DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ফটিকছড়িতে মর্মান্তিক দুর্ঘটনা : আহত ১৪, মাইক্রোর সিলিন্ডার বিস্ফোরণে নিহত ৩

01.1.fatickchari-17.0314--ফটিকছড়ির সুয়াবিলে গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে একই পরিবারের ৩ জন নিহত এবং ১৪ জন আহত হয়েছে। আহতদের মধ্যে পাঁচ জনের অবস্থা আশংকাজনক। হতাহতরা সবাই ফটিকছড়ি উপজেলার ভুজপুর থানার হারুয়ালছড়ি ইউনিয়নের ৮নং ওয়ার্ডের ইসলাম সওদাগরের বাড়ির বাসিন্দা।
গতকাল সোমবার দুপুর সাড়ে ১২টায় নাজিরহাট কলেজ সংলগ্ন সুয়াবিল ইউনিয়নের নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কের ইসলাম কোম্পানির  ব্রিকফিল্ডের সামনে মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটে। নিহত তিন জন হলেন, আব্দুস সাত্তারের স্ত্রী পারভিন আকতার (৩৫), মৃত ইসমাঈলের স্ত্রী হালিমা খাতুন (৬০) এবং মৃত আব্দুর রউফের স্ত্রী বুলবুলি বেগম (৬০)।
আহতরা হলেন, সামশুল আলমের মেয়ে শারমীন আকতার (১১), শফিউল আলমের মেয়ে লাভলি আকতার (৯), শাহা আলমের স্ত্রী মরিয়ম বেগম (৫৫), আব্দুস সাত্তারের মেয়ে সুমি আকতার (১০), মোহাম্মদ শফির মেয়ে প্রমি (৯)। যার মধ্যে প্রমি আকতার ও সুমি আকতারকে চমেকে প্রেরণ করা হয় এবং প্রমির আবস্থা আশংকাজনক বলে জানা যায়। বাকিদের ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। হাইচ চালক ইসমাঈল (২২) ঘটনার পর হতে পলাতক রয়েছে। যাত্রীবাহী হাইচ মাইক্রোটি ছিল ভাডায় চালিত কালো রংয়ের যার নাস্বার  চট্টমোট্রো চ ১১-১৭২০।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ইসলাম সওদাগরের বাড়ির বাসিন্দা জনৈক মৃত আব্দুর রউফের মেজ ছেলে মুহাম্মদ শফি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে আরব আমিরাতে অবস্থান করছেন। গতকাল ছিল প্রবাসি শফির দ্বিতীয় বারের মত দেশে ফেরার দিন। এর আগে তিনি (শফি) পরিবারকে বিমান বন্দরে তাকে রিসিভ করার জন্য গাড়ি নিয়ে আসতে বলেন।। শফিকে বিমানবন্দর হতে রিসিভ করার জন্য তার পরিবার সদস্য ও আত্মীয়-স্বজন মিলে মোট ১৬ জনের একটি দল ভাডায় চালিত হাইচে করে গতকাল ভোরে ফটিকছড়ি হতে বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। সকাল ৮টার আগে তারা  বিমান বন্দরে পৌঁছে যায়। সকাল ৯টায় শফি চট্টগ্রাম শাহ আমানত বিমান বন্দরে নামেন। সকাল ১০টার সমান্য আগে তিনি বিমান বন্দরের প্রয়োজনীয় আনুষ্ঠানিকতা সেরে বের হন। বের হওয়ার দীর্ঘ দিন পর স্বজনদের দেখে সবার সাথে কোলাকুলি কওে সানন্দে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দেন। দুপুর ১২টায় তারা নাজিরহাট বাজার অতিক্রম করে। নাজিরহাট কলেজ অতিক্রম করে গাড়িটি যখন সুয়াবিল ইউনিয়নের জিরো পয়েন্টে আসে তখন গাড়ির ভিতরের প্রথম সিটে বসা শফির নাকে পোড়া গন্ধ লাগে। গন্ধের উৎস খুঁজতে নিচে উঁকি মেরে ধোঁয়া দেখতে পান। বিষয়টি সাথে সাথে চালককে জানালে চালক গাড়ির গতি কমিয়ে নাজিরহাট-কাজিরহাট সড়কের ইসলাম কোম্পানির ব্রিকফিল্ডের সামনে সড়কের একপাশে গাড়ি থামায়। ততক্ষণে গাড়ির ভিতরে আগুন ধরে যায়। চালক গাড়ি থেকে নেমে পেছনে এসে দরজা খোলার ৫ মিনিটের মধ্যে বিকট শব্দে গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়। সাথে সাথে পুরো