DMCA.com Protection Status
সাফল্যের ১১ বছর

জাতিসংঘ কি আসলেই বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে?

ক্যাপ্টেন(অবঃ)মারুফ রাজুঃ  গত কয়েকদিন ধরে বেশকিছু মূলধারার গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে চাউর হয়েছে, জাতিসংঘ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

বাংলাদেশের অবৈধ প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকও বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা বলেছেন।

কিন্তু দৈনিক প্রথম বাংলাদেশের এর অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাতেই আছে।এই অসত্য খবরটি চাউরকরা উদ্দশ্য প্রনোদিত এবং চরম বিভ্রান্তিকর।

স্বল্পোন্নত দেশের ক্যাটাগরি থেকে বের হওয়ার জন্য মাথাপিছু আয়, মানবসম্পদ সূচক এবং অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক-এর তিনটি শর্তই প্রথমবারের মতো পূরণ করেছে বাংলাদেশ। এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে অন্ততঃ আরও ছয় বছর। তাহলেই ২০২৪ সালে জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতির আনুষ্ঠানিক সনদ মিলবে।

জাতিসংঘের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শর্তাবলী পূরণ করলেও উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার জন্য দ্বিতীয়বার এই শর্তাবলী পূরণ করতে হবে।

টেলিভিশন চ্যানেল এনটিভি “আনুষ্ঠানিক চিঠি হস্তান্তর: উন্নয়নশীল দেশ হলো বাংলাদেশ” শিরোনামের সংবাদে বলেছে, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় নাম লেখালো বাংলাদেশ। স্থানীয় সময় শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে ত্রিবার্ষিক বৈঠক শেষে জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিডিপি) এ সিদ্ধান্ত নেয়। একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এ সংক্রান্ত চিঠি স্থায়ী প্রতিনিধির কাছে হস্তান্তর করা হয়।”

দেশ টিভি “স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে বাংলাদেশ” শীর্ষক শিরোনামের সংবাদে জানাচ্ছে, “প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে স্থান করে নিয়েছে বাংলাদেশ।”

ভোরের কাগজ “ বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি জাতিসংঘের” শীর্ষক সংবাদে বলেছে, “স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশের তালিকায় উন্নীত হয়েছে বাংলাদেশ। শুক্রবার জাতিসংঘের কমিটি ফর ডেভেলপমেন্ট পলিসি (সিপিডি) এই ঘোষণা সংক্রান্ত চিঠি জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনের কাছে হস্তান্তর করে।”

বাংলাদেশ প্রতিদিন “উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি জাতির বড় পাওয়া : কাদের” শিরোনামের সংবাদে ইন্ট্রো করেছে, “আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে জাতিসংঘের বাংলাদেশকে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে স্বীকৃতি জাতির জন্য সবচেয়ে বড় পাওয়া।”

 

 শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে দেয়া ভাষণে অবৈধ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ ছিল, সেই দেশ জাতিসংঘ কর্তৃক উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আজ স্বীকৃতি পেয়েছে।”আওয়ামী লীগের ওয়েবসাইটে কি বলা হয়েছে দেখুনঃ

কিন্তু আমাদের সরেজমিন অনুসন্ধানে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ এখনও স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাতেই আছে। বর্তমানে সারাবিশ্বে ৪৭টি স্বল্পোন্নত দেশ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে ৩৩ টি আফ্রিকাতে, ১৩টি এশিয়াতে এবং একটি ল্যাটিন আমেরিকায়। এশিয়ার ১৩ টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের নাম আছে। জাতিসংঘ প্রণীত স্বল্পোন্নত দেশের তালিকাটি এখানে দেখুনঃ

জাতিসংঘের ওয়েবসেইটে দেওয়া তথ্যানুযায়ী, এখন পর্যন্ত পাচঁটি দেশ স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উন্নীত হয়েছে। এগুলো হচ্ছে, বতসোয়ানা, কাবো ভার্দে, গিনিয়া, মালদ্বীপ এবং সামোয়া।

ভেনুয়াতু এবং অ্যাঙ্গুলা আগামি তিন বছরের মধ্যে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখাবে।

বাংলাদেশ, মায়ানমার এবং লাও পিপল’স ডেমোক্রেটিক রিপাবলিক প্রথমবারের মতো স্বল্পোন্নত থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের শর্তাবলী পূরণ করলেও তাদেরকে উত্তরণের যোগ্য হিসেবে বিবেচনা করার জন্য দ্বিতীয়বার এই শর্তাবলী পূরণ করতে হবে। আর উন্নয়নশীল দেশের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির জন্য ছয় বছর এই উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে।

Share this post

scroll to top
error: Content is protected !!