DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সামনে ঘোর অন্ধকার,সংকট উত্তরনে চাই জাতীয় ঐক্যঃ বেগম খালেদা জিয়া

kzlondonক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  বাংলাদেশের ৩ বারের প্রধানমন্ত্রী এবং বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, “ঘরে বাইরে এখন কেউই আজ নিরাপদ বোধ করছেন না। চারদিকে আতংক, উৎকণ্ঠা ও উদ্বেগ গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে, যেন সামনে ঘোর অন্ধকার!”

বৃহস্পতিবার দেশের সার্বিক শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির বিবেচনায় গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে তিনি এসব কথা বলেন।

বেগম খালেদা জিয়ার বিবৃতিটি নিচে হুবহু তুলে ধরা হলো-

“২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারী একটি ভোটারবিহীন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার পর সরকার প্রধান অচিরেই আরেকটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন দেয়ার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে আসার পর দেশে আজ এক সর্বগ্রাসী কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থায় বিপর্যস্ত। যার ফলশ্রুতিতে শাসকদলের ক্ষমতা নির্ভর দম্ভ উল্লাষিকতা আর প্রশাসনের একাংশের সঙ্গে মিলে মিশে একনায়কতান্ত্রিক আচরণে মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।

সবাই এখন উপলব্ধি করতে পারছেন যে, এমনি ধরণের একটি পরিস্থিতিতে দেশ আজ গভীর সংকটেও নিপতিত। এখানে সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নেই, এমনকি আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর দু’জন সদস্য মাত্র ১৩ দিনের ব্যবধানে দুর্বৃত্তদের হাতে নিহত হয়েছেন।

অতি সম্প্রতি দু’জন বিদেশী’র দু:খজনক ও মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের পর একজন প্রকাশকও হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছেন। আমি এসব ঘটনায় নিহতদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করি। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবী করি। ঘরে বাইরে এখন কেউই নিরাপদ বোধ করছেন না। চারদিকে আতংক, উৎকন্ঠা ও উদ্বেগ গোটা জাতিকে গ্রাস করেছে, যেন সামনে ঘোর অন্ধকার! অথচ সরকার অবনতিশীল আইন পরিস্থিতির উন্নতিকল্পে উপযুক্ত পদক্ষেপ না নিয়ে উল্টো বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব জনাব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যিনি দীর্ঘদিন কারাগারে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে বিদেশে চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফেরার পর, তাকে পুনরায় কারাগারে পাঠিয়ে দেয়ায় আমি বিস্মিত। এমন একজন অসুস্থ রাজনীতিককে কারাগারে পাঠানো-সরকারের চরম অমানবিক ও অসহিঞ্চু দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় ছাড়া আর কিছু নয়। ইতোমধ্যে আমাদের দলের পক্ষ থেকে তার অসুস্থতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, কারন তিনি চিকিৎসাধীন ছিলেন এবং এ মাসের ২৪ তারিখে বিদেশী ডাক্তারের পরামর্শে তার আরো উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যাওয়ার ব্যাপারটিও নির্ধারিত ছিল।

কারাগারে মির্জা ফখরুলের স্বাস্থ্য’র অবনতি ঘটাই স্বাভাবিক এবং সরকার জেনে বুঝে একজন অসুস্থ মানুষকে পুনরায় কারাগারে প্রেরণ করার মধ্য দিয়ে তার জীবনে স্বাস্থ্য ঝুঁকিকে বাড়িয়ে তুলেছে।

গতকালও দলের স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য বাবু গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাকেও কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

দলের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দকে এভাবে একের পর এক কারাগারে বন্দী রাখার মধ্য দিয়ে সরকারের দুরভিসন্ধি রয়েছে। আমরা যখন সারাদেশে তৃণমূল পর্যায় থেকে কাউন্সিল করে দলকে পুনর্গঠনের উদ্যোগ নিয়েছি, তার পরপরই সারাদেশে দলের নেতা-কর্মীদের বিভিন্ন মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করা হচ্ছে। সরকারের এধরণের দমন নিপীড়ণ থেকে দলের বয়ো:জেষ্ঠ্য নেতারাও বাদ পড়ছেন না।

আজ বিএনপি’র হাজার হাজার নেতা-কর্মী মামলা, চার্জশীট, কারাজীবন আর সরকারের দমননীতির শিকারে পরিণত হয়েছেন। জনগণের ভোটাধিকার বঞ্চিত করে পাতানো তথাকথিত নির্বাচনের মধ্য দিয়ে আজ সরকার জনগণের কাঁধের ওপর জগদ্দল পাথরের মতো চেপে বসেছে-তারা তাদের অপশাসনকে প্রলম্বিত করার আকাংখায় দেশে এক অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

এ পরিস্থিতি দেশ-জনগণ-গণতন্ত্রের জন্য অশনিসংকেত। হিংসাশ্রয়ী রাজনীতির চর্চা করে সরকার দেশের সকল বিরুদ্ধমতকে দমনে আজ বেপরোয়া। তারা শুধু বিএনপিই নয়-নাগরিক সমাজ, অন্যান্য প্রতিষ্ঠান-ট্রান্সপ্যারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার বিরুদ্ধেও সরকারের সমালোচনা করায় ক্ষুব্ধ। এমনকি সরকারী রোষানলের বাইরে গণমাধ্যমও নয়। যারাই সরকারের অপশাসন, দু:শাসন, দুর্নীতির সমালোচনা করছে-সরকার তাদের বিরুদ্ধে খড়গহস্ত।

