DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

বিএনপিতে নতুনের আবাহন

images (53)দৈনিক প্র্রথম বাংলাদেশ বিশ্লেষনঃ  সময় যত যাচ্ছে বিএনপিতে ততই জোরালো হচ্ছে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার দাবি। সিনিয়র কিছু নেতার আপত্তি থাকলেও বিএনপির হাইকমান্ড থেকে শুরু করে উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নেতাকর্মী চাইছেন, অপেক্ষাকৃত নবীন নেতারা এখন থেকেই দলের হাল ধরতে শুরু করুক। 



বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, প্রভাবশালী প্রবীণ নেতারা বলতে গেলে অবসরের কাতারে চলে গেছেন। তাই সময়ের প্রয়োজনে মেধাবী, অকুতোভয়, ত্যাগী, পরীক্ষিত তরুণ নেতাদের দলের চালিকাশক্তি হিসেবে কাজে লাগানোর উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। শুধু রাজপথের আন্দোলনে নয়, কূটনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন ও নীতিনির্ধারণী পর্যায়েও প্রবীণদের সমান সুযোগ নবীনদের দেয়ার বিষয়টি ভাবা হচ্ছে গুরুত্বের সঙ্গে।

 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১৯ জনের স্থায়ী কমিটির নেতাদের মধ্যে সক্রিয় মাত্র ৩ থেকে ৪ জন। নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে এমন ভঙ্গুর দশার কারণে দল যেমন সামনের দিকে এগোতে পারছে না তেমনি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলের কৌশলের কাছে একের পর এক মার খেতে হয়েছে।

তাই এই কমিটিতে পরিবর্তনের দাবি উঠছে তৃণমূল থেকে। এ অবস্থার পরবর্তী কাউন্সিলে নীতিনির্ধারণী কমিটিতে কমপক্ষে ৫ নেতাকে দেখা যেতে পারে অপেক্ষাতৃত নবীনদের মধ্য থেকে। এ ছাড়া মহাসচিব পদে আসতে পারেন অবভাবনীয়ভাবে একেবারে তরুণ কোনো নেতা।

এর মহড়া হিসেবেই ঢাকা মহানগরের সদস্য সচিব পদে হাবিব উন নবী খান সোহেলের মতো নবীন নেতাকে বসানো হয়েছে। শীর্ষ পর্যায়ের এক নেতা জানান, হাবিব উন নবী খান সোহেলের সফলতার ওপর অনেকটা নির্ভর করবে তারুণ্যনির্ভর নেতৃত্বের ভবিষ্যৎ। সোহেল সফল হলে অন্যান্য নেতৃত্বেও আসবে আমূল পরিবর্তন। আবেগ ও পরিবারতন্ত্রকে গুরুত্ব না দিয়ে যোগ্যতাকেই বেশি গুরুত্ব দেয়ার পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 



বিএনপি সূত্রমতে, নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতৃত্বের বাইরে আন্তর্জাতিক সম্পর্কোন্নয়নের ক্ষেত্রে নবীনরা এগিয়ে আসুক এমনই চাচ্ছেন বিএনপি চেয়ারপারসন।

এর অন্যতম প্রধান কারণ, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন ঠেকাতে কূটনৈতিক সফলতার দিকে তাকিয়েছিল বিএনপি। কিন্তু প্রবীণ ও অভিজ্ঞ হিসেবে পরিচিত দলের কূটনৈতিক টিম একেবারেই ব্যর্থ হয়। বিশেষ করে শমসের মুবিন চৌধুরীর নেতৃত্বে যে কূটনৈতিক তৎপরতা চালানো হয় তা পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে বলা যায়।

এজন্যই বর্তমানে এই দায়িত্ব পালন করছেন খোদ সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারুন্যের অহংকার দেশনাক তারেক রহমান। এরই মধ্যে সফলও হয়েছেন তিনি। ভারতীয় লবি শক্তিশালী করার ক্ষেত্রে দেখিয়েছেন অসামান্য সাফল্য। আগের কূটনৈতিক টিমের দৌড় যেখানে ভারতীয় হাইকমিশনার পর্যন্ত সীমাবদ্ধ ছিল, সেখানে দেশনায়ক তারেক রহমানের কূটনৈতিক কর্মকান্ড ভারতীয় শীর্ষপর্যায়ে পৌছাতে সক্ষম হয়েছে।

এ ছাড়া তারেক রহমানের নিযুক্ত নবীন প্রতিনিধি পর্যন্ত ভারতের উচ্চপর্যায়ের মন্ত্রীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে সক্ষম হচ্ছেন। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, তারেক রহমানের আস্থাভাজন হিসেবে পরিচিত স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. কাজী মাজহারুল ইসলাম দোলন সম্প্রতি ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ সরকারের উচ্চপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে দেখা করতে সমর্থ হয়েছেন। পাশাপাশি তাদের কাছ থেকে পেয়েছেন বিএনপির জন্য ইতিবাচক মনোভাবের ইঙ্গিতও। 



খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পর ৬টি প্রভাবশালী দেশের সরকারপ্রধানের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। কয়েকটি রাষ্ট্র থেকে এর ইতিবাচক জবাবও এসেছে।



