DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

সচিবালয়ে সাংবাদিক রোজিনা ৫ঘন্টা ব্যাপী হেনস্থা,উল্টো তার বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার!!!!

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য গতকাল সোমবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গেলে প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলামকে সেখানে পাঁচ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রেখে চরম হেনস্তা এবং মারধোর করা হয়। একপর্যায়ে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।  রাত সাড়ে আটটার দিকে পুলিশ তাঁকে শাহবাগ থানায় নিয়ে যায়। রাত পৌনে ১২টার দিকে পুলিশ জানায়, রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে মামলা হয়েছে। তাঁকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।

এই ঘটনার প্রতিবাদে সাংবাদিকেরা বিকেলে সচিবালয়ে এবং রাতে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভ করেন। এর নিন্দা জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে), অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালসহ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংগঠন। এ ছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের ব্যক্তিরা ঘটনার প্রতিবাদ জানাচ্ছেন।

জানা যায়, রোজিনা ইসলাম পেশাগত কাজে গতকাল দুপুরের পর সচিবালয়ে যান। বেলা তিনটার দিকে সচিবালয়ে দায়িত্ব পালন করা সাংবাদিকেরা জানতে পারেন, রোজিনা ইসলামকে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের সচিবের একান্ত সচিবের কক্ষে আটকে রাখা হয়েছে। তাঁর মুঠোফোন কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এই খবর পেয়ে সাংবাদিকেরা সেখানে ছুটে যান। যে কক্ষে রোজিনাকে আটকে রাখা হয়েছিল, সেখানে কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে দেখা যায়। কক্ষের বাইরে আরও কয়েকজন পুলিশ সদস্য ছিলেন। কয়েকজন সাংবাদিক কক্ষের ভেতরে গেলে রোজিনা ইসলাম বলেন, তাঁকে মিজান নামের এক পুলিশ সদস্য নাজেহাল করেছেন।

আসলে কী ঘটেছে, জানতে উপস্থিত সাংবাদিকেরা কয়েক দফা স্বাস্থ্যসেবাসচিব লোকমান হোসেন মিয়ার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করেন, কিন্তু তিনি কথা বলতে চাননি। উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে দেখাও করেননি। দীর্ঘ সময় ধরে রোজিনাকে আটকে রাখার কারণ সম্পর্কে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অন্য কর্মকর্তারাও পরিষ্কার করে সাংবাদিকদের কিছু বলেননি।

কিন্তু একজন নারীকে এভাবে দীর্ঘক্ষণ আটকে রাখার কারণ না বলায় একপর্যায়ে সাংবাদিকেরা ক্ষোভ জানান। তাঁরা রোজিনা ইসলামকে হেনস্তা ও আটকে রাখার প্রতিবাদ করেন। রোজিনা ইসলামকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার জন্যও তাঁরা বলতে থাকেন।

ঘটনার বিবরনঃ

সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম দাবি করেছেন, সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য তিনি পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অপেক্ষা করছিলাম, এসময় পিএস সাইফুল ইসলাম নথিপত্র গায়েবের অভিযোগ তুলে তার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ কনস্টেবল ডেকে তার শরীরে হাত দেন। তাকে সাজানো অভিযোগে পিএস আটকে রাখে বলে দাবি করে তিনি বলেন, তিনি কোনো নথিপত্র নেননি।

প্রথম আলো সংবাদকক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সোমবার বেলা সাড়ে তিনটার দিকে সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। তাকে সেখানে একটি কক্ষে ৫ ঘন্টা আটকে রাখা হয় এবং তার মোবাইল ফোন কেড়ে নেওয়া হয়। একপর্যায়ে সেখানে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। তার বিরুদ্ধে কী অভিযোগ তা জানতে স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবসহ কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো বক্তব্য দেননি।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান পরে রাত ৯টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য দেখে তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা নিয়ে যেতে পারেন না। তখন পুলিশকে জানানোর পর মহিলা পুলিশ এসেছে। তাকে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব সিব্বির আহমেদ শাহবাগ থানায় সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে সরকারি নথিপত্র সরানোর অভিযোগ দায়ের করেছেন।

 

 

এ বিষয়ে, রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার সাজ্জাদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে রোজিনাকে পুলিশে সোপর্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ হচ্ছে, উনি সরকরি গোপন নথি সরাচ্ছিলেন। উনার দেহ তল্লাশী করে নথি পাওয়া গেছে। রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় অফিশিয়াল সিক্রেট আইনের (১৯২৩) ৩ ধারায় মামলা হয়েছে। একজন উপ-সচিব বাদী হয়ে মামলা করবেন’।

উল্লেখ্য, অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট, ১৯২৩ এ আইনের ৩ ধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ স্থানে যদি কেউ যায় বা যেতে উদ্যত হয় কিংবা ওই স্থানের কোনো নকশা বা স্কেচ তৈরি করে বা কোনো গোপন তথ্য সংগ্রহ বা প্রকাশ করে তবে সে অপরাধী হবে। ৩ (ক) ধারায় বলা হয়েছে যে, নিষিদ্ধ স্থানের কোনো ফটো, স্কেচ বা নক্সা কেউ প্রকাশ করতে পারবে না। ৪ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো বিদেশী এজেন্টের সঙ্গে যোগাযোগ করে খবর সংগ্রহ করা যাবে না। ৫ ধারায় বলা হয়েছে যে, কোনো ব্যক্তি গোপনে কোনো সংবাদ পেয়ে থাকলে সেই সংবাদ প্রকাশ করতে পারবে না। কোনো সংবাদপত্র যদি কোনো গোপন সংবাদ প্রকাশ করে তবে প্রতিবেদক, সম্পাদক, মুদ্রাকর এবং প্রকাশক অপরাধী হবেন। এসব কাজে সহায়তা করা অপরাধ বলে গণ্য হবে। ৩৭৯/৪১১ এই ধারার অর্থ হলো,যদি কোন ব্যক্তি অন্যের অজান্তে কোন জিনিস চুরি করেন তবে ৩৭৯ ধারায় মামলা দেয়া হয়,আর যদি উক্ত মালামাল সহ ঐ আসামী কে ধরা হয় বা গ্রেফতার করা হয় তবে ৪১১ ধারায় রিকভারি দেখানো হয় । এ ক্ষেত্রে আসামীর সাজা হবেই বলে আইনে আছে ।

 

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!