DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিএনপিতে সুবাতাস ????????

bnpkz copyক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ গেলো সপ্তাহের কিছু ঘটনা কাউন্সিল পরবর্তি বিএনপির ঐক্যের জন্য অনুকূল পরিবেশ সৃষ্ঠির জন্য কাজ করবে বলে সকলের ধারনা।কারন বিএনপির জন্য শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে ভূল বোঝাবুঝির অবসান হলে বস্তুত তা দলের জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

আপাতঃ পরস্পরবিরোধী হিসেবে পরিচিত দুই নেতা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের মধ্যে বৈঠকের পাশাপাশি দলটির বেশ কয়েকজন নেতার সাম্প্রতিক তৎপরতায় বিএনপিতে নতুন মেরুকরণের আভাস পাওয়া গেছে।

বিএনপির ৬ষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলের পর এই মেরুকরণে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সঙ্গে গয়েশ্বর চন্দ্র রায়ের দূরত্ব কমে এলেও খানিকটা চাপের মুখে পড়েছেন দলটির নতুন সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী আহমেদ। এছাড়া, চাপ বাড়ছে গুলশান কার্যালয়ের প্রভাবশালী এক কর্মকর্তার ওপরও।

বলা হচ্ছে, ফখরুলবিরোধী বলয়ে ওই কর্মকর্তাই এখন নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু গত কয়েক বছর এ নেতৃত্বে ছিলেন স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, মির্জা আব্বাস, গিয়াসউদ্দিন কাদের চৌধুরী, বরকতউল্লাহ বুলু, আবুল খায়ের ভূঁইয়াসহ কয়েকজন। গত ১৯ মার্চের কাউন্সিল পর্যন্ত ফখরুলবিরোধী এ বলয়ের দৃশ্যমান তৎপরতা অব্যাহত থাকলেও ৩০ মার্চ তিনি ভারমুক্ত হয়ে পূর্ণ মহাসচিব হওয়ার পর পরিস্থিতি বদলাতে থাকে।

নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্রের মতে, পরিস্থিতির এই উত্তরণের নেপথ্য কারিগর হলেন দলের প্রভাবশালী যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান। তিনি প্রথমেই উদ্যোগী হয়ে মির্জা ফখরুল ও গয়েশ্বরের মধ্যে টেলিফোনে কথা বলার ব্যবস্থা করেন। এরপর মির্জা ফখরুলকে নিয়ে যান শান্তিনগরে স্থায়ী কমিটির প্রভাবশালী আরেক সদস্য তরিকুল ইসলামের বাসায়।

সর্বশেষ বুধবার (৬ এপ্রিল) তারই মধ্যস্থতায় নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত হয় মির্জা ফখরুল ও গয়েশ্বরের মধ্যকার বৈঠক। শুধু তাই নয়, ওই বৈঠক থেকে বেরিয়ে মির্জা ফখরুল বারডেম হাসপাতালে গিয়ে দেখা করেন তার বিরোধী বলে পরিচিত আরেক নেতা মির্জা আব্বাসের সঙ্গে।

সূত্রের দাবি, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকেও বৈরি নেতাদের সঙ্গে দূরত্ব কমিয়ে, সবার কাছে নিজেকে গ্রহণযোগ্য করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল মির্জা ফখরুলকে। সব মিলিয়ে তিনি পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা করেন। কয়েক নেতার সঙ্গে সাক্ষাতের পর এখন তিনি বেশ স্বস্তিতে আছেন বলে মনে করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, কাউন্সিলের পর ফখরুলবিরোধী নেতারাও পরিস্থিতি নতুন করে মূল্যায়ন করেন। কারণ তারা মহাসচিব পদে ফখরুলকে ঠেকাতে পারেননি। এছাড়া তরিকুল ইসলামকে সামনে এনে কোনও সুফল পাওয়া যায়নি।

ফলে এ অংশের নেতাদের ‘প্রাপ্তি’ নিয়েও বিশ্লেষণ শুরু হয়। বলা হয়, কাউন্সিলে দুই-দুটি (ব্যবস্থাপনা ও প্রচার) উপ-কমিটির আহ্বায়কের দায়িত্ব পালন করার পরও গয়েশ্বরের প্রাপ্তি সামান্য। উপরন্তু, একাধিক ঘটনায় তিনি নাজেহাল হয়েছেন, তার মান-সম্মান হানি হয়েছে। অথচ তিনি বিচার পাননি। 

