DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

আসুন দেশ বাঁচাতে সব ভেদাভেদ ভুলে সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলি: খালেদা জিয়া

begumz1 copy

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বলেছেন, কাল বিলম্ব না করে আসুন আমরা সব ভেদাভেদ ভুলে দলমত নির্বিশেষে সন্ত্রাস বিরোধী ঐক্য গড়ে তুলে শান্তিপূর্ণ ও নিরাপদ গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি। 

রোববার বিকেল রাজধানীর গুলশানে বিএনপি নেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। খালেদা জিয়া বলেন, কে ক্ষমতায় থাকবে আর কে ক্ষমতায় যাবে  সেটা আজ বড় কথা নয়। আজ আমরা যারা আছি , আগামীতে তারা হয়তো কেউ থাকবো না। দেশ থাকবে, জাতি থাকবে। সেই দেশ ও জাতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ আজ বিপন্ন। 

তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় জীবনের এক মহাসংকটের সময় এখন। গত শুক্রবার রাতে রাজধানী গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কের একটি স্প্যানিশ রেস্তোরাঁয় ভয়ংকর সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সেখানে অবস্থিত দেশী-বিদেশী নাগরিকদের জিম্মি করে। আইন-শৃংখলা বাহনীর সদস্যরা উদ্ধার অভিয়ান চালাতে গেলে সন্ত্রাসীদের গুলী-বোমায় দু’জন পুলিশ অফিসার নিহত ও অনেকে আহত হন। রাতেই সন্ত্রাসীরা তাদের হাতে জিম্মি দেশী-বিদেশী ২০ জন নিরপরাধ মানুষকে নৃশংসভাবে হত্যা করে। এই পৈশাচিক সন্ত্রাসী হামলা এবং নারীসহ দেশী-বিদেশী নির্দোষ নাগরিকদের এভাবে হত্যার ঘটনার নিন্দা জানাই। আমরা গভীর বেদনাহত এবং ক্ষুব্ধ। কোনো অজুহাতেই শান্তিপ্রিয় নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা সুস্থতার লক্ষণ নয়। 

সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ও বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের সঙ্গে আমরাও শংকিত। কারণ এই ঘটনায় আমাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতা ও ত্রুটি এবং সন্ত্রাসীদের সামর্থ প্রকটভাবে ফুটে উঠেছে। আমরা এর আগে সন্ত্রাসীদের চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে থাকলেও এখন চোরাগোপ্তা হামলার মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই। আমরা গভীর ভাবে উদ্বিগ্ন।
পৈশাচিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে প্রকাশ্যেই ভয়ংকর ছোবল হানছে বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন.  দুর্ভাগ্য জনক ভাবে বাস্তবতাকে অস্বীকার করে পরিস্থিতিকে আরেও অবনতির দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে। দৃশ্যমান শত্রুর তুলনায় অদৃশ্য শত্রুর হামলা মোকাবিলা এবং তাদের দমন করা অনেক কঠিন। এই কথা জানি বলেই আমরা এতোটা উৎকণ্ঠিত।

 

বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, কোন সুস্থ ও বিবেকবান মানুষ এধরনের কাপুরুষোচিত হামলা ও নিরপরাধ মানুষের হত্যাযজ্ঞকে মেনে নিতে পারেনা। এমন অযৌক্তিক, নিষ্ঠুর, হঠকারী ও ভুল পথে কোনো কিছুই অর্জন করা সম্ভব নয়।কোনো আদর্শ কিংবা ধর্মই এ ধরণের কান্ডজ্ঞানহীন সন্ত্রাসী কার্যকলাপ অনুমোদন করে না। শান্তির ধর্ম পবিত্র ইসলাম নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করা এবং সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। তাই সংযম সাধনার মহিমান্বিত মাস রমজানে এই রক্তপাত প্রতিটি ধর্মপ্রাণ মুসলমানকে স্তম্ভিত করেছে।

 

আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিও আজ সন্ত্রাসের বিষাক্ত ছোবল জর্জরিত বলে অভিযোগ করে খালেদা জিয়া বলেন, ভৌগলিক ও রাষ্ট্রীয় গন্ডি পেরিয়ে সন্ত্রাস আজ বিশ্বের দেশে দেশে রক্ত ঝরাচ্ছে।  এটা আমাদের জন্য নতুন এক ভয়াবহ জাতীয় সংকট। শুক্রবার রাতের ঘটনায় আক্রান্ত হয়েছে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তা, শান্তি, স্থিতিশীলতা, আমাদের বিশ্বাস ও আস্থা। আমাদের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড, ব্যবস্যা-বাণিজ্য, জীবনযাপন পদ্ধতি ও আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাই সকলের মিলিত প্রয়াসে আমাদেরকে এ সংকট মোকাবিলা করতে হবে।

