DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

ব্যপক সুযোগ-সুবিধার নয়া আইন,সিইসি ও কমিশনার পদে ৬ মাস থাকলেই আজীবন পেনশন।

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ও নির্বাচন কমিশনার পদে ন্যূনতম ৬ মাস দায়িত্ব পালন করলেই আজীবন পেনশন সুবিধা পাওয়া যাবে।

দ্বায়িত্ব পালনের মেয়াদ অনুসারে নির্ধারিত হবে মাসিক টাকার অঙ্ক। এসব বিষয় রেখে ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের (সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধাদি) আইনের খসড়া তৈরি করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। খসড়ায় সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের বেতন, গাড়ি, বাড়ি, যাতায়াতসহ অন্যান্য সুবিধাদি টাকার অঙ্কে উল্লেখ করা হয়েছে।

বিদ্যমান আইনে সুযোগ-সুবিধাদি টাকার অঙ্কে বলা নেই। শুধু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের আপিল বিভাগের বিচারপতি ও নির্বাচন কমিশনারদের হাইকোর্টের বিচারপতির সমান সুযোগ পাওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে আইনে।

খসড়ায় বিদ্যমান অধ্যাদেশ রহিত করার প্রস্তাব করা হয়েছে। ওই অধ্যাদেশের অধীন নেয়া বিগত দিনের কার্যক্রম নতুন আইনের আওতায় নিয়ে আসার প্রস্তাব করা হয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে নির্বাচন কমিশনার ও ইসির আইন সংস্কার কমিটির প্রধান কবিতা খানম  বলেন, বিচারপতিদের সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধার বিষয়ে আলাদা আইন রয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের ক্ষেত্রে বিচারপতিদের সমান সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার কথা বলা আছে। আমরা ওই সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করে নতুন আইনের খসড়া তৈরি করতে কমিশন সচিবালয়কে বলেছি। তারা খসড়া তৈরি করেছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, নির্বাচন কমিশন সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ‘প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনারদের (সম্মানী ও সুযোগ-সুবিধাদি) আইনের খসড়া তৈরি করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টি সরাসরি উল্লেখ না থাকায় কোনো কোনো ক্ষেত্রে টাকা দিতে জটিলতা তৈরি হয়।

এছাড়া সিইসি ও নির্বাচন কমিশনারদের সুযোগ-সুবিধা সংবলিত অধ্যাদেশ, ১৯৮৩ রহিত করার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এসব বিবেচনায় নতুন আইন প্রণয়নের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ আইনের খসড়া তৈরি করেছে আইন সংস্কার সংক্রান্ত উপকমিটি। সম্প্রতি নির্বাচন কমিশনার কবিতা খানমের নেতৃত্বাধীন আইন সংস্কার কমিটিতেও এটি উপস্থাপন করা হয়। যদিও ওই সভায় কবিতা খানম উপস্থিত ছিলেন না।

জানা যায়, খসড়া আইনে আপিল বিভাগ ও হাইকোর্টের বিচারপতিদের বেতনের সঙ্গে সমন্বয় করে নির্বাচন কমিশনারদের বেতন ধরা হয়েছে। এতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বেতন মাসে এক লাখ ৫ হাজার টাকা ও নির্বাচন কমিশনারদের বেতন ৯৫ হাজার টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। খসড়ায় নির্বাচন কমিশনারদের আজীবন (আমৃত্যু) পেনশন সুবিধা রাখা হয়েছে।

এতে বলা হয়েছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার অন্তত ৬ মাস দায়িত্ব পালন করার পর পদত্যাগ, মেয়াদ না থাকার কারণে অধিষ্ঠিত না হলে বা মারা গেলে তিনি পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন। এক্ষেত্রে পাঁচ বছর দায়িত্ব পালন করলে ৫/৫ হারে সর্বশেষ উত্তেলিত বেতনের শতভাগ, চার বছর দায়িত্ব পালন করলে ৪/৫ হারে ৮০ ভাগ এবং তিন বছর পূর্তিতে ৩/৫ হারে ৬০ ভাগ মাসিক পেনশন পাবেন। অর্থাৎ প্রধান নির্বাচন কমিশনার পাঁচ বছর দায়িত্ব পালনের পর বেতনের সমান অর্থাৎ মাসে ১ লাখ ৫ হাজার টাকা হারে আজীবন পেনশন পাবেন। এর কম দায়িত্ব পালন করলে হার অনুযায়ী পেনশন পাবেন। সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার বা নির্বাচন কমিশনার কেউ মারা গেলে পেনশন ভাতার দুই-তৃতীয়াংশ উত্তরাধিকারদের মধ্যে দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