এদিকে  ফখরুলবিরোধী বলয়ে থেকেও রিজভী আহমেদ শেষ পর্যন্ত তিনি সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হতে পেরেছেন। ফলে আপস-ফর্মুলা বা মধ্যস্থতাকারীরা ফখরুলের বিরোধিতা থেকে সরে আসার পরামর্শ দেন গয়েশ্বরকে।

তারা তাকে বোঝান, এমনিতে সিনিয়র নেতারা তার ওপরে ক্ষুব্ধ হয়ে আছেন। এছাড়া এত যুদ্ধ করারও দরকার নেই তার। ফলে গয়েশ্বরও পরিস্থিতি বুঝতে পেরে ফখরুলের ব্যাপারে ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন।

বুধবার ফখরুলকে তিনি আমন্ত্রণ জানিয়ে একসঙ্গে দুপুরের খাবারও খান। সূত্র জানায়, এর আগে কয়েকজন নেতাকে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় এমন অভিযোগও করেছেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার পর রুহুল কবির রিজভী আহমেদ তার কোনও খবর নেননি।

তবে, এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় অবশ্য কারও বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ করতে রাজি হননি। তিনি বলেন, পদ-পদবির জন্য কোনওদিন আমি রাজনীতি করিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ফখরুলের সঙ্গে বৈঠককে মেরুকরণ বলা ঠিক হবে না। তার সঙ্গে কোনওদিন আমার ঝগড়াঝাটি ছিল না। তিনি চা খেতে আসতে চেয়েছেন, আমিও তাকে দাওয়াত দিয়েছি। এছাড়া আমরা দু’জনে একই দল করি, চিরদিন তো কথা না বলে থাকব না। আমাদের একসঙ্গে কাজ করতে হবে।

জানতে চাইলে মির্জা ফখরুল বলেন, গয়েশ্বর বাবু ও আমি একদল করি। এছাড়া মহাসচিব হিসেবে দলে বিভেদ রাখাও আমার কাজ নয়। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করেই দলকে সামনের দিকে নিতে চাই। তাই দেখা হয়েছে। কথা হয়েছে। এটিকে মেরুকরণ না বলে সবারই ইতিবাচকভাবে দেখা উচিত।

এছাড়া স্থায়ী কমিটির প্রায় সব নেতার সঙ্গে আমার ধারাবাহিকভাবে দেখা হচ্ছে। দলের যুগ্ম মহাসচিব মোহম্মদ শাহজাহান মনে করেন, মহাসচিব নির্বাচিত হওয়ার পর মির্জা ফখরুল ইসলামের সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের ঘটনা কেবল সৌজন্য সাক্ষাতের অংশ। এর মধ্যে রাজনীতি খোঁজা উচিত হবে না।

তিনি বলেন, আমি এক্ষেত্রে সহযোগিতা করেছি। যেন ভুল বোঝাবুঝি থাকলেও তা মিটে যায়। উল্লেখ্য, কাউন্সিলের আগে সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব হওয়ার জন্য আরেকজন অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী বলে মনে করা হতো মোহম্মদ শাহজাহানকে। কিন্তু রিজভীকে ওই পদে নির্বাচন করায় তিনি কিছুটা ‘বঞ্চিত’ বলে দলের একটি অংশ মনে করে। পাশাপাশি কাউন্সিলের আগে থেকেই শাহজাহান দলের দুই অংশের সঙ্গেই ভারসাম্য রক্ষা করে চলতেন।

মির্জা ফখরুল ও গয়েশ্বর রায় দু’জনের সঙ্গেই তার সদ্ভাব ছিল। এই সখ্য দিয়েই দুই নেতার সঙ্গে দূরত্ব কমানোর উদ্যোগ নেন তিনি। কিন্তু দুই নেতার এই সমীকরণের সঙ্গে রিজভী আহমেদ সম্পৃক্ত ছিলেন না।

জানতে চাইলে রিজভী আহমেদ বলেন, এখানে মেরুকরণের কোনও বিষয় নেই। বরং সবার সঙ্গে মহাসচিবের বসার এই উদ্যোগটি ইতিবাচক। এতে দল শক্তিশালী হবে। আমিও চাই সবার সঙ্গে সবার সম্পর্ক ভালো ও অটুট থাকুক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!