DMCA.com Protection Status
title="শোকাহত

সরকারের সাথে হেফাজতের গোপন আতাত?ঘোষণা দিয়েও হেফাজতের আসামি ধরেনি পুলিশ!

image_85960ঢাকার শাপলা চত্বর থেকে বিতাড়িত করার দীর্ঘ একবছর পর নয়টি কঠিন শর্তে দিয়ে হেফাজতকে প্রকাশ্যে মাঠে নামালো সেই পুলিশ। তবে সেই শর্ত মানেনি দু’পক্ষই। পুলিশের পক্ষ থেকে মামলার আসামিদের সম্মেলনের মঞ্চে কোনোভাবেই থাকতে দেয়া হবে না এমন ঘোষণা দেয়া হলেও শেষ পর্যন্ত পুলিশের সেই দাবি ঠেকেনি। সম্মেলনের প্রথম দিনের দ্বিতীয় অধিবেশনে হেফাজত আমীর আহমদ শফীকে সঙ্গে নিয়ে মঞ্চে উঠেছেন পুলিশের করা ২৩ মামলার একাধিক আসামি!

হেফাজতের পক্ষ থেকে এটিকে সরকারের উচ্চপর্যায়ের সঙ্গে অলিখিত সমঝোতা দাবি করা হলেও পুলিশ বলছে, মামলার কোনো আসামিই পুলিশ দেখেনি। তবে আলোকচিত্রে মামলার আসামি হেফাজত নেতাদের উপস্থিতি স্পষ্টই দৃশ্যমান।
 
গত বছরের ৫ মে ঢাকার শাপলা চত্বরে অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগ, সরকারি ও বেসরকারি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে লুটপাটের ঘটনায় রাজধানীর মতিঝিল, রমনা এবং পল্টন থানায় দায়ের করা ৩টি হত্যা মামলাসহ মোট ২৩টি পৃথক মামলায় চট্টগ্রামের ১৫ হেফাজত নেতাকর্মীসহ ঢাকার অনেকের নাম পুলিশের দায়ের করা মামলায় রয়েছে।

এর মধ্যে একাধিক মামলায় হেফাজতের মহাসচিব আল্লামা জুনায়েদ বাবু নগরীসহ অনেক নেতাকর্মী হাজতবাস করেছেন ইতিমধ্যে। কেউ কেউ জামিনে থাকলেও বেশিরভাগই রয়েছেন পলাতক।

শুক্রবার বিকেলে শুরু হওয়া সম্মেলনের প্রথম দিনে হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা লোকমান হাকিমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী, সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা আশরাফ আলী নিজামপুরী, আজিজুল হক ইসলামবাদী, ঢাকা লালবাগ মাদরাসার মুফতি আবুল হাসনাত, যুগ্ম মহাসচিব মাহমুদুল হাসান, ঢাকা মহানগর নায়েবে আমীর এবিএম তাহের, প্রচার সম্পাদক আলতাফ হোসেন, কক্সবাজার জেলা হেফাজতের সাধারণ সম্পাদক ইয়াছিন হাবিব, ড. আফম খালেদ হোসেন, ড. মোস্তফা আল হোসাইনী, আজিজুল হক আলমাদানী, মাওলানা মুজিবুর রহমান যুক্তিবাদী, ঢাকা লালবাগ জামে মসজিদের খতিব মাওলানা শাখাওয়াত, আল্লামা মুফতি আমিনীর ছেলে মাওলানা আবুল হাসানাত আমিনী, দারুল মঈনুল মাআারিফ মাদরাসার মুহাদ্দিস মাওলানা ফোরকান আহমেদ, ফটিকছড়ি নানুপুর মাদরাসার মুহাদ্দিস আল্লামা কুতুব উদ্দিন, হাফেজ মহিউদ্দিন প্রমুখ।

হেফাজতের যেসব নেতার নামে মামলা রয়েছে তারা হলেন- হেফাজতের কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমীর আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নায়েবে আমীর শামসুল আলম ও তাজুল ইসলাম, যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহি, সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী, আল্লামা শাহ আহমদ শফির ছেলে ও কার্য নির্বাহী কমিটির সদস্য আনাস মাদানী, কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক ও সাহিত্য বিষয়ক সম্পাদক মুফতি হারুন ইজহার (কারাগারে), হাটহাজারী উপজেলা পরিষদেও ভাইস চেয়ারম্যান নাছিল উদ্দিন মুনীর, চট্টগ্রাম মহানগরের যুগ্ম-সম্পাদক আজিজুল হক আল মাদানী, আব্দুল মালেক হালিম, হাটহাজারী মাদরাসার শিক্ষ হাফেজ মোহাম্মদ ইয়াহিয়া, মাহনগরের যুগ্ম-সম্পাদক কারী ফজুলর করিম জিহাদী, হাটহাজারী উপজেলার সভাপতি মাওলানা হাবিবুল হক বাবু ও মাওলানা মীর ইদ্রিছ।