আরও জানা যায়, সাধারণত নির্বাচন কমিশনার পদে বিভিন্ন পেশা থেকে অবসরপ্রাপ্তরা নিয়োগ পেয়ে আসছেন। এক্ষেত্রে চাকরি অথবা কমিশনার পদের যে কোনো একটি খাত থেকে পেনশন নেয়ার বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে খসড়া আইনে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার ইচ্ছা অনুযায়ী পেনশনের খাত নির্ধারণ করা হবে। কমিশনার হওয়ার আগে অন্য কোনো চাকরি বা পদে থাকার কারণে নেয়া পেনশনের টাকা ফেরত বা সমন্বয়ের প্রয়োজন হবে না।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার এমএ সাঈদ (কার্যকাল ২০০০-২০০৫ সাল) নেতৃত্বাধীন কমিশনের একজন নির্বাচন কমিশনার পেনশন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করেন। ওই রিটের রায়ে নির্বাচন কমিশন হেরে যায়। এতে ওই কমিশনারের পেনশন পাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়। পরে ড. এটিএম শামসুল হুদার নেতৃত্বাধীন কমিশন পেনশনের বিষয়ে উদ্যোগ নেয়। কিন্তু সেই উদ্যোগও আলোর মুখ দেখেনি।

যানবাহন সুবিধার বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা দুটি করে জিপ বা কার পাবেন। এসব গাড়ির জ্বালানি ইসি বহন করবে। কেউ যদি কমিশনের গাড়ি ব্যবহার না করেন তাহলে মাসে ২৫ হাজার টাকা ভাতা পাবেন। এছাড়া মাসে দুই হাজার টাকা মোটরযান রক্ষণাবেক্ষণ ভাতাও পাবেন তারা। ট্রেনে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সেলুন এবং সেলুন না থাকলে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রথম শ্রেণির বার্থ সুবিধা পাবেন। সরকারি ভ্রমণে বিমান যাতায়াতের ক্ষেত্রে ৮ লাখ টাকার বীমা সুবিধা পাবেন।

চিকিৎসার ক্ষেত্রে বর্তমান ও সাবেক সিইসি ও নির্বাচন কমিশনার এবং তাদের ওপর নির্ভরশীল স্ত্রী ও সন্তানরা দেশে-বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ পাবেন। ক্যান্সার, কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট, লিভার সিরোসিসের মতো কঠিন রোগে আক্রান্ত হলে চীন, ভারত, মালয়েশিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিতে পারবেন। এক্ষেত্রে একজন এটেন্ডেন্টও নিতে পারবেন। নির্বাচন কমিশন এর ব্যয় বহন করবে। এক্ষেত্রে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় বা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অন্তত তিন সদস্যের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কমিটির সুপারিশ থাকতে হবে।

আবাসন সুবিধার বিষয়ে খসড়া আইনে বলা হয়েছে, সিইসি ও নির্বাচন কমিশনাররা সুসজ্জিত বাসা পাবেন। এ বাসার ভাড়া, চার্জ, কর এবং গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎ বিল তাদের পরিশোধ করতে হবে না। বাসা না পাওয়া পর্যন্ত প্রতি মাসে ৫০ হাজার ৬০০ টাকা হারে ভাতা পাবেন। বাসায় টেলিফোন ছাড়াও মোবাইল সেট কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা পাবেন। এছাড়া প্রতি মাসে পাঁচক ভাতা ১৬ হাজার টাকা ও নিরাপত্তা ভাতা ১৬ হাজার টাকা পাবেন। এছাড়া খসড়ায় বিভিন্ন ধরনের ভাতা ও সুযোগ-সুবিধার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

facebook sharing button

messenger sharing button

twitter sharing button

pinterest sharing button

linkedin sharing button

print sharing button

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!