গাড়িতে আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এই সময়ের মধ্যে গাড়ির ভিতরের তিন সিটের যাত্রীরা বের হতে পারলেও সিলিন্ডারের পেছনের সিটের তিন যাত্রী বের হতে পারেননি। ওই সিটের নিচেই সিলিন্ডারটি ছিল। বিস্ফোরিত সিলিন্ডারের টুকরায় যাত্রীদের শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ উড়ে যায়। তাদেরকে উদ্ধারের সময়টুকুও পাওয়া যায়নি। গাড়ির মধ্যেই তারা কয়লা হয়ে যায়। নিহত হালিমা খাতুন হচ্ছেন প্রবাসী শফির মা, বুলবুলি বেগম শাশুড়ি ও পারভীন আক্তার ভাবী।
প্রতেক্ষ্যদর্শীরা জানান, শব্দ শুনে তারা ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখেন আগুনের তীব্রতা এত বেশী ছিল যে মনে হচ্ছিল কেউ পেট্রোল ঢেলে আগুন জালাচ্ছে। তাছাড়া ঘটনাস্থলের আশপাশে কোন পানির ব্যবস্থা না থাকাতে আগুন নিভাতে সময় লেগে যায়।
বিস্ফোরণে মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে যাওয়া কিশোরী নাছু আকতার জানান, আমি আমার ফুফাকে আনতে বিমান বন্দরে গিয়েছিলাম। আসার সময় গাড়ির মধ্যে আমরা সবাই অনেক আনন্দ করে। গাডিটি ঘটনাস্থলে আসার একটু আগে আমার মামা প্রথমে ধোঁয়া দেখে চালককে গাড়ি থামাতে বলে। গাড়ি থামানোর আগেই আমরা গাড়ির ভিতরে আগুন দেখতে পাই। গাড়ির পিছনের দরজা খোলার সাথে সাথে তাড়াহুড়া করে আমরা বের হই। সবার আগে তিনি বের হওয়ার কথা উল্লেখ করে বলেন, গাড়ির দরজা খোলার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণের শব্দ শুনেন। সাথে সাথেই গাড়িতে আগুন ধরে যায়।
মুহাম্মদ শফি জানান, জীবিকার তাগিদে ৫ বছর ধরে তিনি দুবাইতে অবস্থান আছেন। দুবাই যাওয়ার ২ বছর পর একবার দেশে আসেন। গতকাল সবাইকে নিয়ে আনন্দ করে বাড়িতে আসার ইচ্ছে থেকেই পরিবারের সদস্যদের বিমান বন্দর যাওয়ার কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেই আনন্দ এখন বিষাদে রূপ নিয়েছে। সবাইকে নিয়ে ঘরে ফেরা হল না। খোদা আমার আশা পূর্ণ হতে দিলনা। ‘আমি এই শোক কিভাবে কাটিয়ে উঠব। আল্লাহ আমাকে নিলনা কেন’। এভাবে বিলাপ করে কাঁদতে কাঁদতে শফি বলেন, গাড়িটি পূর্ব থেকে ত্রুটিপূর্ণ ছিল। বিস্ফোরণের পর অনেক চিৎকার করার পরও সামনে কেউ আসেনি।
নাজিরহাটস্থ ফটিকছড়ি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, দুপুর ১টা ২০ মিনিটে আহতদের হাসপাতালে আনা হয়। প্রমি ও সুমির আঘাত গুরুতর হওয়ার কারণে তাদেরকে চমেকে রেফার করা হয়েছে বলে দায়িত্বরত চিকিৎসকরা জানিয়েছেন।
ভুজপুর থানার ওসি কবীর হোসেন জানান, দুপুরের মর্মান্তিক ঘটনার খবর শোনার পরপর তিনি ঘটনাস্থলে পৌঁছে সুরাতহাল সংগ্রহ করেছেন। আগামীকাল (আজ) নিহতদের কংকাল ময়নাতদন্তের জন্য পাঠানো হবে।এদিকে এ ঘটনায় বেচে যাওয়া অন্য সদস্যরা হলেন, শফি (২৯) নুরুল হক (৪০), নাছির (৩০), মরিয়ম (৬৫), জাহেদ (১৫), শাহেদ (১০), নাছরিন (১৭), সাথী (৪), শারমিন (১০), লাভলী (৯), এমরান (১৫), আরাফাত (৮), আরমান (৮), সুমি (১০), প্রমি (৯)।এ ঘটনায় পুরো এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। নিজের চোখের সামনে এমন মর্মান্তিক দুর্ঘটনা মেনে নিতে পারছেনা কেউ। এ ছাড়া মাকে হারিয়ে নির্বাক প্রায় নিহত পারভীনের ছোট তিন ছেলে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!