DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সেই রেশমার মায়ের স্বপ্নের বাড়ি!

image_87587_0ইট ভাঙছেন জোবেদা খাতুন। তার স্বপ্ন, নিজের একটা ভালো বাড়ি গড়বেন। তাই, নিজের ঘর তৈরির ইট নিজেই ভাঙছেন। এতে এক দিকে অলস সময়টা কাজে লাগছে, অন্যদিকে স্বপ্নের বাড়ি তৈরির জন্য মজুরির খরচটাও অন্তত কিছুটা কমছে।





এই জোবেদা খাতুন আর অন্য কেউ নন, সময়ের আলোচিত সাভারের রানা প্লাজা ট্রাজেডির মৃত্যুঞ্জয়ী রেশমার মা। রানা প্লাজার ধ্বংসস্তূপ থেকে ১৭ দিন পর উদ্ধারের পর এই রেশমা আলোচিত হয়েছেন বিশ্বজুড়ে। তার গ্রামের বাড়ি দিনাজপুরের ঘোড়াঘাটের কোশিগাড়ীতে এখন বাড়ি তৈরিতে ব্যস্ত রেশমার মা। ইতোমধ্যে দু’টো পাকা ঘর তুলেছেন। আরও তিনটি পাকা ঘর তৈরির প্রস্তুতি চলছে। এ কারণেই বাড়িতে বসে ইট ভাঙছেন রেশমার মা।





বাংলা নববর্ষের প্রথমদিন পহেলা বৈশাখে গ্রামের বাড়ি ঘোড়াঘাটে এসেছিলেন রেশমা। ছিলেন দু’দিন, দু’রাত্রী। না, এমনিতে আনন্দের বশে বেড়াতে আসেননি, এসেছিলেন লাশ নিয়ে। মৃত খালুর দাফন-কাফন ও দোয়া মাহফিলে। চারমাস পর গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন তিনি।





খালু দুদু মিয়া থাকতেন গাজীপুরের চান্দুরা চৌরাস্তা মোড়ে। সেখানে রিকশা চালিয়ে জীবীকা নির্বাহ করতেন। হঠাৎ তার মৃত্যু হয়। পহেলা বৈশাখে সকালে একটি পিকআপ ভ্যানে খালুর লাশ পাঠিয়ে দিয়ে সকালে নিজে ও মা জোবেদা এবং বোন আসমাকে নিয়ে হানিফ এন্টারপ্রাইজ কোচে উঠে বিকেলে ঘোড়াঘাটে পৌঁছেন রেশমা। ছিলেন দুদিন।





যাওযার সময় তিন হাজার টাকা দিয়ে যান মা জোবেদা খাতুনের কাছে। নতুন ঘর তোলার জন্য ফাঁকা জায়গায় মাটি ভরাট এবং বালু কেনার জন্য ওই টাকা দেন বলে জানিয়েছেন মা জোবেদা। মাসে মাসে দুই থেকে ৪ হাজার টাকা বিকাশের মাধ্যমে মায়ের কাছে পাঠান রেশমা। সরকারিভাবে প্রাপ্ত ৫০ হাজার, রানা প্লাজার ৫০ হাজার এবং বাড়ি জমি সংক্রান্ত বিরোধের সমঝোতায় এক ব্যক্তির কাছে প্রাপ্ত ৫০ হাজার এই মোট দেড় লাখ টাকায় দুটি পাকা ঘর তুলেছেন রেশমার মা। আরও তিনটি ঘর তোলার প্রস্তুতি চলছে। রেশমার বাড়ির সামনের মহাসড়কের ধারে স্থান পেয়েছে মৃতুঞ্জয়ী রেশমার ছবি সম্মিলিত বিশাল সাইন বোর্ড। রেশমার বাড়িতে এখন স্বাস্থ্য-সম্মত পায়খানা বসানো হয়েছে।





ঘোড়াঘাট উপজেলার ৩ নং সিংড়া ইউনিয়নের কোশিগাড়ী গ্রামের কৃষক মৃত আনসার আলী ও গৃহিনী জোবেদা খাতুনের দুই ছেলে তিন মেয়ের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রেশমা (২০)। বিয়ের পর স্বামী আব্দুর রাজ্জাক, মা জোবেদা, ভাই জয়েদুল, সাদেক ও মোঝো বোন আসমাসহ ৪ বছর ধরে রেশমা অবস্থান করছে ঢাকায়।





রেশমার মা জোবেদা তার সম্পর্কের এক নাতি আরজন আলীকে বিয়ে করেন। স্বামীর কাছ থেকে পৃথক হওয়ার চারমাস পর রেশমা চলে আসেন সাভারের রানা প্লাজার একটি গার্মেন্টেসে। রানা প্লাজা বিপর্যয়ের পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তাকে পাওয়ার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন।





স্থানীয় সাংবাদিক শহিদুল ইসলাম আকাশ জানায়, রেশমা সারা বিশ্বে স্থান করে নিয়েছে। রেশমার উন্নয়ন হলেও তার পরিবার এখনও বেহাল দশায় দিনাতিপাত করছে। রেশমার বড় ভাই জাহিদুল এখন ফেরি করে বারো ভাজা বিক্রি করছে। ছোট ভাই সাদেক ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছে। তার পালিত বাবা আরজন আলী খাবার হোটেলে শ্রমিকের কাজ করছে। তাদের অবস্থার উন্নতি হলে আমরা স্বার্থক হতাম।





রেশমার পালিত বাবা আরজন আলী জানায়, তাদের বাড়ির সামনে এক ব্যক্তি একটি ক্লিনিক তৈরি করছে। ক্লিনিকের প্রাচীর তাদের জায়গায় ঢুকে যাওয়ায় স্থানীয় সমঝোতা বৈঠকে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ ৫০ হাজার টাকা দিয়েছে তাদের। ওই টাকা দিয়েই তারা আরও পাকা ঘর তৈরির প্রস্তুতি নিয়েছে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!