DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

শামীম ওসমান যুক্তরাষ্ট্রে আজীবন নিষিদ্ধঃ কানাডায় ও নিষিদ্ধের কার্যক্রম চলছে

download (12)যুক্তরাষ্ট্রে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ সংসদ সদস্য শামীম ওসমান। দেশটির কালো তালিকার শীর্ষে তার নাম স্থান পেয়েছে। দেশে সন্ত্রাসের গডফাদার হিসেবে খ্যাতি পাওয়া এ সংসদ সদস্য এখন সুদূর আমেরিকাতেও নিষিদ্ধ হলেন। আর এ কারণেই তাকে ভিসা দেয়া হয়নি। ভিসার আবেদনের বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস তাকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে-আপনার আবেদনটি আজীবনের জন্য প্রত্যাখ্যান করা হলো।

এদিকে কানাডার সংশ্লিষ্ঠ কতৃপক্ষও শামীম ওসমানের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখছে।এক্ষেত্রে তার করা ২০০১ এর রিফিউজি আবেদন টিতে দেয়া তথ্য উপাত্ত যাচাই করে দেখা হচ্ছে বলে কানাডার আন্তর্জাতিক অভিবাসন বিভাগের সূত্র আমাদের জানিয়েছেন। উল্লেখ্য ২০০১ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত কানাডায় অবস্থান করেন শামীম ওসমান।তবে তার করা রিফিউজি ক্লেইমটি মুলতবি অবস্থায় ছিলো বলে জানা যায়।অবস্থদৃষ্টে মনে হচ্ছে কানাডা সরকারও  অতীত এবং বর্তমান অবস্থা বিবেচনা করে শামীম ওসমানকে কানাডায় নিষিদ্ধ করতে যাচ্ছে।

অন্যদিকে জাতিসংঘের ক্লিয়ারেন্স না আসায় ৪১৫ পুলিশ সদস্য সুদান ও লাইবেরিয়াতে জাতিসংঘের মিশনে যেতে পারছেন না। এ যাত্রা অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এ নিয়ে পুলিশ সদর দপ্তর কিছুটা দুশ্চিন্তাগ্রস্ত। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব সিকিউকে মুসতাক আহমেদ  জানান, সুদান ও লাইবেরিয়ার সরকারি আদেশ (জিও) জারির বিষয়টি সম্পর্কে জানি। এরপর কি হয়েছে ওই সম্পর্কে জানি না।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জে আলোচিত সেভেন মার্ডারের ঘটনার মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা চেয়ে আবেদন করেন শামীম ওসমান। নির্ধারিত দিনে তিনি ইন্টারভিউ দেন। ইন্টারভিউ দেয়ার দিনেই তাকে ভিসা না দেয়ার বিষয়টি জানিয়ে সায়মন সেন্টার থেকে পাসপোর্ট সংগ্রহ করতে পরামর্শ দেয়া হয়।

images (7)নির্ধারিত দিনে পাসপোর্ট সংগ্রহ করার সময় তাকে একটি চিঠি দেয়া হয়। ওই চিঠিতে ‘ভিসা পারমানেন্ট ডিনাই’ কথাটি লেখা ছিল। এরপর বিষয়টি নিয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন শামীম ওসমান। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের দূতাবাসের পক্ষ থেকে বলা হয়, তোমাদের তাকে (শামীম ওসমান) কিছু জানাতে সমস্যা হলে আমাদের কাছে পাঠাও। আমরা বিষয়টি বুঝিয়ে দিচ্ছি। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, যুক্তরাষ্ট্রের সিকিউরিটি ক্লিয়ারেন্স না মেলায় ও তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্রে শামীম ওসমানকে আজীবনের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।তাদের খাতায় শামীম ওসমান একজন ‘সন্ত্রাসের গডফাদার’।

 

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারি আদেশ জারির পরও এসব পুলিশ সদস্যরা জাতিসংঘের গ্রীন সিগন্যাল না পাওয়ার কারণে সুদান ও লাইবেরিয়া যেতে পারছেন না। ফলে মাঠ পর্যায় থেকে পুলিশ সদস্যদের ক্লোজ করে এনে তাদের আবার পুলিশ প্রশাসনের স্ব স্ব পদে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

এ নিয়ে মিশন প্রত্যাশী পুলিশ সদস্যরা রয়েছেন দুশ্চিন্তায়। সুদান ৩ ও ৪ এবং লাইবেরিয়া গমনেচ্ছুক পুলিশ সদস্যদের সরকারি আদেশে দেখা যায়, পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, সিনিয়র এএসপি, এএসপি, মেডিকেল অফিসার, ইন্সপেক্টর, সাব-ইন্সপেক্টর, কনস্টেবল এবং ড্রাইভাররা এ তালিকায় রয়েছেন। তারা বলছেন, নানা মহলে চেষ্টা তদবির করে মিশনের খাতায় নাম লিখিয়েছি। এখন যদি যেতে না পারি তবে সব কিছুই জলে যাবে। এতে আর্থিক ও মানসিক সব দিক থেকেই ক্ষতিগ্রস্ত হবো আমরা। কি করবো ভাই বলুন, আমরা গরিব মানুষ।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, এপ্রিলের শেষ দিকে সুদান ৩ ও ৪-এর জন্য ২৮০ জন এবং লাইবেরিয়ার জন্য ১৩৫ জনের সরকারি আদেশ জারি করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। আলাদা আদেশে বলা হয়, মিশনে কাজ করার জন্য যোগদানের প্রকৃত তারিখ থেকে এক বছরের জন্য প্রেষণে নিয়োগের সরকারি মঞ্জুরি জ্ঞাপন করছি। এ মিশনে যাতায়াত খরচসহ যাবতীয় ব্যয়ভার জাতিসংঘ বহন করবে। এরপর গত ৫ই মে তাদের ক্লোজ করে আনা হয় মেডিকেলসহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক বিষয় সেরে ফেলার জন্য।

