলো সেটা তাদের কাছে কিছুই না। অথচ তারাই দাবি করেন ’৭১-এ জনযুদ্ধ হয়েছে। জনযুদ্ধতো জনগণের যুদ্ধ। গ্রামের আবালবৃদ্ধবনিতা যুদ্ধ করলো অথচ তাদেরই কোন খবর নেই।

মার্চে দেশে নতুন জাতীয় পতাকা উঠানো হলো। কিন্তু যুদ্ধের সময় এই পতাকা উড়ানো নেতারা কোথায় ছিলেন? তারা তো যুদ্ধের মাঠে না গিয়ে ভারতে নিরাপদ আশ্রয়ে ছিলেন। যুদ্ধের সময় প্রবাসী সরকার গঠন করা হলো। মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাস এ সরকারের কোনো মন্ত্রী ভারতের বাইরে যাননি কেনো?ভারতের সাহায্য সহযোগিতার প্রতি চীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলতে চাই,আমাদের দামাল ছেলেরাই দুর্ধর্ষ পাক বাহিনীর কেল্লা ফতে প্রায় শেষ করেই এনেছিলো,যার ফলে ডিসেম্বরের ৪ তারিখে মিত্র বাহিনী গড়গড়িয়ে ঢুকতে পেরেছিলো বাংলাদেশে।

পাক বাহিনীর নৃশংসতা তুলে ধরে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বিশ্বজনমত গড়তে তারা কোথাও না গিয়ে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর ইন্দিরা গান্ধীর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেন। শ্রীমতি গান্ধীর উপরই নির্ভরশীল ছিলেন সবাই।

’৭১-এ যারা ওপারে নিরাপদে ছিলেন তারাই সবসময় দেশের মুক্তিযোদ্ধাদের চেয়ে ভারতের সহায়তাকে বড় করে দেখতে অভ্যস্ত।তারাই বার বার বলেন,ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তা ছাড়া আমরা ৫০ বছরেও স্বাধীন হতে পারতাম না।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতি যথাযথ সন্মান ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলতে চাই ,কিছু লোক আজকাল সর্বস্ব হারানো মুক্তিযোদ্ধাদের ভূলে গিয়ে ৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ থেকে ১৬ ডিসেম্বর ১৯৭১, এই মাত্র ১৩ দিনের বীর ভারতীয় সেনা নায়কদের নিয়ে বড্ড বেশী মাতামাতি করে থাকেন।

 পাক -ভারতের আজন্ম দ্বন্দের একটা প্রতিফলন ঘটেছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় যখন পাকিস্তানের বিরূদ্ধে লড়ার জন্য ভারত বিভিন্ন ভাবে বাংলাদেশকে ব্যবহার করেছিল। ওই সময় পাকিস্তান ভারতের বিরূদ্ধে "অপারেশন চেঙ্গিস খান" নামক একটি আক্রমণ চালায় যা ভারতের পশ্চিম সীমান্তে ইন্দো-পাক যুদ্ধের সূচনা করে।

ওই যুদ্ধে জয় লাভের জন্য বাংলাদেশের চলমান স্বাধীনতা যুদ্ধকে ব্যবহার করার খুব সুক্ষ বুদ্ধি এঁটেছিলো ভারত। কারন ভারত জানত যে পাকিস্তানকে ইন্দো-পাক যুদ্ধে পরাজিত করার সবচেয়ে ভালো উপায় হল দ্বিমুখী আক্রমণে পাকিস্তানকে পর্যদুস্ত করা। এই জন্যই ভারত বাংলাদেশকে সাহায্য করার নামে সৈন্য পাঠায় ৩রা ডিসেম্বর ১৯৭১ এ !!

যাতে করে তারা এক ঢিলে দুই পাখি মারতে পারে। এভাবে একদিকে বাংলাদেশকে স্বাধীন করার সব কৃতিত্ব ভারত নিজেদের অধিকারে নিয়ে নেয় আবার বাংলাদেশের সাহায্য নিয়ে ইন্দো-পাক যুদ্ধে ভারত সহজে জয় লাভ করে যা বাংলাদেশের সাহায্য ব্যতিরেকে ভারত কখনোই পারতো না ।

দেখা যাচ্ছে আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে জয়লাভের কৃতিত্ব অনেকাংশেই আমাদের নিজেদের অথচ আমরা স্বিকার করতে দ্বিধা করছি।

ছি,ছি,ছি,কত নিকৃষ্ট হীনমন্যতা আমাদের । নিজেদের বিজয়ের কৃতিত্ব টুকু নিয়েও গর্বিত হতে পারিনা আমরা,কেনো???

লেখকঃ কানাডা প্রবাসী সাবেক সেনা কর্মকর্তা এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!