তিনি বলেণ, আমাদের এই বিপদের দিনে সহানুভূতি ও সহায়তার প্রস্তাব নিয়ে যেসব বন্ধু রাষ্ট্র বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে, আমি তাদের ধন্যবাদ জানাই। আমি আশা করি আমাদের রাষ্ট্রীয় সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধা বজায় রেখে তারা সন্ত্রাস মোকাবিলায় সম্ভাব্য সকল ধরণের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। 

কেবল আইন শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান দিয়ে এই সন্ত্রাস মোকাবিলা করা যাবেনা বলে মন্তব্য করে খালেদা জিয়া বলেন, এই সংকটের শেকড় আরো অনেক গভীরে। সন্ত্রাস দমন কার্যক্রমকে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে গেলে এই সংকট আরো প্রকট আকার ধারণ করবে। এই বিষয়টির দিকে আমি সংশ্লিষ্ট সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করে সতেচন হবার আহ্বান জানাচ্ছি।
সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন,  জাতীয় জীবনের এমন সংকটে সেনাবাহিনীর সামর্থ ও অনিবার্য প্রয়োজন আরেকবার প্রমাণ করার জন্য। শুক্রবার রাতের রক্তক্ষয়ী ঘটনার অবসান ঘটেছে শনিবার সকালে আমাদের সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে পরিচালিত কম্যান্ডো অভিযানের মাধ্যমে। আমরা সাময়িক স্বস্তি পেয়েছি।  এই অভিযানে নৌবাহিনী, বিমান বাহিনী পুলিশ, র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন, সীমান্তরক্ষী বাহিনী, আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী অন্যান্য সংস্থা, অগ্নিনির্বাপক দল এবং গোয়েন্দা সংস্থা সমূহের যে-সব সদস্য অসম সাহসিকতার সঙ্গে দ্বায়িত্ব পালন করেছেন আমি তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছি। ঝুঁকি নিয়ে সংবাদ সংগ্রহের কাজে নিয়োজিত সাংবাদিকসহ কর্তব্যরত সংশ্লিষ্ট সকলকে আমি ধন্যবাদ জানাই। 

তিনি আরো বলেন, পুলিশ বাহিনীর যে দু’জন অফিসার উদ্ধার অভিযান চালাতে গিয়ে শুক্রবার রাতেই জীবন দিয়েছেন। আমি তাদের জন্য গভীর শোক প্রকাশ করছি। তাদের শোকার্ত স্বজনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। বিদেহী রুহের মাগফিরাত কামনা করছি। যারা আহত হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন, তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। তারা যেন দ্রুত সেরে ওঠেন, সেই দোয়া করছি।

আমাদের সকলকে মনে রাখতে হবে গণতন্ত্রহীন দেশে, স্বৈরাচারী শাসন, অসহিষ্ণু রাজনীতি, দমন-পীড়নের রাষ্ট্রব্যবস্থা, অধিকারহীন সমাজ, আইনের শাসনের অনুপস্থিতি, অর্থনৈতিক বৈষম্য-বঞ্চনা এবং সুশিক্ষার অভাব ক্রমাগত চলতে থাকলে সেখানে সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে বলে মন্তব্য করেন তিনি। 

তিনি আরো বলেন, সারা বাংলাদেশ আজ সন্ত্রাসের থাবায় ক্ষতবিক্ষত।  মসজিদের ইমাম ও মোয়াজ্জিম, মন্দিরের পুরোহিত, ধর্মগুরু ও যাজক, ভিন্ন মতের লেখক প্রকাশক-ব্লগার, খেটে-খাওয়া শ্রমজীবী মানুষদের নৃশংস ভাবে হত্যা করা হচ্ছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা আক্রান্ত হচ্ছে। নষ্ট হচ্ছে আমাদের সযতেœ লালিত সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ঐতিহ্য। কোথাও কেউ নিরাপদ নয়। এই আতঙ্ক, এই হত্যালীলা থামাতে হবে। বন্ধ করতে হবে রক্তপাত। আমাদেরকে একতাবদ্ধ হতেই হবে। জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। 

সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন, বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমেদ, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল( অব.) আ স ম হান্নান শাহ, ব্যারিষ্টার জমির উদ্দিন সরকার, ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান সালেহ প্রিন্স, শামা ওবায়েদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য টিএস আইয়ুব প্রমুখ।  
 

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!