তবে একই মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুদান গমনকারী পুলিশ সদস্যদের জানিয়ে দেয়া হয়, আপাতত আপনাদের মিশন স্থগিত থাকবে। এরপর একটি আদেশ জারি করে স্ব স্ব কর্মস্থলে ফেরত পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। লাইবেরিয়া গমনেচ্ছুকদের মাঠ পর্যায়ে ফেরত না পাঠালেও তাদেরকে এক থেকে দুই মাস অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, মিশনে যেতে হলে জোর তদবির চালাতে হয়। এরপর রয়েছে নানা হিসাবনিকাশ। এসব করে নাম ওঠানোর পর যেতে না পারলে কি অবস্থা হয়। দেশের প্রশাসনযন্ত্র সচিবালয়ে গানম্যান বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য হিসেবে কর্মরতদের মধ্যে অনেকেই মিশনে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। এরপর তাদের প্রত্যাহারও করা হয়েছে। এখন যেতে না পারায় সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরে নিয়োগ পাননি।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র মতে, জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে বর্তমানে ১২২টি দেশের মোট ৯৭ হাজার ৭২৯ জন শান্তিরক্ষী দায়িত্ব পালন করছেন। এর মধ্যে পুলিশের সংখ্যা ১১ হাজার ৯২৯ এবং সামরিক বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ৮৩ হাজার ৯৩৬। বাকি ১৮৬৪ জন জাতিসংঘের কর্মকর্তা-কর্মচারী।

বর্তমানে আটটি দেশে সরাসরি শান্তিরক্ষী বাহিনী (কনটিনজেন্ট) হিসেবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৬০৫২ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, জাতিসংঘের স্টাফ অফিসার ও সামরিক পর্যবেক্ষক হিসেবে ১১টি দেশ এবং মিশনে নিয়োজিত রয়েছেন ৫৫ জন। এছাড়া, গত ৩০শে এপ্রিল পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশের ১৮৪২ জন সদস্য জাতিসংঘে সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া, জেন্ডার ইস্যুকে প্রাধান্য দিয়ে সমপ্রতি দু’টি পূর্ণাঙ্গ নারী ইউনিট হাইতি ও কঙ্গোতে পাঠানো হয়েছে।

ওদিকে মিশনে সামরিক ও পুলিশ শান্তিরক্ষী পাঠানোর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছর শীর্ষ অবস্থানে ছিল। জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১১ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৩ সালের এপ্রিল মাসের শেষ দিন পর্যন্ত ২৮ মাসের মধ্যে ২০ মাসই বাংলাদেশ শীর্ষে ছিল।

তবে এ বছর এপ্রিলের শেষ দিনে এই প্রথমবারের মতো মাত্র ৯৮ জন বেশি শান্তিরক্ষী পাঠিয়ে শীর্ষ স্থান দখল করেছে ভারত। এখন দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বের সংঘাতপূর্ণ ৯টি দেশ আইভরি কোস্ট, লাইবেরিয়া, দক্ষিণ সুদান, কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, সুদান, পশ্চিম সাহারা, পূর্ব তিমুর, লেবানন ও হাইতিতে শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশে শান্তিরক্ষীরা জীবনবাজি রেখে কাজ করে যাচ্ছেন।

ওদিকে নারায়ণগঞ্জে সেভেন মার্ডারের ঘটনার আগে ও পরে থেকে আলোচিত নাম শামীম ওসমান। তার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ মানুষের মুখে মুখে। সেভেন মার্ডারের ঘটনার পর এ মামলার এক নম্বর আসামি নূর হোসেনের সঙ্গে তার কথোপকথন নিয়ে দেশ জুড়ে আলোচনা হয়। এরপর জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে কেঁদে ফেলে আবেগময়ী বক্তব্য দেন শামীম ওসমান। সংসদে সর্বশেষ বক্তা হিসেবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওসমান পরিবারের পাশে থাকার ঘোষণা দিয়ে বলেন, রাজনৈতিকভাবে হেয় করতে ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার হচ্ছে। রাজনৈতিকভাবে হেয় করার জন্য, কোন পরিবারকে ধ্বংস করার জন্য যে প্রচেষ্টা এ বিষয়ে জাতিকে সজাগ থাকতে হবে। যদি প্রয়োজন হয় এ পরিবারকে দেখাশোনা করবো।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!