এধরণের অসহিঞ্চু মনোভাবের কারনে তারা ইতিমধ্যেই আরো বেশী করে জনবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে-যা সরকার মোটেই উপলব্ধি করতে পারছেন না। বিএনপি একটি গণতন্ত্র পন্থার দল। আমাদের দল কোনভাবেই কোন ধরণের উগ্র পন্থাকে সমর্থন করে না। সকল ধরণের সহিংসতার বিরুদ্ধেও আমাদের অবস্থান অত্যন্ত স্পষ্ট। কিন্তু সরকার দেশে-বিদেশে বিএনপি’র মতো একটি রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসী চরিত্রের কালিমা লেপনের যে অপপ্রয়াস চালাচ্ছে-তা দেশে বিদেশে কোন গ্রহণযোগ্যতা পায়নি এবং পাবেও না, বরং সরকারের ফ্যাসিবাদী রুপই আরো বেশী করে স্পষ্ট হয়ে উঠছে।

দেশ ক্রমাগত গভীর সংকটের দিকে এগুচ্ছে। আমাদের কাছে দেশের স্বার্থ বড়, জনগণের স্বার্থকেই আমরা অগ্রাধিকার দিয়ে থাকি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি, সর্বদলীয় বৈঠকের কথাও বলেছি। আমি বারবার জাতীয় সংকট মোকাবেলায় জরুরীভাবে জাতীয় সংলাপের আহবান জানিয়েছি আন্তরিকভাবে, কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে হলেও সত্য যে, সরকার আমাদের সে দাবীর প্রতি এখন পর্যন্ত কর্ণপাত করেননি।

সরকারকে উপলব্ধি করতে হবে বর্তমান রাজনৈতিক সংকটের কারন। সরকার নিজেই এই সংকট সৃষ্টি করেছে-যা ক্রমেই গভীর থেকে গভীরতর হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশে অবাধ-নিরপেক্ষ ও সকল দলের অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিলের পর থেকেই দেশে রাজনৈতিক সংকটের সূচনা। এ সংকট উত্তরণে সরকারকে সময় থাকতেই এর উপায় বের করতে হবে। আমাদের দল মনে করে নির্বাচনকালে একটি নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনতিবিলম্বে একটি নির্বাচনের আয়োজন এখন জরুরী। আমাদের সবার কতগুলো মৌলিক বিষয়ে আজ ঐকমত্য হওয়া আশু প্রয়োজন। তা হলোঃ

১. জনগণের ভোটাধিকার ফিরিয়ে দেয়া,

২ গণমাধ্যমকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া,

৩.সকল পর্যায়ে বিচার ব্যবস্থায় স্বাধীন বিবেচনাবোধে কাজ করতে উৎসাহিত করা,

৪.আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বাধীনভাবে কাজ করতে বাধা না দেয়া,

৫.দলীয়করণকৃত প্রশাসনকে দলীয় প্রভাবমুক্ত করে তাদের স্বাধীনভাবে কাজ করতে দেয়া এবং বর্তমান ক্ষমতাসীনদের আজ্ঞাবাহী নির্বাচন কমিশনকে নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পুনর্গঠন করা,

৬. রাজনৈতিক অসৎ উদ্দেশ্যে গ্রেফতারকৃত সকল রাজবন্দীদের মুক্তি দেয়া ও মিথ্যা মামলা তুলে নিয়ে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক চরিত্রকে ফিরিয়ে দেয়া।

ভুলে গেলে চলবে না যে, এভাবেই আমরা আমাদের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মুল্যবোধকে পুন:প্রতিষ্ঠিত করতে পারি। আমাদের এই দাবিসমুহ কোন দলীয় দাবি নয়। আমাদের এই দাবি জনগণেরও।

আমি এর আগেও প্রতিশ্রুতি দিয়েছি-ভবিষ্যতে ক্ষমতায় গেলে আমরা কোন হিংসাশ্রয়ী-অসহিষ্ণু রাজনীতিকে প্রশ্রয় দেবোনা। আইন শঙ্খলা বাহিনী, প্রশাসন, বিচার বিভাগ, গণমাধ্যম, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান দলীয় রাজনীতির প্রভাবের বাইরে কাজ করতে পারবেন।

আমি অনতিবিলম্বে দলের অসুস্থ ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, এম কে আনোয়ার, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমার উপদেষ্টা গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এর নির্বাচিত মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, যুগ্ম মহাসচিব আমান উল্লাহ আমান, রুহুল কবীর রিজভী, সাবেক সংসদ সদস্য ডাঃ দেওয়ান সালাউদ্দিন বাবু, কেন্দ্রীয় সদস্য সিলেট সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, হবিগঞ্জ পৌরসভার মেয়র জি কে গউস, কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপি‘র সিনিয়র সহ-সভাপতি শরিফুল আলম, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া জেলা বিএনপির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক যথাক্রমে হাফিজুর রহমান মোল্লা কচি ও জহিরুল হক খোকনসহ দলের ও অঙ্গসংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের গ্রেফতারকৃত কর্মী ও নেতৃবৃন্দের আশু মুক্তি দাবি করছি।

এছাড়া যাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে-তাদের বিরুদ্ধে আনীত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারেরও দাবি জানাচ্ছি। আমরা আশা করবো সরকার শুভবুদ্ধির পরিচয় দিয়ে দেশের এই ক্রান্তিকালে সংকট উত্তরণে গণতন্ত্র বিকাশের ক্ষেত্রকে সংকোচন না করে কর্তৃত্ববাদী মনোভাব থেকে সরে এসে একটি জাতীয় সংলাপের সূচনার পরিবেশকে উন্মুক্ত করবেন দেশ ও জাতির স্বার্থেই।”

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!