সূত্রমতে, নীতিনির্ধারণী ও কূটনৈতিক বিষয়ের বাইরেও আন্দোলন সফল করার জন্য নবীনদের সামনে আনাকে সময়ের দাবি মনে করছেন বিএনপির হাইকমান্ড। এজন্য মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিতে নবীন নেতাদের আনার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের দুই বছর আগেই বিএনপি চেয়ারপারসন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু কিছু সিনিয়র নেতার পরামর্শে সেই সিদ্ধান্ত থেকে তাকে সরে আসতে হয়েছিল। তবে এখন তার নতুন সিদ্ধান্তে অনড় থাকার কথাই ভাবছেন। এর অংশ হিসেবে সিনিয়র নেতাদের আপত্তি পরও মহানগর সদস্য সচিব পদে হাবিব উন নবী খান সোহেলকে বসিয়েছেন। কমিটি গঠনের পরও এক সপ্তাহ ধরে চলেছে আবদুুল আউয়াল মিন্টুকে সেকেন্ডম্যানের অবস্থানে নিয়ে আসার বিভিন্ন চেষ্টা ও তদবির। কিন্তু আমলে নেননি বিএনপি চেয়ারপারসন।

 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, যেসব নবীনকে নেতৃত্বে আনার কথা ভাবা হচ্ছে এদের মধ্যে এগিয়ে আছেন '৯০-এর লড়াকু ছাত্রনেতারা। বিগত দিনের ত্রুটি, অর্জন এবং ভবিষ্যতের আন্দোলনের হিসাব-নিকাশ কষেই এ পথে হাঁটছে দলটি। ১৯৯০ সালের এরশাদবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ২২টি ছাত্র সংগঠন নিয়ে গঠিত 'সর্বদলীয় ছাত্রঐক্য'র যেসব নেতা পরবর্তী সময়ে বিএনপির রাজনীতির জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তারা আছেন হাইকমান্ডের সুনজরে।

তবে বিএনপি তিন দফায় সরকারের সময় রাজনৈতিক সুবিধা নিয়ে যারা বিত্তবৈভবের মালিক বনেছেন তাদের বিষয়ে কঠোর হবে বিএনপি। ৯০-এ ছাত্রইউনিয়ন ও ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালনকারী পরে বিএনপিতে যোগদানকারী মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, হাবীবুর রহমান হাবীব, ছাত্রদল নেতা কামরুজ্জামান রতন, সানাউল হক নীরুর মতো নেতাদের সামনের দিকে আনার কথাও ভাবা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন সফল নেতাদের আরো দায়িত্ব দেয়ার পক্ষেও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। 



জানা গেছে, শিগগিরই যুবদলের নতুন কমিটি দেবে বিএনপি। সেক্ষেত্রে ৯০-এর আন্দোলনে পরীক্ষিত নেতৃত্বকে আনার পক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন। আর সভাপতি হিসেবে ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকনই আছেন আলোচনার শীর্ষে। আবার ছাত্রদলের নেতৃত্বে আনতে চান ছাত্রদের। এবার বিবাহিত ও বয়সীদের বাদ দিয়ে নিয়মিত ছাত্রদের নেতৃত্বে আনা হবে বলে শোনা যাচ্ছে। এজন্য সারাদেশের প্রায় ১৩ হাজার নিয়মিত ছাত্রের তালিকাও করা হয়েছে।

 

অপেক্ষাকৃত নবীনদের নেতৃত্বে আনার বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান যায়যায়দিনকে বলেন, যোগ্য নেতাদের বিএনপি সব সময় মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছে। বয়স সবসময় বড় বিষয় হয়ে দাঁড়ায় না। সততা, যোগ্যতা, দক্ষতাটাই দায়িত্ব পালনের জন্য সবচেয়ে বড় বিবেচ্য বিষয়। নিশ্চয়ই অপেক্ষাকৃত তরুণরা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী নেতৃত্বে আসবে। 



আর ডাকসুর সাবেক জিএস খায়রুল কবির খোকন বলেন, '৯০-এর আন্দোলনে ছাত্রদের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য ছিল গণতন্ত্র উদ্ধার করা। স্বৈরাচার সরকারের ভয়ভীতির পাশাপাশি লোভও ছিল_ সেটাকে জয় করেই আন্দোলনে ছিলেন, সফলও হয়েছেন। ওই সময়ের অনেকেই এখন রাজনীতিতে নেই, অনেককে মূল্যায়নও করা হয়নি_ এতে ক্ষতিই হয়েছে। অনেক সময়ের পর হলেও এখন তাদের ব্যাপারে ভাবা হচ্ছে শুনে খুশি হয়েছেন। তাদের মেধা, দক্ষতা ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগালে দল ও দেশ অবশ্যই লাভবান হবে।

 

একই বিষয়ে সানাউল হক নীরু বলেন, দলের জন্য একসময় যারা ত্যাগ স্বীকার করেছেন অথচ এখন অবহেলিত তাদের নিয়ে ভাবা হচ্ছে শুনে ভালো লাগছে। দল সুযোগ দিলে আবারো যোগ্যতা প্রমাণ করতে চান তিনি। রাজপথের আন্দোলনের পাশাপাশি সর্বক্ষেত্রে নিজের সর্বোচ্চ উজাড় করতে চান বলেও জানান সাবেক এই ছাত্রনেতা।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!