DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

বিশাল অংকে নাগরিকত্ব কিনে কানাডা পালানোর পথ বন্ধ হচ্ছে রাঘববোয়ালদের!

index2দৈনিক প্রথম বাংলাদেশ অনুসন্ধানঃ তাজরীন ফ্যাশনস গার্মেন্টসের ১১১ জন শ্রমিক পুড়ে মারা যাওয়ার পর কানাডায় ‘আত্মগোপন’ করেছিলেন কারখানার মালিক দেলোয়ার হোসেন। দেলোয়ার হোসেনের মতো অনেক ধনীই এইভাবে কানাডায় বিনিয়োগ করে সেদেশের নাগরিকত্ব কেনেন ‘বিপদে পড়লে’ দেশত্যাগ করার বাসনায়।

কেবল ব্যবসায়ীরা নয়, দেশের রাজনীতিবিদদের মধ্যে শামীম ওসমান সহ অনেকেই এইভাবে কানাডায় নাগরিকত্ব কিনে রেখেছেন। কিন্তু সুযোগে পালিয়ে যাওয়ার জন্য এইভাবে কানাডায় নাগরিকত্ব কেনার দিন শেষ হয়ে আসছে।এভাবেই কানাডার টরেন্টো শহরের উপশহর মিশেশাগায় প্রায় দুই শতাধিক ধনাঢ্য রাজনীতিবীদ এবং ব্যবসায়ীরা বিলাসবহুল বাড়ী কিনে পরিবারদের স্থানান্তর করেছে ,যা কি বেগম গন্জ বলে পরিচিত।




images (1)বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে   কানাডা সরকার টাকা দিয়ে সে দেশের নাগরিকত্ব কেনার আইনটি বাতিল করতে চলেছে। পাশাপাশি যারা অনেক আগেই টাকা দিয়ে নাগরিকত্ব পাওয়ার জন্য আবেদন করেছিল, তাদের আবেদনপত্র বাতিল করে দিচ্ছে। অবশ্য, ভুক্তভোগী বিদেশীরা নিজেদের নাগরিকত্ব লাভে কানাডার সরকারের সাথে আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে।

 

গত ২৫ বছর ধরে বিনিয়োগের বদলে নাগরিকত্ব নীতি অনুসরণ করে আসছে কানাডা। আইন অনুসারে, কোন ব্যক্তি যদি ১.৬ মিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থের মালিক হয় ও কানাডায় ৮ লাখ ডলার বিনিয়োগ করে, তবে সে কানাডার নাগরিকত্ব লাভ করবে। বিশ্বের ধনকুবেরদের জন্য সহজেই কানাডার নাগরিকত্ব লাভের বড় মাধ্যম ছিল এই আইন।

 

যে কারণে অনেক ধনকুবের কানাডার নাগরিকত্ব পেতে দেশটিতে বিনিয়োগ শুরু করে। আবার অনেকে নিজের সহায়-সম্বল বিক্রি করেও দেশটিতে বিনিয়োগ করেছিল। তবে সম্প্রতি দেশটির ফেডারেল অভিবাসন কর্তৃপক্ষ এই আইনের আওতায় নাগরিকত্ব পাওয়া হংকং ও অন্যান্য দেশের এক হাজার ৪ শত ৬০ জন বিনিয়োগকারীর নাগরিকত্ব বাতিল করার আদেশ দিয়েছে।




কানাডার স্থানীয় অধিবাসীদের অভিযোগ, অর্থ লগ্নি করার মাধ্যমে যারা নাগরিকত্ব লাভ করে তারা কানাডাকে বিশেষ কিছু না দিয়েই সেদেশের স্বাস্থ্য ও শিক্ষা সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছে। আর স্থানীয়দের এমন অভিযোগের কারণে, গত ফেব্রুয়ারি মাসের বাজেটে ১৯ হাজার আবেদন বাতিল করে দিয়েছে দেশটির সরকার।

 

সরকারের এমন সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অটোয়ার আদালতে গিয়েছিলেন ধনকুবেররা। তাদের আবেদন বাতিল না করার জন্য কানাডার আদালতে আইনি লড়াইও চালাচ্ছেন। এছাড়া, বিনিয়োগকারীদের নাগরিকত্ব পাওয়ার আবেদন গ্রহণ না করলে আবেদনকারীরা ৫ মিলিয়ন ডলার করে ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে। মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবীদের মতে, সরকারকে মামলাকারীদের ১৬.৫ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।

প্রাথমিক অবস্থায় সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিনিয়োগকারীদের আবেদনের ১৮ থেকে ২৪ মাসের মধ্যে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কিন্তু বাস্তবতা সম্পূর্ণ ভিন্ন। অনেকেই ২০০৯ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত অপেক্ষা করছেন। অপেক্ষমানদের মধ্যে একজন চীনের নাগরিক নিজের দুর্দশার কথা জানিয়ে কানাডীয় সংবাদপত্র টরেন্টো স্টারকে বলেন, ‘আমি কানাডায় বিনিয়োগের জন্য আমার সেলুন বিক্রি করে দিয়েছি। এখন কানাডায় থাকার মত ভিসাও আমার নেই। আবার সেলুন না থাকায় কোন ধরণের আয়ও নেই।’




নাগরিকত্ব পাওয়ার পর সন্তানকে কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াবেন, এমন আশায় আগে থেকেই সন্তানকে ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করিয়েছিলেন আরেক চীনা রাষ্ট্রজন। কিন্তু তিনি এখনও কানাডার নাগরিকত্ব পাননি, তার সন্তানেরও কানাডার বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া হয়নি। সেই চীনা রাষ্ট্রজনের সন্তান এখন চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে।

বিনিয়োগের বিনিময়ে নাগরিকত্ব দেওয়ার আইনটি ১৯৮৬ সালে প্রণয়ন করে কানাডা সরকার। কিন্তু অনেক ধনকুবের কানাডার নাগরিক হওয়ার পরে আর কানাডায় বিনিয়োগ করে না। এমনকি কানাডা সরকারকে নিজেদের অর্জিত অর্থের জন্য কোনরূপ করও দেন না। একারণে সরকার ২০১২ সালে বিদেশীদের নাগরিকত্ব প্রদানের এই আইনটি বাতিল করে দিয়েছে। আর আইনটি বাতিল হওয়ার পর থেকে বিনিয়োগকারীরা কেবল বিদেশী হিসেবে কানাডায় বাস করতে পারবে, নাগরিকত্ব পাবে না।




মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবীদের মতে, কানাডার সরকার যদি মনে করে, বিদেশীদের নাগরিকত্ব প্রদানের আইনটি কোন কাজে আসছে না, তবে তারা সেটি রদ বা বাতিল করতেই পারে। তবে যারা দীর্ঘদিন আগে আবেদন করেছে ও নিজেদের নাগরিকত্ব লাভের জন্য অপেক্ষা করছে তাদেরকে ভিন্নভাবে দেখতে হবে। আর দীর্ঘদিন ধরে অপেক্ষা করাদের সংখ্যাও নেহাত কম না, ২০ হাজার। আইনজীবীদের মতে, প্রয়োজন হলে সরকার বিনিয়োগের সীমা আরো বৃদ্ধি করুক।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!