তবে ২৩ মামলার আসামিদের মধ্যে অনেকেই সিএমপি সদর দপ্তরের একশ গজের মধ্যে পুলিশি প্রহরায় সম্মেলনের প্রথম দিন বক্তব্য রেখেছেন।

হেফাজতকে দীর্ঘ একবছর পর প্রকাশ্যে সম্মেলন করার অনুমতি দেয়া প্রসঙ্গে গত ১০ এপ্রিল সিএমপির উপ-কমিশনার (হেড কোয়াটার্স) মাসুদ উল হাসান বাংলামেইলকে বলেছিলেন, ‘দেশের বর্তমান পরিস্থিতি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুকূলে থাকায় বিশেষ শর্তে তাদের (হেফাজত) সম্মেলনের অনুমতি দেয়া হয়েছে। যাদের নামে মামলা রয়েছে তাদের সমাবেশ থেকে গ্রেপ্তার করলেও কোনো ধরনের কথা বলা যাবে না। আগের মতো রাজপথে অবস্থান নিয়ে যানবাহন চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা যাবে না। এরকম মোট ৯টি শর্ত মেনে নিয়েই তারা সম্মেলন করার অনুমতি পেয়েছে।’

তবে যাদের নামে মামলা রয়েছে এরকম অনেক নেতাই সম্মেলন মঞ্চে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে শুক্রবার রাতে পুলিশ কর্মকর্তা মাসুদ উল হাসান বাংলামেইলকে বলেন, ‘শর্ত মেনে নিয়েই হেফাজত শান্তিপূর্ণভাবে প্রথম দিনের সম্মেলন শেষ করেছে। মামলা ছিল এরকম কেউ সম্মেলনে উপস্থিত ছিল কি না তা আমাদের চোখে ধরা পড়েনি। একজন অতিরিক্ত উপ-কমিশনারের তত্ত্বাবধায়নে মাঠে একজন উপ-কমিশনারের নেতৃত্বে বিষয়টি মনিটরিং করা হয়েছে। আমাদের হাতে থাকা মামলার আসামিদের মধ্যে কেউ ছিল না। হয়তো ঢাকার মামলায় কেউ থাকলেও থাকতে পারে।’

তবে হেফাজত ইসলামের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামবাদী বাংলামেইলকে বলেন, ‘শান্তিপূর্ণভাবেই আমরা সম্মেলনের প্রথম দিন শেষ করেছি। পুলিশ আমাদের কোনো নেতাকর্মীকে ডিস্টার্ব করেনি।’

বিশেষ শর্তে সম্মেলনের অনুমতি পাওয়ার বিষয়ে পুলিশের দাবি সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আজিজুল হক বলেন, ‘এই ধরনের কোনো বিশেষ শর্ত মেনে নিয়ে সম্মেলন করা হচ্ছে না। আমাদের আমীর সাহেবের সাথে সরকারের উচ্চপর্যায়ের নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। এখানে পুলিশ শুধু আনুষ্ঠানিক ভূমিকা পালন করছে। যা হচ্ছে সব ওপরের নির্দেশেই হচ্ছে।’

তারই বক্তব্যের সমর্থন পাওয়া গেল হেফাজত আমীর আহমদ শফীর বক্তব্যে। সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘এখানে হাসিনা ও সরকারের লোকজন আসতে না পারলেও ওনার মানুষ এখানে আছে। আওয়ামী লীগ ও সরকারে সমর্থন রয়েছে আমাদের সম্মেলনে।’

সরকার, প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের সাথে হেফাজত ইসলামের কোন শত্রুতা নেই, তাই তাদের শত্রু ভাবা যাবে না বলেও মন্তব্য করেছেন সংগঠনটির আমীর আল্লামা শাহ আহমদ শফি।
 
এদিকে শুক্রবার সন্ধ্যায় ঢাকার শাহবাগে সরকার ও আওয়ামী লীগের মধ্যে ঘাপটি মেরে থাকা ‘জামায়াত-শিবির’ চক্র গণজাগরণ মঞ্চের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মন্তব্য করেছেন গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!